নিউইয়র্কে হোম-হেলথ সহায়কদের টাকায় ভাগ বসাচ্ছে দুই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২২ জুলাই ২০২৫, ১৩:৫১

নিউইয়র্কে যারা বাসায় থেকে অসুস্থ ও বয়স্কদের দেখভাল করেন—সেইসব হোম-হেলথ সহায়কদের জন্য সরকার যে অর্থ বরাদ্দ রেখেছে, তার বড় একটি অংশ গিয়ে পড়ছে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পকেটে।
রাজ্যের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া এই টাকা মূলত হাজার হাজার কম আয়ের কর্মীর জন্য নির্ধারিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই অর্থের সুবিধা পাচ্ছেন না তারা, বরং লাভবান হচ্ছে পিপিএল এবং লিডিং এজ এডমিনিস্ট্রেশন নামের দুটি প্রতিষ্ঠান।
এই সহায়কদের প্রতি ঘণ্টায় ৪০ সেন্ট করে কেটে নেওয়া হচ্ছে এক ধরনের স্বাস্থ্যসেবার প্যাকেজ বাবদ, যা শুধু নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা স্তন ক্যানসার নিরূপণের মতো কিছু বিশেষ চেকআপে ব্যবহৃত হয়। অথচ, অধিকাংশ সহায়কের আগে থেকেই পৃথক চিকিৎসা-সুবিধা রয়েছে। ফলে এই প্যাকেজের কোনো ব্যবহার নেই তাদের কাছে।
তবুও সেই অর্থ কেটে রাখা হচ্ছে নিয়মিত। আর এই অব্যবহৃত অর্থ ফিরেও আসছে না, চলে যাচ্ছে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের ঝুলিতে।
আরও আশঙ্কার বিষয় হলো—এই বিমা সুবিধা থেকে ইচ্ছেমতো বেরিয়ে আসার কোনো পথ খোলা নেই। একজন সহায়ক, ম্যাগি নামের এক নারী বলেন, “আমার নিজস্ব স্বাস্থ্যসেবা আছে, তাহলে আবার আলাদা কেটে নেওয়া এই প্যাকেজের দরকার কী?”
এছাড়া, প্রতি ঘণ্টায় আরও ২২ থেকে ৪৭ সেন্ট কেটে নেওয়া হচ্ছে এক ধরনের ব্যয়-পূরণ কার্ডের নামে, যা দিয়ে ওষুধ বা যাতায়াত খরচ মেটানো যাবে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু অনেক সহায়ক জানিয়েছেন—এই কার্ড অনেক দোকানে চলে না, কোথায় ব্যবহার করা যাবে সে নিয়েও স্পষ্ট ধারণা নেই, এমনকি কার্ডটির ওয়েবসাইট প্রায়ই কাজ করে না। ফলে এই অর্থের বড় একটি অংশ অব্যবহৃত থেকে যায়। আর কেউ যদি চাকরি ছেড়ে দেন, তবে ওই কার্ডে জমে থাকা অর্থ থেকেও প্রতি মাসে ‘পরিচালন ব্যয়’ কেটে নেওয়া হয়—ফলে তা-ও হারিয়ে যায়।
সহায়ক সিনথিয়া ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, “আমরা টাকা চাই, এই কার্ডের জঞ্জাল নয়।”
২০১১ সালে নিউইয়র্কে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, যার আওতায় হোম-হেলথ সহায়কদের ন্যূনতম মজুরি ছাড়াও বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু সেই আইনে বলা আছে—এই সুবিধা সরাসরি মজুরিতে অথবা স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই প্রতিষ্ঠান দুটি কাগজে-কলমে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে সেটি এমনভাবে গড়ে তোলা—যাতে সহায়করা এর প্রকৃত সুবিধা পান না, অথচ তাদের আয় থেকে নিয়মিত অর্থ কেটে নেওয়া হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই কৌশলে প্রতিবছর প্রতিষ্ঠান দুটি প্রায় ৬ কোটি ডলারেরও বেশি আয় করছে। এমনকি বলা হচ্ছে, এই ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভের হার ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছায়—যেখানে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবায় এই হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি হয় না।
এই পুরো ব্যবস্থার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তির নাম জেরি ওয়াইজম্যান। তিনি অতীতে একাধিক স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী এক দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, যেটি কয়েক কোটি ডলারের অনুদান পেয়েছে বলে কাগজে দেখানো হলেও, সেই অর্থ আসলে কোথায় গেছে তা তারা প্রকাশ করেননি। যা সরাসরি মার্কিন আইনের লঙ্ঘন। হাজার হাজার নারী ও অভিবাসী সহায়ক, যারা দিনরাত মানুষের সেবা করেন—তাদের পাওনা অর্থে ভাগ বসাচ্ছে বড় বড় কোম্পানি। যাদের জন্য এই বরাদ্দ, তারাই বঞ্চিত। অথচ কিছু প্রতিষ্ঠান সেটিকে পণ্যে বা প্যাকেজে রূপান্তর করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সহায়করা বলছেন, “আমরা স্বাস্থ্যসেবার নামে ঠকতে চাই না। আমাদের শ্রমের দাম যেন আমরা নিজেরা হাতে পাই।”
এখনো পর্যন্ত এই অনিয়ম নিয়ে কোনো বড় তদন্ত শুরু হয়নি। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যায়— আইনের ফাঁক গলে এই লুটপাট আর কতদিন চলবে?