নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচন

ট্রাম্পের সহায়তায় কারচুপির ষড়যন্ত্র করছেন ক্যুমো : জোহরান মামদানি

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৩৭
আপডেট  : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৪৫

আসন্ন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদপ্রার্থী ও কুইন্সের অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানি অভিযোগ করেছেন, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মিলে আসন্ন মেয়র নির্বাচনে কারচুপির ষড়যন্ত্র করছেন।
অপরদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া আবার ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেছেন, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে তাঁর সম্পৃক্ততা কেবল মামদানির জন্যই সুবিধাজনক হবে।
বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের (নিউইয়র্ক টাইমস) সঙ্গে আলাপকালে মামদানি বলেন, ‘নিউইয়র্কবাসী এমন একজন মেয়র চান না, যিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করবেন।’ তিনি দাবি করেন, ‘নির্বাচিত হলে আমি হবো ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন।’
মামদানি নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বলেন, ‘সম্প্রতি ট্রাম্প কুমোর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং মেয়র নির্বাচনে আমার বিপরীতে যার জয়ের সম্ভাবনা বেশি এমন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার কথা ভাবছেন- যার মধ্যে রয়েছেন কুমো, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া। অন্যদিকে কুমো সামাজিক মাধ্যমে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মামদানিকে “তথ্যহীন ও অর্থহীন মন্তব্য” করার অভিযোগ তোলেন। তিনি লেখেন, ‘সত্যি বলতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আপনাকে গরম ছুরি দিয়ে মাখনের মতো কেটে ফেলবে- আপনি রিপাবলিকান পার্টির জন্য স্বপ্নপূরণের মতো প্রার্থী।’ হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ফক্স নিউজকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুবার জানিয়েছেন যে, তিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার বা সমর্থন দেওয়ার কোনো ইচ্ছা রাখেন না।
ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান জেরি ন্যাডলার মামদানির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘তিনি নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট নিয়ে কথা বলেছেন বলেই জিতেছেন। তাই তাঁর সফলতাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। ট্রাম্পের সঙ্গে সখ্যতা নিউইয়র্কের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।’
অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া ফক্স ৫-এর ‘পলিটিক্স আনইউজুয়াল’ অনুষ্ঠানে সতর্ক করে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পৃক্ততা প্রতিদিনের আলোচনাকে ‘ট্রাম্প বনাম মামদানি’ ইস্যুতে পরিণত করবে, যা মামদানির জন্য ইতিবাচক হবে। স্লিওয়ার ভাষায়, ‘আমি প্রেসিডেন্টকে বলব- আপনার সময় বেশি প্রয়োজন যেখানে, সেখানে দিন। নিউইয়র্ক সিটির এই নির্বাচন পুরো আমেরিকাকে প্রভাবিত করে না।’
কেন ট্রাম্প কুমোর সঙ্গে কথা বলেছেন- এ প্রশ্নে স্লিওয়া বলেন, তাঁদের পরিবারের সম্পর্ক বহু পুরনো, তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে তাঁর মতে, এই নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ইস্যুভিত্তিক আলোচনাই জরুরি, ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নয়। এই নির্বাচনে চারজন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী- ডেমোক্র্যাট জোহরান মামদানি, রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়া, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। জুনের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে মামদানি বড় ব্যবধানে কুমোকে হারিয়ে পার্টির মনোনয়ন পান, যা নিউইয়র্ক রাজনীতিতে আলোড়ন তোলে। ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন না করলেও, তাঁর ফোনালাপ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। একপক্ষ মনে করে, ট্রাম্পের সমর্থন ডানপন্থী ভোটকে একত্রিত করতে পারে, অন্যপক্ষের যুক্তি- এতে প্রগতিশীল ভোটাররা আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে মামদানির পক্ষে যাবে।
সাম্প্রতিক জরিপে মামদানি এগিয়ে থাকলেও কুমো ও অ্যাডামস এখনো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী। ৪ নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, “ট্রাম্প ফ্যাক্টর” ঘিরে বিতর্ক ততই তীব্র হচ্ছে। নিউইয়র্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচনের ফল শুধু শহরের ভবিষ্যত নয় বরং জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। উল্লেখ্য, মামদানি জুন মাসে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে কুমোকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেন। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ নির্বাচনে তিনি কুমো ও এরিক অ্যাডামসের চেয়ে এগিয়ে আছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৪ নভেম্বর।