নিউইয়র্কে অপহরণকারী চক্রের ৬ বাংলাদেশি অভিযুক্ত

জানা গেছে নানা অজানা তথ্য
ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৩

নিউইয়র্কের একটি অপহরণকারী চক্রের ছয় বাংলাদেশি সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুই ব্যক্তিকে অপহরণ, মারধর ও যৌন নীপিড়ণের অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবিরা।
অভিযুক্তরা হচ্ছেন রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আবু চৌধুরী, আনজু খান, সুলতানা রাজিয়া ও ইফফাত লুবনা। এদের মধ্যে আবু চৌধুরী ও লুবনা স্বামী-স্ত্রী।গত বুধবার আদালত তাদের দোষী সব্যস্ত করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতের নথিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে অপহরণ ও অপহরণের ষড়যন্ত্রের একটি অভিযোগ রয়েছে এদের ছয় জনের বিরুদ্ধেই। আর আবু চৌধুরী ও তার স্ত্রী লুবনার বিরুদ্ধে পৃথক একটি অভিযোগ রয়েছে অপহরণের।
ওই অপহরণের ঘটনায় এই দম্পতি আগেই দোষী সাব্যস্ত ছিলেন। বাংলাদেশি কমিউনিটিরই অপর ব্যক্তিকে তারা অপহরণ করেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে অভিযুক্তরা অপহৃত ব্যক্তিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায় ও যৌন নিপীড়ণ করে।
ইস্টার্ন ডিস্ট্রক্ট অব নিউইয়র্কের রাষ্ট্রীয় কৌসুলি ব্রেয়ন পিস বলেছেন, একই জাতিগত মানুষের ওপরই এই অন্যায় পরিচালিত হয়েছে। এবং একটির পর একটি অঘটন ঘটিয়েছে চক্রটি।
প্রথম অপহরণের ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ। সেদিন রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আবু চৌধুরী, আনজু খান ও সুলতানা রাজিয়া একযোগে ষড়যন্ত্র করে ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে অপহরণ করেন। জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউর ১৮১ স্ট্রিটের কাছ থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
আবু চৌধুরী এসময় অপহৃত ব্যক্তিকে জোরপূর্বক একটি হোন্ডা এসইউভি গাড়িতে তুলে নেন এবং বেদম মারধর করতে থাকেন। এসময় তার স্ত্রী গাড়ি চালিয়ে নিচ্ছিলেন।পরে গাড়ি থেকে নামিয়ে অপহৃত ব্যক্তিকে উলঙ্গ করে তা ক্যামেরায় ধারণ করেন তারা।
রুবেল, শাহেদ, আনজু ও রাজিয়ার সঙ্গে তাদের ফোনে যোগাযোগ হচ্ছিলো। অপহৃতকে তারা মারধর করেন ও হত্যার হুমকিও দেন।
এমনকি পানি পান করতে চাইলে অপহৃতকে তারা তার মধ্যে চেতনানাশক মিশিয়ে দেন। এতে তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পরের দিন স্থানীয় একটি হাসপাতালে তার ঘুম ভাঙ্গে।
ব্রুকলিন ফেডারেল কোর্টে গত বৃহস্পতিবার বিবাদী পক্ষের আইনজীবি সারাহ স্যাকস সুলতানা রাজিয়ার হয়ে আদালতে শুনানি করেন। তিনি দাবি করেন অপহৃত ওই ব্যক্তির হাতে তার মক্কেল গত ৫ বছর ধরে হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন। আর সে কারণে আত্মরক্ষায় রাজিয়া এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেই যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবি। তার দাবি অপহৃত ব্যক্তি রাজিয়ার চুল ধরে টানছিলেন আর তিনি আত্মরক্ষা করতে চেষ্টা করছিলেন।
এর তিন দিন অপহরণের দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১১ মে ২০২৩ তারিখে। সেদিন আবু চৌধুরী ও লুবনা অপর একজনকে অপহরণ করে। অপহৃত দেদিন উডসাইডের ব্রডওয়ে এভিনিউর ৭২ স্ট্রিটের কাছে লুবনার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। এসময় আবু চৌধুরী জোর করে অপহৃতকে একটি মিনিভ্যানে তুলে নেন এবং তাকে পেটাতে শুরু করেন। পরে তারা অপহৃতকে একটি হোটেলে নিয়ে যান এবং আবু চৌধুরী তার সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করেন।
অপহৃতর বাবার কাছে ফোন করে আবু চৌধুরী ২০,০০০ ডলার মুক্তিপণ দাবি করেন বলেও আদালতের নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
অপহরণে তৃতীয় দিনে আবু চৌধুরী অপহৃত ব্যক্তিকে চোখ বেঁধে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ফেলে রেখে যান বলেও এতে বলা হয়েছে।
পরে অপহৃত ব্যক্তি তার চোখ খুলে একটি জানালা দিয়ে বাইরে আসেন এবং নেইবারহুডের লোকজনের কাছে ৯১১ কল করতে বলেন।
রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আনজু খান ও সুলতানা রাজিয়াকে বৃহস্পতিবার আটক করা হয়। আর আবু চৌধুরী ও লুবনাকে আগেই আটক করা হয়। এই ঘটনায় ৭ম একজন আসামি পলাতক রয়েছেন।