যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গীহীন প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, সঙ্গীহীন পুরুষেরা সঙ্গীসহ পুরুষের তুলনায় আর্থিকভাবেও পিছিয়ে থাকেন।
সমীক্ষা প্রতিবেদনটিতে সঙ্গীহীন বা সিঙ্গেল ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণাই উঠে এসেছে। তাঁদের নিন্দাও করা হয়েছে, পাশাপাশি বিবাহিত ও যুগলদের মহিমা তুলে ধরা হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, সিঙ্গেল মানুষের জীবনে ব্যর্থতা বেশি বা তেমন উন্নতি করতে পারেন না। টাইম ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনে সমাজতাত্ত্বিকদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, কোনো সঙ্গী থাকা মানে ভবিষ্যৎ থাকা।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক সিঙ্গেল মানুষই জীবনে কোনো সঙ্গী খুঁজতে আগ্রহী নন। অবশ্য পিউ রিসার্চের সমীক্ষা প্রতিবেদনে বেশিরভাগ আলোচনাই রোমান্টিক দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়েছে। কোনো সিঙ্গেল পুরুষ যদি আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকেন, তাহলে কি কোনো নারী তাঁকে বিয়ে করতে চাইবেন? নারীরা কি এমন পুরুষের সঙ্গে থাকতে চাইবেন না যে অন্তত আর্থিকভাবে তাঁর সমকক্ষ? নারীরা যদি তাঁদের পছন্দের পুরুষ না পান তবে তাঁরাও সিঙ্গেলই থেকে যাবেন!
২০২০ সালে পিউ রিসার্চ সিঙ্গেলদের রোম্যান্টিক চাহিদা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সিঙ্গেল বলতে যারা অবিবাহিত, কোনো রোমান্টিক সঙ্গীর সঙ্গে থাকছেন না এবং কোনো ধরনের রোমান্টিক সম্পর্কে নেই তাঁদের বোঝানো হয়েছে। গবেষণার জন্য দৈবচয়নে ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সী কয়েকজন আমেরিকানকে বেছে নেওয়া হয়। সমীক্ষায় দেখা যায়, ৫০ শতাংশ সিঙ্গেল মানুষই কোনো ধরনের রোমান্টিক সম্পর্কে জড়াতে আগ্রহী নন। এমনককি তাঁরা কোনো ধরনের ডেটে যেতেও আগ্রহী নন।
যারা বিয়ে করতে বা প্রেমের সম্পর্কেও জড়াতে আগ্রহী নন তাঁদের ক্ষেত্রে বিবাহযোগ্যতা নিয়ে আলাপ তোলা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক। অনেকের কাছে সিঙ্গেল জীবনই সেরা!
সিঙ্গেল জীবন নিয়ে অনেকেই সেকেলে ধারণা পোষণ করেন। তাঁদের ধারণা, সিঙ্গেল মানুষেরা কপাল দোষে একা রয়ে গেছেন। এটা সত্যি যে, অনেকে সঙ্গী খোঁজেন, তবে তাঁদের সংখ্যাটি মানুষ সাধারণত যতোটা ভাবেন ততো বেশি নয়।
যারা সিঙ্গেল বা সঙ্গীহীন থাকাকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা এই জীবনটাকেই সেরা মনে করেন। তাঁদের কাছে এ সময়টা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আনন্দময়, পরিপূর্ণ ও অর্থপূর্ণ মনে হয়। এমনকি যারা এখন সিঙ্গেল আছেন কিন্তু সম্পর্কে জড়াতে অনাগ্রহী নন, তাঁদেরও ধারণা, একা থাকার সময়টাই জীবনের সবচেয়ে আনন্দের।
পিউ রিসার্চের প্রতিবেদন অনুসারে, সিঙ্গেল পুরুষদের অর্থভাগ্য বিবাহিত পুরুষদের তুলনায় খারাপ হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় উপেক্ষা করা হয়েছে: সিঙ্গেল পুরুষদের কর্মজীবী হওয়া এবং উপার্জনের হার সঙ্গীসহ পুরুষের তুলনায় কম হয়। এর একটি কারণ হতে পারে, সিঙ্গেল পুরুষেরা শুধু নিজের জন্যই উপার্জন করেন।
অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত পুরুষেরা এমন সব কাজে বেশি সময় দেন যেসব কাজে উপার্জন বেশি। তাঁরা সিঙ্গেলদের চেয়ে বেশি সময় কাজ করেন। তবে প্রথমবার বিচ্ছেদের পর আবার বিয়ে করার পর তাঁরা বিচ্ছেদের সময়ের চেয়েও কম কাজ করেন। সিঙ্গেলরা এমনসব কাজে সময় দিয়ে থাকেন যেখানে নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও লাভ হয়। যেমন—তাঁরা বিভিন্ন সংগঠন, ইউনিয়ন ও সামাজিক কাজে সময় দিয়ে থাকেন।
২০২০ সালে এক গবেষণায় উঠে এসেছে, সিঙ্গেল পুরুষদের বেকারত্ব ও কম উপার্জনের একটি কারণ হলো, তাঁদের প্রতি বৈষম্য। সিঙ্গেলদের তুলনায় বিবাহিত পুরুষদের বাড়তি কোনো যোগ্যতা বা দক্ষতার কারণে এ বৈষম্য করা হয় না। অবিবাহিত ও বিবাহিত পুরুষদের নিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, একই ধরনের যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও চাকরিদাতারা বিবাহিতদের সাক্ষাৎকার গ্রহণে বেশি আগ্রহী। এমনকি বিবাহিতদের বেশি বেতন দিতেও ইচ্ছুক।
বিবাহিত পুরুষেরা অধিক সময় ধরে কাজ করার একটি সম্ভাব্য কারণ হলো, নিয়োগকর্তারা তাঁদের বেশি সময় কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন। অথচ সিঙ্গেল পুরুষেরাও বেশি সময় ধরে কাজ করতে চান।
সিঙ্গেল মানুষদের দুর্ভাগ্য নিয়ে হা–হুতাশ করা হলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়নি। যেমন—বিবাহিত পুরুষের তুলনায় সিঙ্গেল পুরুষেরা তাঁদের মা–বাবার সঙ্গে বেশি থাকেন। তবে যেসব সিঙ্গেল পুরুষ মা–বাবার সঙ্গে থাকলেও মনে মনে আলাদা থাকতে চান, সেটি আসলেই দুর্ভাগ্যজনক!
অনেক সিঙ্গেল নারীই মা হওয়ার পর মা–বাবার সঙ্গে থাকেন। এই মায়েদের সন্তানেরা অন্যদের তুলনায় বেশ ভালো করে থাকে। ১০ ধরনের পরিবারের ১১ হাজারেরও বেশি কিশোর–কিশোরীর ওপর জরিপে দেখা গেছে, যারা সিঙ্গেল মা ও দাদা–দাদী বা নানা–নানীর সঙ্গে থাকে তারা বিবাহিত দম্পতির ঘরে বেড়ে ওঠা কিশোর–কিশোরীর তুলনায় পড়ালেখায় ভালো করে। তারা উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করে এবং কোনো ধরনের ধূমপান ও মদ্যপানে অভ্যস্ত হয় না। মা যদি সিঙ্গেলই থেকে যান তবে ওই কিশোর–কিশোরীর মধ্যে বিবাহিত দম্পতির সন্তানদের তুলনায় সব ক্ষেত্রে ভালো করার প্রবণতা বেশি থাকে।
সিঙ্গেল মানুষদের বাবা–মায়ের সঙ্গে বসবাস করার সম্ভাবনাই শুধু যে বেশি তা নয়; বরং সঙ্গী আছে এমন মানুষের চেয়ে বেশি একা থাকার প্রবণতাও বেশি। যারা একা থাকেন তাঁদের যে বিশেষ মানসিক শক্তি থাকতে পারে সেটি প্রায়ই আমলে নেওয়া হয় না। বিশেষ করে একা পুরুষেরা তাঁদের আগের প্রজন্মের পুরুষের চেয়ে বেশি বাঁচেন। এই একা থাকার অভিজ্ঞতাটি হতে পারে ক্রম রূপান্তরমূলক যা জীবনের পরবর্তী ধাপে উপকারে আসে।