শিশুদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন

টিকটকের বিরুদ্ধে মামলা করল যুক্তরাষ্ট্র

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১৪:৫৩

এই বছরের শুরুতে টিকটককে নিয়ে তদন্ত শুরু করে এফটিসিএই বছরের শুরুতে টিকটককে নিয়ে তদন্ত শুরু করে এফটিসি। র‍্যাপ্লার চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (ডিওজে)। ২ আগস্ট দায়ের করা মামলায় বলা হয়, কম বয়সী শিশুদের অ্যাপটি ব্যবহার বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে টিকটক। সেই সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে অ্যাপটি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, টিকটক দেশটির ‘চিলড্রেনস অনলাইন প্রাইভেসি প্রোটেকশন অ্যাক্ট (সিওপিপিএ) ’ লঙ্ঘন করছে। যাতে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুর অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বাবা-মায়ের সম্মতি নেওয়া প্রয়োজন আছে এমন পরিষেবার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে ইমেইল অ্যাড্রেস, ফোন নম্বর ও লোকেশনের মতো শিশুদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ করে টিকটক। এ ছাড়া সন্তানদের তথ্য মুছে ফেলার জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে অ্যাপটি।
টিকটক ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) মধ্যে ২০১৯ সালের চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য মামলাটির সূত্রপাত হয়। ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ বন্ধে এই চুক্তি করা হয়। নিষ্পত্তির জন্য কোম্পানিটিকে সিওপিপিএ আইন মেনে চলার জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হতো। বিচার বিভাগ দাবি করেছে, ২০১৯ সালের আদালতের আদেশের পাশাপাশি ও এই আইনও লঙ্ঘন করেছে টিকটক।
ক্যালিফোর্নিয়ার জেলা আদালতে দায়ের করা অভিযোগ বলা হয়, ‘১৩ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ‘কিডস মোড’ থাকলেও টিকটক এখনো ‘জেনেশুনে এই কম বয়সী শিশুদের নিয়মিত অ্যাকাউন্ট তৈরি করার অনুমতি দিয়েছে। সেইসঙ্গে পিতামাতার সম্মতি না নিয়েই সেই শিশুদের কাছ থেকে ব্যাপক ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছে।’
এই মামলা ছাড়াও আরেক আইনের সঙ্গে লড়াই করছে টিকটক। আইনটি কার্যকর হলে অ্যাপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হতে পারে। তরুণ ব্যবহারকারীদের নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এমন অভিযোগ এর আগেও টিকটকের বিরুদ্ধে তোলা হয়। এ ছাড়া শিশুদের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য টিকটককে জরিমানা করেছে ইউরোপ।
এই বছরের শুরুতে টিকটককে নিয়ে তদন্ত শুরু করে এফটিসি। ফেডারেল ট্রেড কমিশনের সুপারিশে নতুন মামলাটি দায়ের করে বিচার বিভাগ। গত শুক্রবার এফটিসির চেয়ারম্যান লিনা খান বলেন, ‘জেনেশুনে ও বারবার বাচ্চাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে টিকটক। এর ফলে সারা দেশে লাখ লাখ শিশুর নিরাপত্তা বিঘ্ন হচ্ছে।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে টিকটকের মুখপাত্র মাইকেল হিউজ বলেন, ‘অভিযোগগুলোর সঙ্গে একমত নই আমরা, যার মধ্যে অনেকগুলো অতীতের ঘটনা ও অনুশীলনের সঙ্গে সম্পর্কিত যা বাস্তবিকভাবে ভুল বা সমস্যাগুলো সমাধান করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের সুরক্ষার জন্য নিজেদের প্রচেষ্টার জন্য আমরা গর্বিত। এ জন্য কঠোর সুরক্ষার সঙ্গে বয়স-উপযুক্ত কনটেন্ট দেখানো হয়, সন্দেহভাজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীদের সক্রিয়ভাবে অপসারণ করা হয় এবং স্বেচ্ছায় ডিফল্ট স্ক্রিন টাইম সীমা, পারিবারিক পেয়ারিং ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অতিরিক্ত গোপনীয়তা সুরক্ষার মতো ফিচারগুলো চালু করা হয়েছে।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের মামলা বলা হয়, ‘অন্তত ২০২০ সালের শেষের দিকে’ টিকটকে কোনো শিশু অ্যাকাউন্টে খোলা সময় জন্মতারিখ জমা দেওয়ার পর ১৩ বছর কম বয়স হলে অ্যাকাউন্ট খুলতে বাধা দেয় টিকটক। তবে ভিন্ন জন্মতারিখ দিয়ে দ্বিতীয়বার অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা করার সময় শিশুদের বাধা দেয়নি টিকটক। যদিও প্রথমবার দেওয়া জন্মদিনের তথ্য থেকে টিকটক জানত যে, ব্যবহারকারী একজন শিশু। ভবিষ্যতে সিওপিপিএ আইনের লঙ্ঘন রোধ ও দেওয়ানি জরিমানা আদায় করাই এই মামলার উদ্দেশ্য।