দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের রেল সেতুর নির্মাণ কাজ। যমুনার বুকে এ রেল সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে একদিকে যেমন উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হবে।
অন্যদিকে খুলবে অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার। আর্শিবাদ স্বরূপ হবে উত্তরাঞ্চলবাসীর জন্য। বিদেশ থেকে আসা মালবাহী ট্রেন রাজধানীতে সরাসরি চলাচল করতে পারবে।
এরই মধ্যে প্রকল্পের ৩৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে ডাবল লাইনে দ্রুতগতিতে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হবে।
এ সেতু নির্মাণের ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করে সচেতন মহল। রেল বিভাগের তথ্য মতে ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্র্যাকের এ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এ সেতু সহায়তা করবে বলেও রেল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। তবে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে পারাপার হওয়ায় সময় অপচয়ের পাশাপাশি শিডিউল বিপর্যয়ে বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি।
আর এ সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হচ্ছে দেশের মেগা প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু।
সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে নদীর দু'প্রান্তে দু’টি ভাগে দেশি, বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে চলছে এ সেতুর নির্মাণ কাজ। বড় বড় ক্রেনের সাহায্যে সেতুর প্রথম পর্যায়ের পাইলিংয়ের কাজ চলছে এখন। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুটি নির্মিত হবে মোট ৫০টি পিয়ারের ওপর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এরই মধ্যে ৫০টি পিয়ারের মধ্যে ১৩টি পিয়ারের পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১১টি পিয়ারের পাইলিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮ ও ৪৯ নম্বর পিয়ারের কাজ চলছে। এভাবে কাজ এগিয়ে গেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক সভা। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল নয় হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু নানা কারণে তখন সেতু নির্মাণে জটিলতা তৈরি হয়। পরে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম সংশোধিত প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন বা জাইকার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে পাবে বাংলাদেশ। বাকি অর্থ দেবে বাংলাদেশ সরকার। রেল সেতুটির কাজ শেষ করার সময়সীমা ২০২৪ সালের আগস্ট মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্রুত চলমান এ প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা বাড়াতে হবে না।