চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষে আইনজীবী নিহত

‘বাবা বেঁচে নেই’ জানে না শিশু তাজকিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:১২

আড়াই বছরের শিশু কন্যা তাজকিয়া। মাত্রই কথা বলা এবং এক পা দু'পা করে হাঁটতে শিখেছে। দুনিয়ার অনেক কিছু তার এখনো অজানা। তবুও তার চোখে যেন বাবাকে দেখার এক ধরনের ক্ষুধা। বাবা, বাবা করে সে সারাদিন খুঁজে ফেরে। সপ্তাহে দু’ একবার দেখা হতো বাবার সঙ্গে। এভাবে আনন্দেই দিন কাটছিল তার।
তবে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষে যেনো নিমিষেই তার জীবনের সব আনন্দ শেষ করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তারা কুপিয়ে হত্যা করেছে তাজকিয়ার বাবাকে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতে লোহাগাড়া সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। লোহাগাড়া সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল থেকে অপরাধীদের বিচার দাবি করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভকারীরা ‘আমার ভাই মরল কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে নিহতের স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনের বাড়ি লোহাগাড়া সদর সওদাগর পাড়ায়ও আত্মীয়স্বজন ভিড় করে। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
নিহতের স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনের বড় ভাই তারেকুল ইসলাম বলেন, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের সঙ্গে তার বোন তারিনের বিয়ে হয় সাড়ে তিন বছর আগে। তাদের পরিবারে তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের এক কন্যা সন্তান আছে এবং তারিন এখন ৭ মাসের সন্তানসম্ভাবা।
‘স্বামীকে সন্ত্রাসীরা জবাই করে হত্যা করেছে এ খবর শোনার পর থেকেই হুঁশ হারিয়েছেন তারিন। তার ভবিষ্যৎ কী হবে, তার সন্তানদের কী হবে এসব ভেবে তারিনের চোখে এখন ঘোর অমানিশা’, যোগ করেন তিনি। 
তারেকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘খুনিরা আমার বোনের জামাইকে অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে দেয়নি, নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
ছাত্রজীবনে তুখোড় মেধাবী ছিলেন সাইফুল। জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাশ করেছিলেন আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে। মাদ্রাসার সব শিক্ষকের কাছে প্রিয় ছাত্র ছিলেন তিনি।
নিহত সাইফুলের বন্ধু মোহাম্মদ আরমান বলেন, ‘বন্ধু আমার মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে ইন্টারমিডিয়েট পড়েন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে। সেখান থেকে লেখাপড়া শেষ করে। পরে আর্ন্তজাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি পাশ করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। অন্যান্য বন্ধুদের চেয়ে সাইফুল ছিল আলাদা। তার সামনে কোনো অন্যায় হলে সে চুপ থাকতো না তার প্রতিবাদ করতো। নিয়মিত নামাজ দোয়াও আদায় করতো এবং খুবই মিশুক ছিল। গতকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা এখনো মানতে পারছি না।’
নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের পিতা জামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘আমার ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সাইফুল ছিল ৩য় সন্তান। আমার ছেলে নামাজি, নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির মানুষ ছিল, তাহাজ্জুদ নামাজও বাদ যেতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে এভাবে আমার আগে চলে যাবে আমি কখনো কল্পনা করিনি। বিনা অপরাধে যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
জানা যায়, নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের জানাজা বুধবার বেলা ১১টায় নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে সম্পন্ন হয়েছে। এর পর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতিতে বাদ জোহর দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।