দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। পাহাড়, হাওর, চা-বাগানবেষ্টিত এলাকা মৌলভীবাজার জেলায় কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কর্মজীবী মানুষের জীবন।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী আনিসুর রহমান বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। উপজেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা নিচের দিকেই থাকতে পারে। এর আগের দিন সোমবার শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কম থাকলেও সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিলেছে। ঝলমলে রোদ উষ্ণতা ছড়িয়েছে।’
এদিকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর শহরে তাপমাত্রা একটু বেশি থাকলেও হাওর, পাহাড় ও চা-বাগান এলাকায় বসবাসরত মানুষের খুব বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষজন। বিশেষ করে চা-বাগানগুলোয় শীত বেশি থাকায় কাজ করতে বেগ পোহাতে হয় চা–শ্রমিকদের।
ফিনলে কোম্পানির লাখাইছড়া চা-বাগানের বাসিন্দা তপন বৈদ্য বলেন, ‘আমাদের চা-বাগানের শ্রমজীবী নারী-পুরুষরা শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় ও কম্বলের অভাবে খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের চা-বাগানের মানুষের খোঁজখবর প্রশাসনের কেউ রাখে না।’
ভাড়াউড়া চা-বাগানের শ্রমিক সুমন গোয়ালা বলেন, ‘সন্ধ্যাবেলা চা-বাগানে প্রচণ্ড শীত পড়ে। আমাদের অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়। সবার ঘরে চাহিদামতো গরম কাপড় নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যদি শীতের কাপড় বিতরণ করা হতো, তাহলে উপকার হতো। শীত উপেক্ষা করেই আমাদের ভোরবেলায় কাজের তাগিদে ঘর থেকে বের হতে হয়।’
হাইল হাওর এলাকার বাসিন্দা ইকরাম আলী বলেন, ‘আমি কৃষক মানুষ। গরমের কাপড়ের অভাবে রাতে ঘুমাতে কষ্ট হয়।’
মৌলভীবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদু মিয়া বলেন, ‘জেলায় ১০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। প্রথম দফায় নগদ বরাদ্দ পাওয়া গেছে ২১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এসব টাকা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুকূলে বরাদ্দ। কম্বল কিনে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘নানা বয়সী মানুষ সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া নিয়ে আসেন। হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। তার মধ্যে চা-বাগানের শ্রমিক ও হাওর এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষরা বেশি।’
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন মামুনুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো শীতজনিত রোগে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালসহ উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি কম হলেও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন নানা বয়সী রোগী।’