সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
শুক্রবার ( ২৯ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আবদুল মুহিতের ছোটভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের দপ্তর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুলশান আজাদ মসজিদে আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম জানাজা ও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংসদ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টার দিকে তাঁর মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। শহীদ মিনার থেকে দাফনের জন্য মরদেহ সিলেটে নেওয়া হয়।
গত বছর করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ভর্তি ছিলেন আব্দুল মুহিত। এরপর করোনার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে তিনি বাসায় ফিরেন। করোনাক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়ে।
এদিকে, এ বছরের মার্চ মাসে তিনি সিলেটে আসনে। এরপর সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ‘গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা’ দেয় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। মুহিতের আজীবন সুকীর্তির স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে 'গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা' দেওয়া হয়।
শহীদ মিনারে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতকে শেষ শ্রদ্ধা
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের মরদেহ শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়।
এসময় তার ভাই ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো আব্দুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবীর আহাম্মদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকারের পক্ষে সার্জেন্ট এট আর্মস কমোডর এম এম নাঈম রহমান। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।
এসময় আবদুল মুহিতের মরদেহে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা আখতারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, জাসদ, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষে রাশেদ খান মেনন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, ডা. সামন্ত লাল সেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সচিব, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১২টি বাজেট পেশ করেছেন সংসদে। তার মধ্যে ১০টি শেখ হাসিনার সরকারের সময়। আমি এরকম কাজ পাগল মানুষ কমই দেখেছি। বন্ধের দিনেও তাকে অফিসে দেখা যেতো। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি সফল ছিলেন। এদেশের রাজনীতিতে সৎ মানুষ বেশি নেই, মুহিত সাহেব শতভাগ সৎ লোক ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, মুহিত ভাই অত্যন্ত সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি অনেকদিন ধরেই বলছিলেন যে, আমার প্রাপ্তি হয়েছে, আমার কাজ শেষ, তোমরা দেখো বাকিটুকু। ইনফ্যাক্ট কয়েকদিন ধরেই তিনি বলেছিলেন সিলেট চলে যাবেন। গত এক সপ্তাহ ধরে আল্লাহকে স্মরণ করছেন এবং চলে যাওয়ার জন্য স্থির হয়েছিলেন। তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করেন।
এছাড়াও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নরুল ইসলাম নাহিদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমানসহ দলীয় নেতাকর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। আগামীকাল রবিবার (১ মে) পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে মুহিতের মরদেহ।
বর্ণাঢ্য এক কিংবদন্তির নাম আবুল মাল আবদুল মুহিত
সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রী, অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, লেখক, গবেষক, পরিবেশবিদসহ নানা পরিচয়ে গৌরবোজ্জ্বল আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম।
বাবা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ এবং মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরী। দু’জনই রাজনীতি ও সমাজসেবায় সক্রিয় ছিলেন।
সংস্কৃতিমান পারিবারিক আবহে বেড়ে ওঠা মুহিত কৈশোরেই সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় ছিলেন মনোনিবেশ। শিশু-কিশোর সংগঠন ‘মুকুল ফৌজ’ গঠন করে নেমে পড়েন সৃজনশীল চর্চায়।
৮৮ বছর বয়সেও তার সৃজনশীল চর্চা থেমে ছিল না। এ বয়সেও তিনি লিখতেন, ভাবতেন। দেশের সংকট ও সম্ভাবনা, অর্থনীতি, সমাজনীতি নিয়ে ব্যক্ত করে গিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত। একজন ভাষা সংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও আর্ন্তজাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশের সম্পৃক্তি ও সমৃদ্ধিতে তিনি এক রূপান্তরের নায়ক।
ইতিহাস-ঐতিহ্য সচেতন আলোকিত গুণীজন একজন ন্যায়নিষ্ঠ, সজ্জন চিৎপ্রকর্ষবিদ ছিলেন তিনি। সরলতা, সততা ও সত্যকথনে এক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
ছাত্র জীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। আব্দুল মুহিত ১৯৪৮ সালে স্কুলছাত্র হিসেবে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। এরপর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত হন।
১৯৪৯ সালে সিলেট সরকারি পাইলট হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাশ করেন।
চাকরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) যোগ দেওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, কেন্দ্রীয় পাকিস্তান এবং পরে বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৭২ সালে তিনি পরিকল্পনা সচিব নিযুক্ত হন আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তবে এই দায়িত্ব গ্রহণ না করে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে ওয়াশিংটন দূতাবাসে ইকোনোমিক মিনিস্টারের দায়িত্ব নেন।
১৯৭৪ সালে তিনি এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক পদে নিযুক্ত হন। এখন পর্যন্ত তিনি একমাত্র বাংলাদেশি যিনি এ পদে আসীন হয়েছিলেন।
১৯৭৭ সালে তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন। ১৯৮১ সালে চাকরির ২৫ বছর পূর্তিকালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে তিনি স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন।
আবদুল মুহিত পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের চিফ ও উপ-সচিব থাকাকালে পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এটিই ছিল এই বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন। ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ -এর জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শন করেন।
১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে তিনি অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদে কাজ শুরু করেন।
১৯৮২-৮৩ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন।
১৯৮৪-৮৫ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
১৯৯১ সাল থেকে তিনি সার্বক্ষণিক দেশে অবস্থান করে একজন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনে সম্পৃক্ত হয়ে দেশের সুশীল সমাজের একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনে তিনি একজন পথিকৃত। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালের অগাস্টে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর অক্টোবরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।
২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালে সিলেট-১ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।
আবদুল মুহিত অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে তিনি নতুন দিগন্তের সূচনা করেন।
২০১৪ সালে সিলেট-১ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি আবারও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। দক্ষতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে আর নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার ঘোষণায়ও তিনি ব্যতিক্রম। অবসর নিয়েও মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের জাতীয় অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেন।
একজন আবুল মাল আবদুল মুহিত অফুরন্ত জীবনীশক্তির অধিকারী এক প্রাণবন্ত মানুষ। সদা হাস্যোজ্জ্বল কর্মযোগী, ধ্যানী এই মানুষটির স্পষ্টতা, সরলতা ও সাহসিকতা সব মহলে প্রশংসিত।
লেখক হিসেবেও খ্যাতিমান তিনি। প্রশাসনিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তার ৩০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিষয়ে তাঁর ‘জেলায় জেলায় সরকার’ একটি আকর গ্রন্থ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মহকুমাগুলোকে জেলায় রূপান্তর এবং গণতান্ত্রিক জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রশাসনিক প্রতিবেদন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালে তিনি প্রণয়ন করেছিলেন। আবদুল মুহিতের স্ত্রী সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ, বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং কনিষ্ঠ ছেলে সামির মুহিত শিক্ষকতা করেন।
বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব আবদুল মুহিত বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা ঘরবন্দি ছিলেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হননি। বস্ত ছিলেন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে। বেশিরভাগ সময়ই বই পড়তেন। নিয়মিত লেখালেখি করেছেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রথাগত রাজনীতির পথে না হেঁটে জাতির বিকাশমান ধারাকে অগ্রবর্তী করেছেন। ঐতিহ্যের পরম্পরা ধারণ করে দলীয় রাজনীতি করেও হয়ে ওঠেছেন সর্বদলীয় অভিভাবক।