আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ‘টালবাহানা’ শুরু হয়েছে বা চলছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে সেটি আপনারাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’
ঢাকায় বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিচ্ছিলেন মি. রহমান। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশে দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক অংশ নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বিএনপি গত কিছুদিন ধরেই ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠলেও অন্তর্বর্তী সরকারের এখন পর্যন্ত অবস্থান হচ্ছে- ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন।
প্রধান উপদেষ্টা আজ জাপানে ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে একটি সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলে তার প্রেস উইং জানিয়েছে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কথিত ‘পদত্যাগ চিন্তার’ গুঞ্জনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচনার পর প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ৩০ জুনের পর একদিনও ক্ষমতায় থাকবেন না।
যদিও আজ ঢাকার এই সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘পদত্যাগের নাটক দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ।’
সমাবেশে তারেক রহমান তার বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে নির্বাচন প্রসঙ্গে এসে প্রথমে বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। এরপরেই তিনি আরও জোর দিয়ে উল্লেখ করেন যে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
‘আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মনে হয় এরই ভেতরে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যত,’ বলেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে ও বাইরে কারও কারও মনে হয় ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মি. রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী ও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপক্ষ বানাবেন না। আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চাইলে পদত্যাগ করে এসে নির্বাচন করুন। নির্বাচনে জনগণের রায় পেলে সরকারের দায়িত্ব পালন করুন।’
নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পুঁজি বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
‘তাদের প্রতি আহ্বান ও পরামর্শ- জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না। গণতন্ত্রকামী ও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না,’ বলছিলেন তিনি।
মি. রহমান বলেন, তিন কোটি ভোটার নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
‘অতীতে বিভিন্ন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করেছে। প্রতিক্ষেত্রেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসে জাতীয় নির্বাচন সফল করেছে। বাংলাদেশেই রেকর্ড আছে নির্বাচন তিন মাসে সম্ভব। কিন্তু আজ দেখছি দশ মাস হয়ে গেলো অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না,’ বলেছেন তিনি।
‘কিন্তু আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হবে,’ এটি উল্লেখ করে সেই নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংস্কার আর ‘স্বৈরাচারী মানসিকতা’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।’
"জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে ও বাইরে কারও কারও মনে হয় ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে," ঢাকার সমাবেশে বলেছেন মি. রহমান।
তিনি বলেন সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি সরকারের উচিত জাতীয় নির্বাচনের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেয়া।
আগামী নির্বাচনে জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ ও জনগণের কল্যাণে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে–– উল্লেখ করে মি. রহমান বলেন, ‘তবে যে কোনো দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার একটি জবাবদিহিমূলক ও নির্বাচিত সরকার।’
তারেক রহমান আরও বলেন, "পলাতক স্বৈরাচারের সময় দেখেছি কীভাবে তারা আদালতকে, আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে।"
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারের পর মানুষ আশা করেছিলো আদালতের প্রতি সম্মান দেখাবে। আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে ইশরাক হোসেনকে যারা বাধা সৃষ্টি করেছে তাতে স্বৈরাচারের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
"যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশ অবজ্ঞা করে তাদের কাছ থেকে কতটা সংস্কার আশা করতে পারি?" বলছিলেন তিনি।
ইশরাকের শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টিতে 'স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ' দেখতে পাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
'দিল্লি নয়, পিণ্ডি নয়...'
ঢাকায় বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ দেয়া বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন একটি স্লোগান দিয়েছেন।
তিনি তার বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে স্লোগানটি দেয়ার আগে দলীয় নেতাকর্মী ও দেশের মানুষকে এটি শুনতে এবং এরপর স্লোগানটি উচ্চারণের আহ্বান জানান।
‘আপনাদের সামনে একটি ছোট্ট স্লোগান তুলে ধরতে চাই, দয়া করে মন দিয়ে সবাই শুনবেন। প্রথমে আমি স্লোগানটি বলবো, মন দিয়ে শুনবেন। এরপর আমি বলবো তখন আপনার সবাই বলবেন,’ বলছিলেন তিনি।
তিনি এরপর বলেন, ‘দিল্লি নয়, পিণ্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ... সবার আগে বাংলাদেশ।’
এরপর তিনি সবাইকে এই স্লোগান দেয়ার আহ্বান জানান। এর পর তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।