অন্তর্বর্তী সরকারের আরও চার উপদেষ্টা শপথ নিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে বঙ্গভবনে তাদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যান্য উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন উপদেষ্টারা হলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়াতেন। তিনি ১৯৯৬ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ছিলেন। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শৈশব পার করা এই অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশে এনজিওগুলোর ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিতে অর্থায়নকারী শীর্ষ সংস্থা পিকেএসএফের সহপ্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
আলী ইমাম মজুমদার
বিএনপি সরকারের আমলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালনকারী আলী ইমাম মজুমদার দেশের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাঁকেও উপদেষ্টা হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। তিনি সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হন।
সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তিনি প্রশাসন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। গত এক দশকে নির্বাচন কমিশনারসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকবার তাঁর নাম আলোচনায় এসেছে। আলী ইমাম মজুমদার ১৯৫০ সালে ভারতের ত্রিপুরায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে তাঁর পরিবার কুমিল্লায় চলে আসে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাংলাদেশ সামরিক একাডেমির প্রশিক্ষক ছিলেন। পরে তিনি ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ডে গ্রুপ টেস্টিং অফিসার (জিটিও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক ও স্টাফ হিসেবে তিনটি ভিন্ন জাতিসংঘ মিশনে কাজ করেছেন। তাঁর বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের কুসুমপুর গ্রামে।
ফাওজুল কবির খান
২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালনকারী ফাওজুল কবির খান সমসাময়িক আর্থসামাজিক বিষয়ে নিয়মিত নিবন্ধ লিখে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এই কর্মকর্তা সরকারি চাকরি থেকে লিয়েন নিয়ে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ইডকল প্রতিষ্ঠা করেন ও ২০০৭ সাল পর্যন্ত সেখানে প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে।
সরকারের সূত্রগুলো জানায়, স্থবিরতা কাটিয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজের গতি বাড়াতে উপদেষ্টা পরিষদে নতুন মুখ যুক্ত করা হচ্ছে। ১৩ আগস্ট ২৮ জন সচিবের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো দ্রুত সচল ও গতিশীল করতে সচিবদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হলেও বিভিন্ন ঘটনায় মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো কার্যত অচল ছিল। এ অবস্থায় এগুলো দ্রুত কার্যকরের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। তারই অংশ হিসেবে সরকারের আকার বাড়ানো হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা চান– খাদ্য, জ্বালানি, সার ইত্যাদি পণ্যের সরবরাহে যেন বিরূপ প্রভাব না পড়ে, সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে।
বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার হাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, বাণিজ্য, সড়ক পরিবহন ও সেতু, জনপ্রশাসন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, খাদ্য, কৃষিসহ ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে। তিনি বাণিজ্য, শিক্ষা, জনপ্রশাসন, সড়ক পরিবহন ও সেতু, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নতুন উপদেষ্টাদের দিতে পারেন।
অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও দপ্তর প্রধান উপদেষ্টার হাতে থাকায় এতদিন শুধু জরুরি নথিগুলো তাঁর কাছে উপস্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারে তরুণদের যুক্ত করার বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে ভাবা হচ্ছে। ড. ইউনূস তারুণ্যের শক্তিকে সরকারের কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি তরুণদের চিন্তা-চেতনাকে কাজে লাগাতে ইতোমধ্যে সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ফলে ওই দিনই বিলুপ্ত হয় মন্ত্রিসভা। পরদিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি।
এর পর গত ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারে রয়েছেন ১৬ জন উপদেষ্টা। নতুন চারজন শপথ নিলে প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট উপদেষ্টা হবেন ২১ জন।
অন্য উপদেষ্টাদের মধ্যে সালেহউদ্দিন আহমেদকে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে আইন, আদিলুর রহমান খানকে শিল্প, হাসান আরিফকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, তৌহিদ হোসেনকে পররাষ্ট্র, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন; শারমিন এস মুরশিদকে সমাজকল্যাণ; ফারুক-ই-আজমকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র, সুপ্রদীপ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক, বিধান রঞ্জন রায়কে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, আ ফ ম খালিদ হোসেনকে ধর্ম, ফরিদা আখতারকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, নুরজাহান বেগমকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, নাহিদ ইসলামকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।