দীপু মনি-জয়ের ওপর আদালতে ক্ষোভ প্রকাশ, কিল-ঘুষি মারলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২০ আগস্ট ২০২৪, ২১:৫৪

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আবু সায়েদ নামে এক দোকানিকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকালে তাদের আদালতে হাজির করার সময় ও শুনানি শেষে নেওয়ার পথে এসব ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন আইনজীবী দীপু মনির গায়ে থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি দেন।
এর আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আবু সায়েদ নামে এক দোকানিকে হত্যা মামলায় দীপু মনি ও আরিফ খান জয়কে গ্রেফতার করা হয়। পরে মঙ্গলবার বিকালে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেন আদালতে তাদের হাজির করেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তিনি।
শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত দীপু মনির চার দিন এবং জয়ের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। তাদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানিকালে বেলা পৌনে ৪টার দিকে তাদের এজলাসে তোলা হয়।
ফাঁসির দাবিতে শুয়ে পড়েন রাস্তায়
এদিকে দীপু মনি ও জয়কে আদালতে হাজির করাকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। বিএনপিপন্থি আইনজীবীসহ সাধারণ মানুষ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন।
দীপু ও জয়কে যখন সিএমএম আদালতের গেট দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে আসা হচ্ছিল, তখন এক ব্যক্তি রাস্তায় শুয়ে পড়েন। এ সময় তিনি দীপু মনির ফাঁসি দাবি করেন। পরে সেখান থেকে উঠে যান। তাদের নিয়ে গাড়ি চলে যায় সিএমএম আদালতের হাজতখানায়।
খেতে দেওয়া হয়নি পানি
বেলা পৌনে ৪টার দিকে তাদের এজলাসে তোলার জন্য হাজতখানা থেকে নিয়ে আসা হয়। তাদের মাথায় হেলমেট পরা ছিল। আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে তাদের এজলাসে তুলতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। অনেক ধাক্কাধাক্কি করে তাদের আদালতের দ্বিতীয় তলায় তোলা হয়। এ সময় কয়েকজন আইনজীবী দীপু মনিকে থাপ্পড় মারেন। পরে তাদের এজলাসে তোলা হয়।
এদিকে ক্লান্ত দীপু মনি আদালতে এসে পুলিশ সদস্যদের কাছে পানি পান করতে চান। তবে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাওয়ায় তাকে আর পানি খেতে দেওয়া হয়নি।
শুনানির শুরুতে আসামিকে কেন হাতকড়া পরানো হয়নি, তা নিয়ে ক্ষোভ জানান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তখন তাদের জানানো হয়, জয়ের হাতে হাতকড়া আছে। দীপু মনি নারী হওয়ায় তার হাতে হাতকড়া পরানো হয়নি। এজলাসে আইনজীবীদের হই-হুল্লোড়ের মধ্যেই শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ইন্সপেক্টর মো. আসাদুজ্জামান আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।
আইনজীবীদের বিরোধিতা
আসামিদের পক্ষে আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে জয় আদালতের উদ্দেশে কথা বলতে যান। তখন এর তীব্র বিরোধিতা করেন আইনজীবীরা। তারা চিৎকার, হই-হুল্লোড় করতে থাকেন। তবে জয় কথা বলেই যান।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জানান, তারা এজাহারনামীয় আসামি নন, সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। নারী হওয়ায় দীপু মনির চার দিন এবং আরিফ খান জয়ের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
শুনানি শেষে সন্তুষ্ট হননি বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তার ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। এরই মাঝে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক।
কিল-ঘুষি মারেন আইনজীবীরা
এরপর দীপু মনি ও জয়কে নিচে নামানো হয়। এরই মাঝে তাদের কিল-ঘুষি মারেন আইনজীবীরা। তখন দীপু মনি চিৎকার করে ওঠেন। আর জয় তাকিয়ে দেখেন। পরে নামানোর সময় ধাক্কাধাক্কিতে সিঁড়ি থেকে পড়ে যান দীপু মনি। এক নারী পুলিশ সদস্যও পড়ে যান তার সঙ্গে। পরে দ্রুত তাদের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গত ১৯ আগস্ট রাতে সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে রাজধানীর গুলশানের বারিধারা ডিওএইচএস এলাকা থেকে আটক করে ডিবি গুলশান বিভাগের একটি দল। তার বিরুদ্ধে চাঁদপুর ও ঢাকায় মামলা রয়েছে। রাতেই তাকে মোহাম্মদপুর থানার এই হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
এ ছাড়া সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে ওই দিন রাতেই রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাকেও মোহাম্মদপুর থানায় করা এ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।