ঈদ-উল-ফিতর মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিশেষ এবং আনন্দময় উৎসব। বাংলাদেশি মুসলমানরা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় থাকুক না কেন, ঈদ মানেই আনন্দ, মিলন এবং ভালোবাসার উৎসব। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও ঠিক একইভাবে ঈদ উদযাপন করেন, যেমনটি বাংলাদেশে হয়ে থাকে। ঈদের নামাজ, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা, সালামি দেওয়া, উপহার বিনিময়, এবং সুস্বাদু খাবারের আয়োজন—সবকিছুতেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ঈদ উদযাপনের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।
ঈদের আগের রাত, অর্থাৎ চাঁদ রাত (Chand Raat), যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে বিশেষ উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, হিউস্টন, শিকাগোর মতো শহরগুলোতে বাংলাদেশি কমিউনিটির উদ্যোগে জমকালো চাঁদ রাতের আয়োজন করা হয়।
এই বিশেষ রাতে লাইভ মিউজিক ও নাচ-গানের আসর বসে, যেখানে বাংলাদেশি শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন এবং মানুষ নাচ-গানের আনন্দ উপভোগ করেন। পাশাপাশি, বড়সড় কেনাকাটার মেলা বসে, যেখানে ঈদের নতুন পোশাক, গয়না, প্রসাধনী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার সুযোগ থাকে।
নারী ও মেয়েদের জন্য চাঁদ রাতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো মেহেদি লাগানো। নানা ডিজাইনের মেহেদি হাতে দিয়ে ঈদের আনন্দ আরও রঙিন করে তোলেন তারা।
ঈদের দিন শুরু হয় বিশেষ ঈদের নামাজের মাধ্যমে। সাধারণত স্থানীয় মসজিদে নামাজ অনুষ্ঠিত হলেও, বড় শহরগুলোতে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য মুসলমানদের সংখ্যা বেশি হওয়ায়, বড় জায়গায় ঈদের নামাজের আয়োজন করা হয়। কনভেনশন সেন্টার, স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম, ক্রীড়া স্টেডিয়াম, ফুটবল বা বেসবল মাঠেও বিশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা, সকলে একসঙ্গে নামাজে অংশ নেন, যা ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
নতুন পোশাক পরা ঈদের অন্যতম বড় আনন্দ। পুরুষেরা সাধারণত পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ঈদগাহে যান, আর নারীরা শাড়ি বা জমকালো সালোয়ার কামিজ পরেন। শিশুদের জন্যও থাকে নতুন পোশাকের আনন্দ, যা তাদের ঈদ উদযাপনকে আরও উৎসবমুখর করে তোলে।
ঈদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের বাড়িতে যাওয়া। ঈদের নামাজের পরপরই সবাই আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যান। এটি ভালোবাসা ও বন্ধনের প্রতীক, যা বাংলাদেশি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ঈদে শিশুদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত হলো ‘সালামি’ পাওয়া। বড়রা ছোটদের টাকা বা উপহার দিয়ে আশীর্বাদ করেন, যা ঈদের আনন্দকে আরও রঙিন করে তোলে। এছাড়াও, আত্মীয় ও বন্ধুদের মধ্যে উপহার বিনিময় করা হয়, যা পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
খাবার ছাড়া ঈদ উৎসব যেন অসম্পূর্ণ! ঈদের দিনে প্রতিটি বাংলাদেশি পরিবারে থাকে বাহারি খাবারের আয়োজন। বিশেষ করে গরুর মাংসের বিরিয়ানি, সেমাই, পায়েস, হালিম, চটপটি, রোস্টসহ নানা সুস্বাদু খাবার রান্না করা হয়। অনেকেই আত্মীয়-বন্ধুদের দাওয়াত দেন এবং একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন। বড় শহরগুলোতে বাংলাদেশি সংগঠনগুলো কমিউনিটি ফাংশনের আয়োজন করে, যেখানে সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়ার আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
যেসব বছর ঈদ কর্মদিবসে পড়ে, তখন অনেকেই পুরোপুরি ঈদ উদযাপন করতে পারেন না, কারণ কাজ বা স্কুলে যেতে হয়। তবে এই বছর (2025) ঈদ রবিবার হওয়ায়, প্রবাসী বাংলাদেশিরা পূর্ণমাত্রায় ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা ঈদের দিন প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করেন। নামাজ, কোলাকুলি, নতুন পোশাক, উপহার বিনিময় ও সুস্বাদু খাবার সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দ পূর্ণতা পায়। দেশ থেকে দূরে থাকলেও, বাংলাদেশিরা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করেন, যা তাদের প্রবাস জীবনে একটি বিশেষ মাত্রা যোগ করে।