নিউইয়র্কের কুইনস লাইব্রেরিতে বাংলাদেশি লেখক রশিদা আকতারের বই নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাইকার কুইন্স সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার অনুষ্ঠিত এ আলোচনা ও মতবিনিময় সভার পৃষ্টপোষকাতায় ছিল কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরি এবং নিউইয়র্ক প্রথম আলো ফাউন্ডেশন।
বাংলাদেশ থেকে অনেকটাই অসুস্থ গীতিকবি, শিল্পী, সমাজসেবী এবং লেখিকা রশিদা আকতার উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। খোলামেলা মত বিনিময় করেছেন আলোচককদের সাথে। ভিন্নধর্মী শিশুতোষ ছড়ার বই 'ছড়িয়ে দিলাম ছড়ার আলো' প্রকাশনা উৎসব ও লেখিকার সাথে কথোপকথন অনেকটাই অনানুষ্ঠানিক হয়ে উঠেছিল। আলোচকরা বলেছেন, শিশু-কিশোর মেধা বিকাশে এবং শিল্প সহায়ক তার এই শিশুতোষ লেখাগুলো শিশু কিশোরদের বিজ্ঞানমনস্ক ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে শেখাবে । শিশু কিশোরদের মনে অসাম্প্রদায়িক মানবিক নীতিনৈতিকতাবোধ সম্পন্ন সৃজনশীল মানুষ গড়তে সহায়তা করবে।
এই বইয়ে লেখিকা সহজ সরল বাংলায় ছড়ায় ছড়ায় এক অনাবিল সত্য সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছেন বলে আলোচকরা বলেন। তিনি ছড়া গানের মাধ্যমে নামতা, বাংলা বর্ণমালা , ইংরেজী বর্ণমালা সংখ্যার ছড়া, দিন মাসের নাম শেখানোর ব্যবস্থা করেছেন । এই বই এতোটাই সহজ সাবলীল ও প্রাণবন্ত করে লেখা হয়েছে যে শিশু খেলতে খেলতে সব শিখে নেবে ।
রশিদা আখতার রসু একাধারে মানবাধিকার কর্মী, অভিনয়, লেখালেখি এবং শিশিক্ষকতার মহান পেশায় নিয়োজিত আছেন । তিনি বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্ম গ্রহণ করেছেন। কিশোরী বয়স থেকেই খেলাধুলা, সংগীত, নৃত্য ও অন্যান্য কর্মকান্ডের সাথে লেখালেখির সাথে জড়িয়ে পড়েন। রশিদা আখতার ১৯৮০ থেকে ৮৩ সাল পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানীতে অবস্থান করেন এবং সেখানে অবস্থানকালে নাচ গান কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে বাঙালি কমিউনিটিতে বিশেষ সুনাম অর্জন করেন। ১৯৮৩ সালে খুলনায় ফিরে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীতে যোগ দেন । এই সময়ে উদীচীর সাংগঠনিক দায়িত্বের পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃত্তি, এবং মঞ্চে অভিনয় করেন। পাশাপাশি শ্রমিক অধিকার নারী পুরুষ সমান অধিকার আদায়ের জন্য গনতান্ত্রিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। কাজ করেছেন মানুষের অধিকার রক্ষায়।
১৯৮৬ সালে রশিদা আকতার বাংলাদেশ বেতার খুলনায় কন্ঠ শিল্পী হিসেবে তার গানের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে উপস্থাপনা, নাট্যশিল্পী ও গীতিকার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।১৯৮৯ সাল থেকে তিনি স্হানীয়ভাবে খুলনা উন্নয়ন ও সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাথে সম্পৃক্ত আছেন। ১৯৯৩ সালে তিনি পথ শিশুদের জন্য নিজ বাসায় বিশেষ স্কুল চালু করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি অরোতীর্থ বিদ্যাপিঠ ও সহজ পাঠ শিশু কানন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন । শিশুদের সার্বিক বিকাশে তার সৃজনশীল পদ্ধতি প্রয়োগ ও শিশুতোষ লেখা স্কুলে পড়ানো শুরু হয়। খুলনা জেলায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পাশাপাশি 'মুক্ত নারী' নামে নারীবাদী সংগঠন গড়ে তোলেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি সমাজের অবহেলিত নারী ও শিশুদের জন্য খুলনায় 'ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার' এবং 'একটি শান্তি সনদ নামে' আশ্রয় কেন্দ্রে গড়ে তুলেছেন।
এখন পর্যন্ত রশিদা আকতারের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চারটি। যথাক্রমে অতল সুরের সন্ধ্যানে, অগ্নি পথ, হৃদয় ছুঁয়ে এবং শিশু কিশোরদের মেধা বিকাশের জন্য বই 'ছড়িয়ে দিলাম ছড়ার আলো' ।
অনুষ্ঠানের উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব তৌকির আহমেদ, আবৃত্তি শিল্পী ক্লারা রোজারিও, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাগর লোহানী, সিনিয়র সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ, আবৃত্তি শিল্পী সেমন্তী ওয়াহেদ, সংগঠক জাকির হোসেন বাচ্চু, মিস্টার জিনাডি প্রমুখ ।