বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেইন ব্যাটালিয়ান কমান্ডার, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে বাংলা সাময়িকপত্র ‘জয় বাংলাদেশ’। ১৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক স্টেট এর রাজধানী আলবেনি সিটি হলে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির উপস্থিতিতে ইংরেজি ভাষার ম্যাগাজিন ‘দ্য বে ওয়েভ’ প্রকাশের পর ২০ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার সর্ববৃহৎ একুশ উদযাপনী অনুষ্ঠানে মোড়ক উন্মোচন করা হয় ‘জয় বাংলাদেশ’ ম্যাগাজিন এর।সে সময় বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃবৃন্দসহ নিউইয়র্কের বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমরা বঙ্গোপসাগরের ঢেউ তুলছি। বঙ্গোপসাগর থেকে যে ঢেউ উৎসারিত হয়েছে তা আজ এখানে নতুন তরঙ্গ সৃষ্টি করেছে। বিশ্বময় ভ্রমনের জন্য এই সাময়িকীর দায়িত্ব সামনে রেখে যে অভিযান, সে অভিযানের জন্য উপযুক্ত জায়গা বাংলাদেশ সোসাইটির সবচেয়ে বড় এই একুশের মঞ্চ।
নিউইয়র্কের উডসাইটে টিবেটেন কমিউনিটি সেন্টারে বিশাল পরিসরে একুশ উদযাপনী অনুষ্ঠানে স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ ছিলেন প্রধান অতিথি। তিনি দুই পর্বের অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সোসাইটি আয়োজিত শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটি ইউএসএ ইনক এর প্রেসিডেন্ট আব্দুর রব মিয়া।
একুশের বৃহত্তম অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আবু জাফর মাহমুদ উপস্থিত সহ¯্রাধিক সূধীবৃন্দের মাঝে একুশের চেতনার গভীর তথ্যচিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমরা শহীদ দিবস আর ৫২’র প্রেক্ষাপটকে মাতৃভাষা আন্দোলন বলে থাকি। এ বিষয়টি পরিস্কার হওয়া দরকার। একুশে ফেব্রুয়ারির আগে ৪৭ সনের আগে আমাদের পূর্ব পুরুষরা কি বাংলায় কথা বলতো না? সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলতাম। মাতৃভাষা বাংলা আগেও ছিল। বাংলায় কথা বলতাম বলেই, ছাত্রজনতার দাবি উঠেছিল “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”। সেটি ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন। এখন সবার মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দাবি এখনও ফুরিয়ে গেছে কি-না! আমরা কি সর্বস্তরে রাষ্ট্রভাষা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি? পারিনি। দিনে দিনে বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের অবহেলা বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা অন্য ভাষা ও সংস্কৃতিকে দেশের মাটিতে লালন করছি। আমি বিশ্বাস করি, এই আন্দোলন এখনও চলমান।
স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমাদের এই সমাজ মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ সোসাইটি সবচেয়ে বড় ও যোগ্যতম সংগঠন। কাজেই শৃঙ্খলার দিক থেকে, জ্ঞানের দিন থেকে, নৈতিকতার দিক থেকে বাংলাদেশ সোসাইটির প্রত্যেকটি কর্মকর্তা মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। এটি আমাদের আশা। আমরা আমেরিকার বহুজাতিক সমাজের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় আছি। তিনি সোসাইটির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সমাজে যে কর্মটি করছেন, এটি কোনো অবস্থাতেই রাজনৈতিক দলের মঞ্চ নয়, একথা সবাইকেই মনে রাখা জরুরি।
আবু জাফর মাহমুদ আমাদের ধর্মীয় ও কৃষ্টি সংস্কৃতিক ঐশ্বর্য্যরে কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা প্রত্যেকে যখন জন্ম নিয়েছি, মায়ের পেট থেকে মুসলমান হলে আজানের ধ্বনি আর হিন্দু হলে উঁলু ধ্বনি শুনেছি। এটি যার যার কৃষ্টি। এই কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও দেশাত্ববোধ নিয়েই যেন আমরা থাকি। আমাদের একতা খুব দরকার।
অনুষ্ঠানে ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থ উপলক্ষে আয়োজিত ডায়াসপোরা ককাসে ঘোষিত সংগঠন ও সমাজকর্মের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আব্দুর রব ও সেক্রেটারি রুহুল আমিন সিদ্দিকীর হাতে তুলে দেন স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের শতাধিক আঞ্চলিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক সংগঠন নৃত্যাঞ্জলীর আয়োজনে দেশের গান ও নৃত্যে অংশ নেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের নতুন প্রজন্ম। রাত বারোটা এক মিনিতে শহীদ মঞ্চে স্থাপিত শহীদ মিনারে ফুল দেয়া শুরু হয়। প্রধান অতিথি স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ তার প্রতিষ্ঠান এ জেড এম গ্রুপের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পন করেন। সেসময় তার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পন করেন।