সম্প্রতি ডয়েচে ভেলের কাছে এক সাক্ষাৎকারে ড.ইউনুস দাবি করেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য নয়, বরং কর দিতে হবে কিনা তা জানতে চেয়ে তিনি নিজেই নাকি আদালতে গিয়েছিলেন। আদালত ব্যাখ্যা দেওয়ার সাথে সাথেই তিনি কর পরিশোধ করে দেন।
প্রকৃতপক্ষে ইউনুসের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি ২০০৯ সালে “ইউনুস ট্রাস্ট” এবং ২০১১ সালে “ইউনুস ফ্যামিলি ট্রাস্ট” দুটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কর ফাঁকি দেওয়া। কারণ ২০১১-১২ অর্থবছরে এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৬২ কোটি টাকা দান করেন ইউনুস। দানের ওপর কর দেননি তিনি। এরপরের দুই বছরেও একইভাবে প্রতিষ্ঠান দুটোকে টাকা দেন তিনি এবং কর দেননি। উল্লেখ্য যে এই ট্রাস্টগুলোর ট্রাস্টিও আবার তিনি নিজেই।
তখনই এনবিআর এ বিষয়ে আপত্তি তোলে। কারণ আইনে বলা আছে, কেবলমাত্র নিজের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাকে দান করলেই সে অর্থ করযোগ্য হবে না। বাকি সব ক্ষেত্রেই কর দিতে হবে। আইনে সহজভাবে লেখা থাকলেও ইউনুস বিষয়টিকে প্যাঁচাতে থাকেন।
প্রথমে কর কমিশন, এরপর কর আপীল বিভাগ এবং এরপর আদালতে যান ইউনুস। এর মূল উদ্দেশ্য কালক্ষেপন। এটা ইউনুসের পুরনো অভ্যাস। বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগ নিয়ে সহজ বিষয় নিয়ে ইউনুস আদালতে গেছেন।
ইউনুসের অনুপস্থিতি, অসুস্থতা নানা অজুহাতে প্রায় ১২ বছর পরে ইউনুস কর পরিশোধ করেন। ১২ বছর আগে ১২ কোটি টাকার যে মূল্য তা যেমন বেড়েছে, তেমনি এই টাকা দীর্ঘদিন ধরে তিনি ব্যবহার করে সুবিধাও ভোগ করেছেন।
সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার হলো, ইউনুস আদালতের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে মামলা করেননি। ইউনুস “কর মওকুফ চেয়ে” আদালতে মামলা করেন।
একইভাবে, এনবিআরের আরেকটি মামলায় ২৫ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে আপীল করার বিধান থাকলেও তিনি বিষয়টি নিয়ে ১০ বছরেরও বেশি সময় এনবিআরকে আদালতের পেছনে ঘুরিয়েছেন। আদালতও সম্প্রতি একই নির্দেশ তাকে দিয়েছেন যে, প্রচলিত নিয়ম মেনে আপীল করতে হবে।
নিয়ম না মেনে যেনতেনভাবে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বিদেশ ভ্রমণ, অসুস্থতা নানা অজুহাতে একের পর এক তারিখ পরিবর্তন করে সহজে নিষ্পত্তিযোগ্য বিষয়কে ১০/১৫ বছর ঝুলিয়ে রাখার অসৎ উদ্দেশ্য থেকেই তিনি আদালতে যান।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত যে দুটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে ইউনুস প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা দান করেন, বিগত ১৫ বছরে এসব প্রতিষ্ঠান কোনো দাতব্য কাজ করেনি।
ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশো-তে ড, মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “গ্রামীণ ব্যাংকে কোনো অনিয়ম করিনি। কোনো আয়কর ফাঁকি দেয়নি।” প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য নিশ্চিত করতে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবনশীলতা বিবেচনা করে সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে অধ্যাপক ইউনূস এর ইচ্ছামত চলতে দেয়।
•ফলে তিনি নিজের মত করে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং ব্যাংক পরিচালনায় আইন- কানুন ও নিয়মাবলী অনুসরণে তেমন যত্নবান ছিলেন না।
•পরিচালনা পর্ষদ বা তার চেয়ারম্যান এসকল বিষয়ে কখনো কোন প্রশ্ন উত্থাপন করেননি।
•নব্বই-এর দশকে নরওয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের কিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে চায়। সরকার তখন এ বিষয়টি গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে বলে।
৬০ বছর বয়সেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক-
•১৯৯৯ সালে ব্যাংকের চাকুরী বিধিমালা অনুসরণ না করে পরিচালনা পর্ষদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে তাঁর বয়স ৬০ বছর হওয়া সত্ত্বেও অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিযুক্তি দেয়।
•এ নিযুক্তিতে আইনের তোয়াক্কা করা হয়নি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনও নেয়া হয়নি।
•এই অনিয়মিত নিযুক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৯৯ সালেই তাদের পরিদর্শন বইতে মন্তব্য রাখে।
•২০১০ সালে নরওয়ে টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই বিষয়টি সামনে আসে এবং তখন এই বিষয়ে তদন্তের দাবি উঠে। এরই প্রতিফলন হিসেবে ২০১১ সালে অধ্যাপক ইউনূসকে পদত্যাগ করতে বলা হয়।
•অধ্যাপক ইউনূস তখন আদালতের আশ্রয় নেন এবং আদালতের রায় অনুযায়ী ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে পদত্যাগ করেন।
আয়কর নিয়েও নয়ছয়-
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৩ জুলাই, ২০০৪ তারিখের ২১৬-আইন/আয়কর/২০০৪/নম্বর এস, আর, ও মূলে সরকার আবাসিক/ অনাবাসিক মর্যাদা নির্বিশেষে বাংলাদেশের কোন নাগরিকের বাংলাদেশের বাইরে উদ্ভুত আয়কে Income-tax Ordinance, 1984 এর আওতায় প্রদেয় আয়কর হতে অব্যাহতি প্রদান করে।
•অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই, ২০০৪ সালে থেকে জুন, ২০১১ পর্যন্ত (৭ অর্থ বছর) সময়কালে মোট ১৩৩টি বৈদেশিক প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানী, ১০টি প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার ও ১৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে রয়্যালটি বাবদ মোট ৫০ কোটি ৬১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫৮৮ টাকা করমুক্ত আয় হিসেবে আয়কর নথিতে প্রদর্শন করে মোট ১২ কোটি ৬৫ লক্ষ ৪৬ হাজার ৩ শত ৯৭ টাকা আয়কর অব্যাহতির সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
•বিদেশ থেকে এ সম্মানী, পুরস্কার বা রয়্যালটি গ্রহণের পূর্বে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ড. ইউনুস ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নেননি।
তহবিল স্থানান্তরে অনিয়ম-
•৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৬ তারিখে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে উপরিউক্ত অর্থ 'গ্রামীণ কল্যাণ' নামক প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর দাবী করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তহবিল স্থানান্তর না হওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের যে সম্পদ বিদ্যমান ছিল, তার উৎস হিসেবে 'গ্রামীণ কল্যাণ' থেকে উক্ত অর্থ পুনরায় একই দিনে ঋণ হিসেবে কাগজে-কলমে স্থানান্তর প্রদর্শন করতে হয়েছে।
•এর মাধ্যমে সম্পদের বিপরীতে তহবিল না থাকলে 'অব্যাখ্যায়িত আয়' হিসেবে বিবেচনাযোগ্য অর্থের উপর প্রযোজ্য আয়কর গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
•এক্ষেত্রে আয়কর অব্যাহতি কর্তন এসআরও নং ৯৩-আইন/২০০০ এর শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে:
•তহবিল স্থানান্তর সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ কল্যাণের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয় মে, ১৯৯৭ সময়ে।
•অথচ তহবিল স্থানান্তর দেখানো হয়েছে ডিসেম্বর ১৯৯৬ সময়ে অর্থাৎ চুক্তি স্বাক্ষরের ৫ মাস আগে।
•সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে আয়কর প্রদান থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কিন্তু গ্রামীণ কল্যাণকে দেয়নি। তাই তহবিল স্থানান্তর আইন বহির্ভূতভাবে হয়েছে।
•গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণে স্থানান্তরিত উপরে উল্লেখিত অর্থ প্রকৃতপক্ষে ১ জানুযারি ১৯৯৭ তারিখের পর স্থানান্তরিত হয়েছে।
•অডিট রিপোর্টে হিসাব মিলোনোর প্রয়োজনে উক্ত অর্থ স্থানান্তর ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৬ তারিখে দেখানো হয়েছিলো।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিবৃতিদাতারা হলেন- মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, চেয়ারম্যান,কংগ্রেস অব বাংলাদেশী আমেরিকানস্ ইনক্, শামীম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্ঠা, ড. প্রদীপ কর, উপদেষ্টা, এ্যাড. শাহ বখতিয়ার, পরিচালক, মন্জুর চৌধুরী, সেক্রেটারী জেনারেল, জালাল উদ্দিন জলিল, উপদেষ্টা রুমানা আক্তার, পরিচালক, মো: শহিদুল ইসলাম, পরিচালক, কায়কোবাদ খাঁন, পরিচালক,হাকিকুল ইসলাম খোকন, উপদেষ্টা প্রমুখ।