বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বীর লড়াকু জীবন বাজি রেখেছিলেন, নুরুন নবী তাদের মধ্যে একজন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে শুরু করে পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণ পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহ দেখলে শিহরিত হতে হয়। এসব ঘটনাবলীর সচিত্র উপস্থাপনায় বাঙালির ত্যাগ এবং গণহত্যার ঘটনাগুলো দৃশ্যমান হয়। বাংলাদেশের মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বারবার একাত্তরেই ফিরে যেতে হয়। একাত্তরের সূর্যসন্তান নুরুন নবীদের বীরত্ব গাঁথা বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
'ড. নুরুন নবী- আজীবন মুক্তিযোদ্ধা' প্রামাণ্য চিত্রের প্রদর্শনী শেষে আলোচকরা এসব কথা বলেছেন। ৯ মার্চ শনিবার নিউজার্সির এডিসন শহরের বিগ সিনেমায় নাদিম ইকবাল পরিচালিত প্রামাণ্য চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং খ্যাতিমান প্রযোজক জান্নাতুল টুম্পার ব্যবস্থাপনায় এ প্রদর্শনীতে প্রামাণ্য চিত্রের নায়ক ড. নুরুন নবী এবং তাঁর স্ত্রী ড. জিনাত নবী উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘদিন থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ড. নুরুন নবী একজন বিজ্ঞানী। নিউজার্সির প্লেনসবরো শহরের একজন নির্বাচিত কাউন্সিলম্যান। এসবের পাশাপাশি ছাত্রাবস্থায় দেশ মাতৃকার মুক্তির লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই তিনি খ্যাতিমান। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি অগ্রযাত্রায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে সক্রিয় রয়েছেন ড. নুরুন নবি। মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন। বয়সের ভার কিংবদন্তি এ যোদ্ধাকে কাবু করেনি। প্রামাণ্য চিত্রে জীবন সঙ্গী ড. জীনাত নবিকে পাশে বসিয়ে দ্রোহ কালের বর্ণনা দিচ্ছিলেন নুরন নবি। থরে থরে ভেসে আসছিল ইতিহাসের উজ্জ্বল ঘটানগুলো। লাশের স্তূপ, নগ্ন পায়ে বাঁশের লাঠি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেইনিং, ধর্ষিতা মায়ের আর্তনাদ !
প্রামাণ্য চিত্রটি দেখে দর্শকদের ঘটনা প্রবাহের সাথে নিজেদেরও চলে যেতে হয়েছে একাত্তরে। একটি দেশের স্বাধীনতার উম্মীলনের সময়টি। প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই বলেছেন, বাংলার মানুষ একবারই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। সেই ঐক্যের পাটাতনে দাঁড়িয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা নুরুন নবীর লড়াকু জীবন সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানা গেছে।
প্রদর্শনী শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী ও ড. জিনাত নবীকে নিয়ে মুক্ত আলোচনায় যোগ দেন বিশিষ্টজনেরা। আয়োজক জান্নাতুল টুম্পা সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশের লোকজনের কাছে এ প্রামাণ্য চিত্রের প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন। প্রবাসে বাংলাদেশি প্রজন্মের কাছে এ প্রামাণ্যচিত্রটি বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসকে জানার একটি উল্লেখযোগ্য তথ্যচিত্র হতে বারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ডাঃ ফারুক আজমের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় যোগ দেন পরিচালক নাদিম ইকবাল, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী ,নাজনীন হোসেইন, কাউন্সিলউওম্যান শিফা উদ্দিন, ড. সিদ্দিকুর রহমান, গোলাম ফারুক ভুইয়া, মামুন চৌধুরী, হাবিব রহমান, মোঃ রশিদ দিদার, মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, খাইরুল ইসলাম পাখি, বন্যা মির্জা, কাউন্সিল উওম্যান উয়েন্ডি শেফার, ইসমাইল,
আজম আহমদ, নাজরীন, সাবিনা রুপা, আমানুললাহ রীনা, আজহারুল হক, মনিজা ইসমত প্রমুখ। আলোচনা পর্বে বক্তারা পরিচালক নাদিম ইকবালকে এমন একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য ধন্যবাদ জানান। ড. নুরুন নবী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, দেশে ও দেশের বাইরে প্রামাণ্যচিত্রটি নিয়ে বাংলাদেশিদের আগ্রহ দেখে তিনি আপ্লুত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধই তাঁকে আজীবন তাড়া করে গেছে। আজও ধ্যানে ও মনে তিনি মুক্তিযুদ্ধকেই লালন করেন। তাঁর উপর নির্মিত তথ্যচিত্র দেখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লোকজন উদ্বুদ্ধ হবেন, নিজেদের চেতনাকে শানিত করবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।