নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করল যুক্তরাষ্ট্রের এমসি টেলিভিশন

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৬ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৮

যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম কমিউনিটির চাহিদা মেটাতে নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করেছে এমসি টেলিভিশন। প্রবাসে মুসলিম সম্প্রদায় ও ইসলামের খেদমতে কাজ করবে এ টেলিভিশন এমন ঘোষণা দিয়ে টেলিভিশনটি যাত্রা দু’মাস আগে শুরু হলেও এর আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডের ঘোষণা দেওয়া হল হয় গত শুক্রবার (৮ মার্চ)। পবিত্র রমজানে ‘সত্যের সন্ধানে আল কুরআন’ এ শিরোনামে নতুন একটি অনুষ্ঠানমালা শুরু করছে এমসি টেলিভিশন। এ উপলক্ষ্যে শুক্রবার অনুষ্ঠিত তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুসলিম কমিউনিটির নেতারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম কমিউনিটির জন্য একটি ভালো মানের টেলিভিশনের প্রয়োজন। আর এ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে এমসি টেলিভিশন।
এমসি টেলিভিশনের চেয়ারম্যান কাজী শামসুল হকের পরিচালনায় এবং নির্বাহী পরিচালক ফকির সেলিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুসলিম কমিউনিটির নেতারা বলেন, প্রবাস জীবনে বাড়ীর চারদেয়ালের মধ্যে বিনোদনের মাধ্যম টেলিভিশন আজকাল ‘শয়তানের বাক্সে’ পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের মহিলারা এখন জাতীয় ও বিজাতীয় সিরিয়ালে আসক্ত। ফলে অপসংস্কৃতির সয়লাব সর্বত্র পরিদৃষ্ট হচ্ছে। এসব সিরিয়ালের ফলে নারীরা বিজাতীয় পোষাক-পরিচ্ছদ, পূজা-পার্বণ, ভাষা প্রভৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। পরিবারের নারী সদস্যদের দেখে দেখে শিশুরাও এতে আকর্ষিত হচ্ছে। এই মাধ্যমে ভালো কোন ইসলামিক চ্যানেল না থাকায় এগুলোর প্রভাব আরো বেশী ত্বরান্বিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম কমিউনিটির এসব চাহিদা মেটাতে কাজ করবে এমসি টেলিভিশন।
বক্তারা বলেন, পৃথিবীতে সকল প্রযুক্তিকেই ভালো কাজে ব্যবহার করা যায়। আধুনিক যুগে নতুন নতুন প্রযুক্তিকে ইসলামের খেদমতে ব্যবহার করুন। প্রতিটি জিনিসকে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যায়, আবার মন্দ কাজেও ব্যবহার করা যায়। দোষ কিন্তু জিনিসের বা প্রযুক্তির নয়। বরং এখানে ব্যবহারকারী মূলতঃ দায়ী। যেমন টেলিভিশনের মাধ্যমে মন্দ ছবিও দেখ যায়, আবার সারাদিন ইসলামিক অনুষ্ঠানও দেখা যায়। লক্ষণীয় যে, আমরা কোন কাজে ব্যবহার করছি সেটাই বিবেচ্য বিষয়। আমরা যদি প্রযুক্তিকে ইসলাম প্রচারের কাজে লাগাই তাহ’লে সব ধরনের প্রযুক্তিই কল্যাণের মাধ্যম হবে। আর যদি এই কথা বলে পিছিয়ে থাকি যে, এগুলো ব্যবহার করা হারাম। তাহ’লে এগুলোর সুফল থেকে জাতি বঞ্চিত হবে। সব নবী-রাসূলই তাদের যামানায় তৎকালীন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন এবং নিজস্ব ধর্মের প্রচার-প্রসার করেছেন। তাঁরা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করেছেন। আমরাও যদি প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করি তাহ’লে তা হবে ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর।
বক্তারা আরও বলেন, মানবতার কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে মানুষের জীবনযাপনকে সহজ ও সাবলীল করেছে। ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই। তবে বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল, ইসলাম চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে সঠিক ব্যবহার ও এর সুফল আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারে অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। এর কবল থেকে পরিত্রাণের আশাও অকল্পনীয় বৈ কি। প্রযুক্তির এই নে‘মতগুলো আজ আযাবে পরিণত হচ্ছে। তাই একটি ভালো মানের টেলিভিশনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম কমিউনিটির সকল চাহিদা মেটাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রবাসী মুসলিম কমিউনিটির নেতাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এমসি টেলিভিশনের কর্মকর্তারা বলেন, আমরা ইসলামিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রবাসীদের সংবাদসহ সকল ধরনের অনুষ্ঠানাদি প্রচার করব। সংবাদমাধ্যমে ‘হলুদ সাংবাদিকতার’ যে প্রবাদ রয়েছে এমন দিন আসবে সেদিন এ শব্দটিও মুছে যাবে।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এমসি টেলিভিশনের চেয়ারম্যান কাজী শামসুল হক, নির্বাহী পরিচালক ফকির সেলিম, প্রেসিডেন্ট ও সিইও আব্দুর রব চৌধুরী মিরন, বাণিজ্যিক পরিচালক ফারহানা চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারন সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী, সাবেক সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহিম হাওলাদার, নার্গিস আহমেদ, টাইম টেলিভিশনের সিইও আবু তাহের, দ্য অপটিমিষ্টের প্রেসিডেন্ট মিনহাজ আহমেদ শাম্মু, জয়নাল আবেদীন, প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, আকবর হায়দার কিরন, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী নুরুল আজিম, আলমগীর খান আলম, মাকসুদুল চৌধুরী, আবুল কাশেম, মেহের চৌধুরী, আবিদ রহমান, জাসির, মীর্জা প্রপেল, আব্দুস সাত্তার, এম মুজিব, জাহিদ রহমান, রিজু আহমেদ, সাজ্জাদ হোসেন ও রাজিব প্রমুখ। উলেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪০ লাখ মুসলমানের মধ্যে নিউ ইয়র্কে ৯ শতাংশ মুসলমান বসবাস করেন। যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদ আছে অন্তত ৫ হাজারেরও বেশি। এখানে প্রায় দেড় হাজারের মতো মুসলিম চ্যারিটি অরগানাইজেশন কাজ করছে। বর্তমানে ইসলামিক স্কুল রয়েছে পাঁচ শতাধিক। নিউ ইয়র্কের চিকিৎসকদের মধ্যে ১০ শতাংশ মুসলিম রয়েছে বলে জানা যায়।