দুবাইয়ে বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

আমিরাত থেকে
  ২০ মার্চ ২০২২, ১৩:৪২
আপডেট  : ২০ মার্চ ২০২২, ১৩:৪৮

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের অনেক আইন সেই ব্রিটিশ আমলের সময়কার; যার ফলে এখনো বলা হচ্ছে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য জেলার স্থায়ী নাগরিক হতে হবে এবং সম্পত্তি থাকতে হবে।


কিছু দিন আগে পুলিশের চাকরির পরীক্ষায় দুটি মেয়ে ভালোভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও সম্পত্তি না থাকায় চাকরি হওয়া নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এমনকি না করে দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে মেয়ে দুটি চাকরি পায়।

কী অদ্ভুত আইনি কাণ্ড! সংবিধান বলছে সকল নাগরিকের সমান অধিকার। আইন বলছে অন্যায় করেও দেশ ছেড়ে যেতে বাঁধা নেই বা সম্পত্তি না থাকলে কনস্টেবলের চাকরি হবে না! তাহলে আইন এবং সংবিধান পরস্পর বিরোধী নয় কি?

একজন নাগরিক কী সুযোগ-সুবিধা পাবে বা পাবে না সেটা তার সম্পত্তি থাকা বা না থাকার উপর নির্ভর করবে? তাই যদি হয় তবে দেশ স্বাধীন করার সময় তো একথা শুনিনি? কী হবে এসব আইন দিয়ে যদি জনগণ তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়? এইভাবে আর কতদিন চলবে? সম্পত্তি আছে কী নেই তার ওপর নির্ভর করতে পারে না কারো ভবিষ্যৎ। এই আইন আর একদিনও চলতে পারে না দেশে!

ব্রিটিশ আইনেই যদি দেশ চলবে তাহলে কি দরকার ছিল ব্রিটিশকে তাড়ানোর? একটি স্বাধীন দেশে ঔপনিবেশিক আমলের আইন-কানুন চলতে পারেনা, পারে না, পারে না। এই অদ্ভুত, ভয়ঙ্কর, কুৎসিত, বীভৎস এবং বৈষম্যপূর্ণ আইন অবিলম্বে বাতিল করে সকল নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি!

একই সাথে ক্রস ফাংশনাল প্রজাতন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চাই। কারণ আমরা যেমন আছি তেমন থাকলে চলবে না। আমাদের পারস্পরিক গভীর চিন্তার মাধ্যমে জটিল সমস্যা সমাধানে ব্রেইন স্টর্মিং পদ্ধতি চালু করতে হবে। সেক্ষেত্রে এ লিখার মূল উদ্দেশ্য ব্রেইন স্টর্মিং পদ্ধতি চালু করা নতুন প্রজন্মের মাঝে। এ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অভিজ্ঞতার ও বুদ্ধিমত্তার বিনিময় ঘটবে এবং সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান সম্ভব হবে। ব্রেইন স্টর্মিং পদ্ধতি পারস্পরিক মত বিনিময় ঘটায়, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করে।

জাতীয় সংসদ শুধু মাত্র কাগজে কলমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনসভা এবং এ আইনসভার সদস্য সংখ্যা ৩৫০ জন। দুর্ভাগ্যবশত এই আইনসভায় আইনের উপর কোনো বেস্ট প্রাক্টিস হয়না। যে কাজে এতগুলো লোকের বেতন দেয়া হয় জনগণের করের অর্থ থেকে, সেই কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত না হবার কারণে বর্তমানে দেশের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিস্থিতি। সংসদ সদস্যেদের কাজকর্ম এবং তাদের দক্ষতা দেখে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছি তাতে মনে করি জাতীয় সংসদকে ভেঙ্গে ক্রস ফাংশনাল (A cross-functional team is a group of people with different functional expertise working toward a common goal) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ গঠন করা হোক সাথে ভেঙ্গে দেওয়া হোক সংসদ এবং গডফাদারদের মেরুদণ্ড।

সংসদ সদস্যদের কাজ দেশের অবকাঠামোর উন্নয়নে আইনকানুন তৈরি করা কিন্তু এনাদের অনেকেই প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এমনকি ইদানীং এও জানা গেছে কেউ কেউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে অন্যের সাহায্যে সার্টিফিকেট অর্জন করে সংসদে ঢুকেছে। যে কাজে সংসদ সদস্যদের ভোট দেয়া হয়েছে তাদের সে কাজ করার যেমন দক্ষতার অভাব রয়েছে ঠিক তেমন অভাব রয়েছে আদর্শের এবং সততার (ব্যতিক্রম রয়েছে কিছু সংখ্যক সদস্যের মধ্যে)।

এখন দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নতুন করে দক্ষ এবং দুর্নীতিমুক্ত সরকারের সাহায্যে গ্রাম, ইউনিয়ন এবং উপজেলার মতো জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে জনগণের সক্রিয় ভোটে মেম্বার, চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হোক। জেলা এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব এবং কর্তব্যের সীমাবদ্ধতা শুধু সিটির মধ্যে নয়, তা যেনো পুরো জেলা এবং বিভাগীয় ক্রস ফাংশনাল গণপ্রজাতন্ত্রীক হয় তারও ব্যবস্থা করা হোক। জনগণের সুবিধার্থে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক গ্রাম থেকে শুরু করে বিভাগীয় পর্যায়ে।

বর্তমান দেশের পরিকাঠামোতে শুধু মাত্র উপজেলা পর্যায়ের চেয়ারম্যানদের ক্রস ফাংশনাল টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে। ইউএনও থেকে শুরু করে প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা যারা উপজেলা চেয়ারম্যানের টিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের পরিকাঠামোকে মজবুত করতে পারে। কিন্তু জাতীয় সংসদ সদস্যদের কর্তৃত্বের কারণে তার সঠিক চর্চা সেখানেও হচ্ছে না।

উপজেলার মতো দরকার প্রতিটি জেলা এবং বিভাগে জনগণের নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের। জেলা এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের পরিপূর্ণ দায়ভার দিতে হবে যাতে করে তাঁরা ক্রস ফাংশনাল টিম তৈরি করে তাঁর বিভাগকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারে। দেশের আটটি বিভাগের চেয়ারম্যানদের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হোক। সকল বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়ার সুযোগ দেয়া হোক এবং বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র করা হোক আটটি বিভাগের সমন্বয়ে। কেউ যেনো দুইবারের বেশি ক্ষমতায় না আসতে পারে সেটাও নিশ্চিত করা হোক। পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বী দ্বিতীয় বার ইলেকশনে যোগ না দিতে পারে তার ব্যবস্থাও করা হোক। প্রতিটি বিভাগে সকল স্তরের গুরুত্বপূর্ণ কর্মজীবীদের সমন্বয়ে ক্রস ফাংশনাল টিম তৈরি করা হোক।

দেশে মজবুত এবং টেকসই অবকাঠামো তৈরি করতে রাজধানী থেকে সমস্ত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে পুরো দেশের শাসনতন্ত্রের ভারসাম্য আনা হোক। আট বিভাগের চেয়ারম্যানসহ প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পলিসিমেকার হিসেবে কিছু সংখ্যক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হোক যারা দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবেন। পররাষ্ট্র বিভাগ বা মন্ত্রণালয়কে সেন্ট্রাল সরকারের অন্তর্ভুক্ত করা হোক বহিঃবিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে।

একই সাথে দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠান নিপাত করা হোক। একটি দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকা মানে দুর্নীতিকে স্থায়ীভাবে সমর্থন দেয়া। দুর্নীতি দমন কমিশন আছে বিধায় দেশে দুর্নীতি এবং অনীতি আছে এবং থাকবে। বর্তমান সরকারের জিরোটলারেন্স দুর্নীতি মিশন সফল হবে না যতদিন পর্যন্ত দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠান থাকবে এবং জাতির মাইন্ডসেটের পরিবর্তন হবে।

একটি দরিদ্র এবং দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের পরিকাঠামোতে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার “গুড ফর নাথিং” তাই সত্তর তার এলিমিনেশন কাম্য।