সৌদি আরবে ফ্ল্যাটে মিললো ২ ভাইয়ের রক্তাক্ত মরদেহ, পরিবারের দাবি ‘হত্যা’

প্রবাস ডেস্ক
  ২৩ মে ২০২৫, ২২:৪৩

সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (২১ মে) সকালে ওই ফ্ল্যাট থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়। আকস্মিক এই মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
নিহত দুই ভাই হলেন—গাজীপুরের উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শ পাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২)।
পরিবার জানায়, কাকন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে চাকরি খুঁজছিলেন। এ সময় ঢাকার নয়াপল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিন তাঁকে ২১ লাখ টাকার বিনিময়ে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন। মোশারফ হোসেন অগ্রিম ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ভিসা প্রসেসের কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এরপর বাহার উদ্দিন ছোট ছেলে সাগরকে সৌদিতে ভালো বেতনের চাকরির প্রস্তাব দিয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সাগর সৌদি আরবে পাড়ি জমান। কিন্তু কথা মতো চাকরি না দিয়ে তাঁকে খাবার সরবরাহের কাজে নিযুক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে কাকনকেও সৌদিতে নিয়ে যান বাহার উদ্দিন। ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি নিজে তাঁদের নিয়ে সৌদি যান। দুই ভাইকে ভালো চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরে একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখা হয়।
মোশারফ হোসেন অভিযোগ করেন, তিনি ওই বছরই ওমরাহ ভিসায় সৌদি গিয়ে ছেলেদের সঙ্গে দেখা করেন। তারা জানান, অমানবিক অবস্থায় খাবার ডেলিভারির কাজ করানো হচ্ছে এবং কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। ওমরাহ শেষে দেশে ফেরার সময় বাহার উদ্দিন তাঁকে একটি ব্যাগ পৌঁছে দিতে বলেন। সৌদি বিমানবন্দরে তল্লাশির সময় ওই ব্যাগে ১৩ লাখ টাকার সোনা পাওয়া যায় বলে দাবি করেন মোশারফ। দেশে ফেরার পর সোনা ফেরত না দেওয়ায় বাহার তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এ নিয়ে গাজীপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মোশারফ হোসেন। পরে ৯ মে রাতে একদল অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত তাঁর বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়িতে তাঁকে না পেয়ে বৃদ্ধ পিতাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে।
সৌদি পুলিশ জানায়, দাম্মামের ওই ফ্ল্যাটে ঢুকে বুধবার সকাল ৭টার দিকে দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে বাংলাদেশি এক যুবককে সনাক্ত করা হয়েছে।
নিহতদের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমি আমার দুই ছেলেকে ভালো ভবিষ্যতের আশায় বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। আজ তারা লাশ হয়ে ফিরছে। আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি, দ্রুত তাদের মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হোক এবং এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা হোক।’
দুই সন্তান হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন মা ও স্বজনরা। তাঁরা বলেছেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যা, যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান তাঁরা।
গাজীপুর সদর থানার ওসি মেহেদি হাসান বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়নি।’