নিউইয়র্কে নির্বাচনের পরিবর্তিত স্রোতে এশীয় ভোটারদের দিকে নজর

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৪ জুন ২০২৫, ১৫:৫১

নিউইয়র্ক সিটির পরবর্তী মেয়র নির্বাচনের দৌড়ে ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের সামনে যেমন সুযোগ, তেমনি বড় চ্যালেঞ্জও দেখা দিয়েছে—তাঁদের নিজেদের দলের অনেক এশীয় ভোটারই ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেননি। বিশেষ করে কুইন্স ও ব্রুকলিনের দক্ষিণ এশীয় অধ্যুষিত কিছু এলাকায় এই অনীহার প্রভাব স্পষ্ট।
অনেক এলাকায় ট্রাম্পের জয় এশীয় ভোটারদের রিপাবলিকান হয়ে যাওয়ার কারণে নয়, বরং এ কারণে যে ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক নিবন্ধিত ভোটারই ভোট দিতে যাননি। ২০২৪ সালে কমলা হ্যারিস ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম ভোট পান। ভোটার নিবন্ধন অনুযায়ী, ডেমোক্রেটিক ও ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টির বিপুলসংখ্যক নিবন্ধিত ভোটার নির্বাচনে অংশ নেননি।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—সাউথ ওজোন পার্ক ও রিচমন্ড হিল, এই দুটি এলাকায় বেশির ভাগ ভোটার পাঞ্জাবি, শিখ, বাংলাদেশি ও ইন্দো–ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূত। সেখানে ট্রাম্পের প্রতি কিছুটা ঝুঁকেও পড়া গেছে, তবে এই পরিবর্তনের পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ এককথায় বলা কঠিন। অন্যদিকে, ব্রুকলিনের কেনসিংটন এলাকার ওশান পার্কওয়ে সংলগ্ন অঞ্চলে, যেখানে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি ভোটারের আধিক্য, সেখানে হ্যারিসের ভোট কমলেও ট্রাম্পের ভোট খুব একটা বাড়েনি।

ডেমোক্রেটিক কৌশলবিদ অমিত সিং বাগ্গা বলেন, “এই দুটি এলাকা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল একরকম হলেও ভোটারদের মনস্তত্ত্ব একেবারেই আলাদা। এটি গভীরভাবে অন্বেষণ করা দরকার।”
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনেক ডেমোক্রেটিক ভোটার ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁকা ব্যালট জমা দেন, বিশেষ করে গাজা যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন সরকারের অবস্থানের প্রতিবাদে। কেনসিংটনের বাংলাদেশি ও আরব ভোটারদের মধ্যে অনেকে এমনটি করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এই এলাকাগুলোতে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ছিল না, বরং ক্ষোভ প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যালট ব্যবহার করা হয়েছে।
এশীয় ভোটারদের প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভোটার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কেউ কেউ একাধিক ভাষায় সঠিক তথ্য না পাওয়ায় রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। আবার কোনো কোনো সম্প্রদায়ে ভুল তথ্য ও ভুয়া প্রচারও ভোটের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।
নিউইয়র্ক সিটিতে এশীয় ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২১ শতাংশ। এটি এক বিশাল ভোটব্যাংক—যদি সক্রিয় হয়, তাহলে পুরো নির্বাচনের গতিপথ বদলে দিতে পারে। তাই মেয়র পদপ্রার্থীদের জন্য বড় প্রশ্ন এখন—তাঁরা কীভাবে এই ভোটারদের কাছে পৌঁছাবেন?
কেউ প্রচারপত্র বহু ভাষায় অনুবাদ করছেন, কেউ আবার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক কাজে লাগাচ্ছেন। অনেক প্রার্থী নতুন করে এশীয়, ল্যাটিনো ও ক্যারিবিয়ান ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলতে চাইছেন—বিশেষ করে যেসব এলাকা এতদিন ভোটের দৌড়ে তেমন গুরুত্ব পায়নি।
বাগ্গা বলেন, “আমাদের প্রতিটি সম্প্রদায়ের বাস্তবতা আলাদা। কেউ গণতন্ত্রের নতুন শিক্ষার্থী, কেউ আবার পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে রাজনৈতিক অনাস্থা পোষণ করেন। তাঁদের চাহিদা, হতাশা, ভয় ও আশা—সব মিলিয়ে আমাদের রাজনৈতিক বার্তাগুলো সাজাতে হবে।”
এই মুহূর্তে নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে ডেমোক্রেটদের জন্য এশীয় ভোটাররা এক অঘোষিত ব্যালট। এই ব্যালটের মোড় ঘোরানো প্রভাব আগামী নেতৃত্বের রূপরেখা বদলে দিতে পারে।