মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) বিতরণকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক মতবিনিময় সভা।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জি টাওয়ারে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোসাম্মাত শাহানারা মনিকা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক গণআন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করেন নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। তাই তাদের ভোটাধিকারের সুযোগ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
তিনি জানান, এবারই প্রথম প্রবাসীরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনার প্রবাসীদের ভোটদান প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি জানান, প্রবাসীদের জন্য ‘তথ্যপ্রযুক্তি-সহায়ক পোস্টাল ভোটিং’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে আবেদন ও নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হবে। নিবন্ধনের পর প্রবাসীদের ঠিকানায় ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।
ভোট প্রদান শেষে নির্ধারিত খামে ব্যালট ফেরত পাঠানো যাবে, যা সরাসরি রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছবে। এছাড়া অনলাইনে ব্যালট ট্র্যাক করার সুবিধাও থাকবে। তিনি প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, এই প্রক্রিয়াটি সফল করতে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার শাহানারা মনিকা জানান, প্রবাসীদের ভোটদানকে সহজ ও সফল করতে হাইকমিশন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাবে।
সভায় উপস্থিত প্রবাসীরা ভোটাধিকার পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এক প্রবাসী শ্রমিক বলেন, আমরা এতদিন ভোট থেকে বঞ্চিত ছিলাম। এবার ভোট দিতে পারব জেনে আনন্দিত।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, বিদেশে থেকেও দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখার সুযোগ আমাদের জন্য গর্বের। তবে প্রক্রিয়াটি যেন সহজ হয়, সেটাই চাই।
কমিউনিটি নেতা তালহা মাহমুদ বলেন, ভোট দেওয়া আমাদের নাগরিক অধিকার। তবে এনআইডি ও নিবন্ধনের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হওয়া দরকার।
সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত প্রবাসীদের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ করেন এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠানে প্রবাসী কমিউনিটি প্রতিনিধি, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা অংশ নেন।
হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত যারা এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি, তাদের জন্য নতুন ভোটার নিবন্ধন ও স্মার্ট এনআইডি কার্ড প্রদানের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এ সংক্রান্ত আবেদনকারীরা consular.kualalumpur@gmail.com
ঠিকানায় যোগাযোগ করে আবেদনের অগ্রগতি জানতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সরাসরি হাইকমিশনে গিয়ে নতুন ভোটার নিবন্ধনের আবেদন করা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে— অনলাইনে পূরণকৃত ফরম-২ক, বৈধ পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন সনদ, ছবি, ব্যাংক রসিদ (৭৫ রিঙ্গিত ফি), নাগরিকত্ব সনদ, অভিভাবকের এনআইডি, বিবাহিতদের ক্ষেত্রে নিকাহনামা ও স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি, স্থায়ী ঠিকানার ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি। অনলাইনে আবেদন করা যাবে https://services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে।
নির্বাচনি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকারের সুযোগ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এতে দেশের গণতন্ত্রের পরিসর আরও বিস্তৃত হবে। তবে পোস্টাল ভোটিং প্রক্রিয়াটি যেন নির্ভুল, স্বচ্ছ ও সহজ হয়, সেদিকে নির্বাচন কমিশনকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। অন্যথায় প্রবাসীদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশিতমাত্রায় নাও হতে পারে।