মানুষে মানুষে বন্ধনের গল্প নিয়ে ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:০৭


সম্পর্কের বুননে গাঁথা মানব সমাজ ও সভ্যতা একে অন্যের বাড়িয়ে দেওয়া হাতে হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান বিশ্বে মানবতাবাদী মানুষের প্রয়োজন আরও বেশি। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা, সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই মানব সভ্যতার শিক্ষা। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সমাজ ও সংযোগের কাজে স্বেচ্ছা-নিবেদিত কিছু মানুষ ও সংগঠনকে নিয়ে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা ও হিউম্যান কনসার্ন ইউএসএ যৌথভাবে একটি কমিউনিটি সংযোগ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। 
প্রচণ্ড শীতের হিমঝরা সন্ধ্যায় নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সুধিজনের উপস্থিতিতে টানা চার ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মানুষ, মানবতা, সময় ও সামাজিকতার দায় নিয়ে আলোকিতজনদের অভিজ্ঞতা বিনিময় ছিল আলোচনার অগ্রভাগে। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা ও হিউম্যান কনসার্ন ইউএসএকে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান অতিথিরা। একই সঙ্গে এ পথপরিক্রমায় পারস্পরিক সংযোগ বৃদ্ধির প্রয়াসকে আরও দৃঢ় করতে সবাইকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
নিউইয়র্কের গুলশান টেরেসে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা থেকে অতিথিরা আসতে শুরু করেন। প্রথম আলো কর্মীরা অতিথিদের স্বাগত জানান এবং উপহার প্রদান করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও ইউএস কংগ্রেসে শিক্ষানবিশ মালিহা মাহবুবের চমৎকার উপস্থাপনায় সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরীকে মঞ্চে স্বাগত জানানো হয়। এ সময় চারজন কাউন্সিলউম্যান, সিটি অফিসিয়ালসহ কমিউনিটির অগ্রজরা আসন গ্রহণ করেন।
ইব্রাহীম চৌধুরী তার বক্তব্যে কমিউনিটি সংযোগের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য মানবতাবাদী সংগঠন হিউম্যান কনসার্নকে কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, প্রবাসে অনেকেই নীরবে সমাজের জন্য কাজ করে যান, যারা অনেক সময় জনসমক্ষে আসতে চান না। তাদের চিহ্নিত করা, সংযোগ তৈরি করা এবং সমাজ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার ধারাবাহিক প্রয়াসে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা অবিচল থাকবে।
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল হক পত্রিকাটির কমিউনিটি বিনির্মাণ নিয়ে একটি ভিডিও প্রদর্শনের আহ্বান জানান। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আজকের এই কমিউনিটি কানেক্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হয়তো একদিনেই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে না। তবে আমরা যদি বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিতে ধারাবাহিকভাবে যুক্ত হতে পারি, তাহলে এই সংযোগ একসময় সফল হয়ে উঠবে।”
হিউম্যান কনসার্ন কর্তৃক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিপন্ন মানুষের জন্য পরিচালিত কার্যক্রমের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্রদর্শনের পর সংস্থাটির ইউএসএ চ্যাপ্টারের নির্বাহী প্রধান মাসুম মাহবুব বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “আজকের এই সন্ধ্যা সংযোগের—পুনরায় একে অন্যকে জানার, আপনাদের গল্প শোনার, অভিজ্ঞতা থেকে শেখার এবং এই অভিযাত্রায় আপনাদের যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু সহনশীলতা বা অর্থনৈতিক সুযোগ—আপনার সমর্থন শুধু নিউইয়র্ক বা নিউ জার্সিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তা পৌঁছে যেতে পারে বাংলাদেশের পরিবারগুলোর কাছে, বিপন্ন শিশুদের কাছে, সেই তরুণদের কাছে—যারা সহায়তার আশায় অপেক্ষায় আছে।”
হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান মাহমুদা খান কানাডা থেকে বিশেষভাবে নিউইয়র্কে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তার বক্তব্যে তিনি বিশ্বের বিপন্ন মানুষের জন্য সংগঠনের কাজ ও ভবিষ্যৎ প্রয়াস তুলে ধরেন এবং প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে এমন সংযোগমূলক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
বিশিষ্ট ফিলানথ্রপিস্ট সৈয়দ জাকি হোসেন—যিনি ঘোষণা দিয়েছেন, মৃত্যুর আগে তার সব উপার্জন মানুষের কল্যাণে দিয়ে যেতে চান—অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন। প্রচারবিমুখ সৈয়দ জাকি হোসেন ও তার স্ত্রী রাহাত হোসেন অনুষ্ঠানজুড়ে উপস্থিত ছিলেন। নিজের প্রবাসজীবন ও অর্থ উপার্জনের সংগ্রামের গল্প তুলে ধরে জাকি হোসেন বলেন, “যখন আমরা কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারব না, তখন মানুষ ও মানবতার জন্য কাজ করে যেতে পারলেই মানবজন্ম সার্থক হয়।” এ বক্তব্যে হলভর্তি দর্শক দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানান।
অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদের একটি ভিডিও বার্তা প্রদর্শন করা হয়। তিনি বলেন, সংযোগের এই যাত্রাকে সংগঠিত করে এগিয়ে নিতে হবে।
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের প্রথম বাংলাদেশি কাউন্সিলউম্যান শাহানা হানিফ তার কৈশোর থেকে মানুষের অধিকারের পক্ষে লড়াইয়ের গল্প তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে কাজ করলে সাধারণ মানুষের অনেক অধিকার আদায় সম্ভব হবে।
নিউজার্সির ফ্র্যাঙ্কলিন টাউনশিপের ডেপুটি মেয়র শেফে উদ্দিন বলেন, জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্যাটারসনে হলেও বাংলাদেশি শিকড়ের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার নারী লেখক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
নিউজার্সির ব্রিজওয়াটার টাউনশিপের নবনির্বাচিত কাউন্সিলউম্যান রিদওয়ানা ইসলাম প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি আয়োজনে অংশ নিয়ে তার প্রবাসজীবন ও জনপ্রতিনিধি হয়ে ওঠার গল্প বলেন। একই টাউনশিপের আরেক নবনির্বাচিত কাউন্সিলউম্যান জোয়ান গ্রেগার বাংলাদেশি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটি বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখা নার্গিস আহমেদকে অনুষ্ঠানের শুরুতেই সম্মাননা দেওয়া হয়। নীরবে কাজ করে যাওয়ার তার গল্প শুনে দর্শকরা মুগ্ধ হন। তিনি তাকে খুঁজে এনে সম্মান জানানোর জন্য প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, লেখক ও সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাইদ, জোহরান মামদানি ট্রানজিশন টিমের কাজী ফৌজিয়া, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা শামসুল হক, পরিবেশ সংগঠন ধরার সমন্বয়ক সেলিনা উদ্দিন, নাগরিক সংগঠন বাগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক শাহানা মাসুমসহ অনেকে।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, আইনজীবী মঈন চৌধুরী, টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, শিল্পপতি গোলাম ফারুক ভূঁইয়া, প্রবীণ কমিউনিটি নেতা মীর চৌধুরী, ব্যবসায়ী লুবান সিদ্দিকী, ফখরুল আলম, মেরি জোবাইদা, দুলাল বেহেদু, আছিয়া আক্তার, প্রকৌশলী ফজলুল হক, দীপক আচার্য, আবুল কাশেম, নরুল খান, রুদ্র মাসুদ, আবৃত্তিকার এম এ সাদেক, মামুন রাশেদ, প্রদীপ চক্রবর্তী, তোফায়েল চৌধুরী, কাজী আজম, আরিফুল হাসান, কাজী সাইফুল আলম, মজহারুল্লাহ চৌধুরী, মঈনুল হক চৌধুরী হেলাল, মুকুল হকসহ আরও অনেকে।
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা পরিবারের লেখক-সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব রহমান, এইচ বি রিতা, শেলী জামান খান, রওশন হক, রোকেয়া দীপা, সোহানা নাজনীন, ফরিদা ইয়াসমিন, রুপা খানম, শেমু আফরোজা, কান্তা কবির, রাশিদা আক্তার, ফারমিস আক্তার, কুলসুম আখতার সুমি, মাহিন আক্তার, এম এইচ পাহলভি, আবু সাইদ, শাহানা বেগম, সুমাইয়া চৌধুরী, জাকির হোসেন, মনিজা রহমান, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, গীতিকার মাহফুজুর রহমান, সায়ান সিদ্দিক, সৈয়দ উতবা, এম বি তুষার, সৈয়দ মাসুদুল কবির প্রমুখ।