একবছরে ৬৯ জন বাংলাদেশি সমাধি

আমিরাতে একবছরে ৬২০ প্রবাসীর মৃত্যু

উত্তপ্ত বালিতেই ঘটে যায় শেষ সমাধি
নিজস্ব সংবাদদাতা
  ৩০ আগস্ট ২০২২, ১২:৪৮
দুবাইয়ের গেসিস কবরস্থানে সারি সারি কবর

জীবন-জীবিকার তাগিতে পরবাসে শ্রম বিক্রি করতে ছুটে যান বাংলাদেশিরা। আয় রোজগার আর পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে মরুর উত্তপ্ত তাপমাত্রায় খেটে যান রাতদিন। কেউ সোনার হরিণ ছুঁতে পারলেও কারো থেকে যায় অধরা। 
সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার গল্প বুকে চেপে একটা সময় এদের কেউ কেউ দেশে ফিরে আসেন জীবিত। কেউ রোগাক্রান্ত হয়ে, কারও ফেরে কফিনবন্দি দেহ। কারও বা মরুর ওই উত্তপ্ত বালিতেই ঘটে যায় শেষ সমাধি। যে কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই গেসিস, সোনাপুর, আল কোজ বা আবুধাবির বানইয়েস, আল বাত্তেন কিংবা আল আইনের আল ফোহর মতো পাবলিক কবরস্থানগুলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে খুবই পরিচিত জায়গায়। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় স্থানীয়দের পাশাপাশি অন্য দেশের মানুষদেরও সেখানে কবরস্থ করার সুযোগ আছে। স্থানীয় নিয়ম মেনে গত একবছরে ৬৯ জন বাংলাদেশিকে সমাহিত করা হয়েছে এসব কবরস্থানে।
জানা গেছে, আগস্ট মাসে দেশটিতে ৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেছেন। এরমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আজমান প্রবাসী কামাল উদ্দিন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শারজাহ প্রবাসী আলী হায়দার বাবু, দুবাই প্রবাসী সৈয়দ মুহাম্মদ বেলাল ও আবুধাবি প্রবাসী আলী হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। আত্মহত্যা করেছেন খায়রুল বাশার রানা নামে একজন আজমান প্রবাসী। যাদের বয়স ৩৬ থেকে ৫২ বছরের মধ্যে। এদের কারো কারো মৃতদেহ দেশে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে। 
অন্যদিকে, আবুধাবিতে সর্বশেষ স্থানীয়ভাবে দাফন হয়েছে মৌলভীবাজারের আকুল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহিনুর আক্তার ও চট্টগ্রামের কুতুব উদ্দিনের মরদেহ। আর দুবাইতে আবুল বাশির, লায়লা বেগম ও আরিফুল ইসলামের মরদেহ সমাহিত করা হয়েছে।
বিএমইটির পরিসংখ্যান বলছে, গত ৪৬ বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত গেছেন ২৪ লাখ ১ হাজার ৮২৯ জন কর্মী। শুধু চলতি বছর আমিরাত যাওয়া কর্মীর সংখ্যা ৭০ হাজার ২০৩ জন। 
বর্তমানে দেশটির দুই বাংলাদেশ মিশন বলছে, আমিরাতে বৈধভাবে কর্মরত বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। পরিসংখ্যানে কম-বেশি হলেও দীর্ঘ এ সময়ে দেশে ফিরেছেন বহু প্রবাসী বাংলাদেশি। অপরদিকে মৃত প্রবাসীর তালিকাও নেহাৎ কম নয়। 
বাংলাদেশ মিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে প্রতিবছর গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি বিভিন্নভাবে মারা যান। সেই গড়ানুপাতে গত দশ বছরে অন্তত ৫ হাজার কর্মী মারা গেছেন দেশটিতে। শুধু গত একবছরে দেশটিতে বিভিন্নভাবে মারা গেছেন ৬২০ জন বাংলাদেশি। এরমধ্যে মৃতদেহ দেশে ফিরেছে ৫৫১ জনের আর স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়েছে ৬৯ জন প্রবাসীকে।
বাংলাদেশ মিশন জানায়, গত একবছরে আবুধাবি দূতাবাস মৃত প্রবাসীর এনওসি (অনাপত্তি পত্র) ইস্যু করেছে ২০২ জনের। দেশে ফিরেছে ১৮৩ জনের মৃতদেহ। এদের মধ্যে ১৯ জনের মৃতদেহ সরকারি খরচে দেশে গেছে। স্থানীয়ভাবে দাফন হয়েছে ১৯ জনের। দুবাই ও উত্তর আমিরাত বাংলাদেশ কনস্যুলেট এনওসি ইস্যু করেছে ৪১৮ জনের। মৃতদেহ দেশে ফিরেছে ৩৬৮ জনের। স্থানীয়ভাবে দাফন হয়েছে ৫০ জন প্রবাসীর মৃতদেহ।
আবুধাবি দূতাবাস ও দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেট কর্মকর্তারা জানান, কোনো প্রবাসী মারা গেলে মিশনের মাধ্যমে মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি সিআইপি ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা নেওয়া হয়। পরিবার অনুমতি দিলে কোনো কোনো মৃতদেহ স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়। 
এছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে স্বজনরা মামলায় লড়লে পাওয়া যায় ক্ষতিপূরণ। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য আইনি লড়াই করে বাংলাদেশ মিশন। ক্ষতিপূরণের প্রাপ্ত অর্থ হস্তান্তর করা হয় প্রবাসীর পরিবারে। গত একবছরে এমন ৩৬ জন মৃত প্রবাসীর মামলা লড়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা। দুবাই ও উত্তর আমিরাত বাংলাদেশ কনস্যুলেট ২২ জনের মামলা নিষ্পত্তি করে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা ও আবুধাবি দূতাবাস ১৪ জনের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায় করেছে ৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।