চারদিকে উঁচু সুরম্য দালান। রাস্তায় গতিময় নামিদামি গাড়ি। শহরের বাঁকে বাঁকে চাকচিক্য, আভিজাত্য। চোখ ধাঁধানো রোশনাই নিয়ে সন্ধ্যা নামে মায়াবী শহর দুবাইয়ে। সেই আলোর বাগানে বাংলাদেশি অদম্য শিউলীও ছড়ান সুবাস। ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৫টা বাজতেই জ্বলে ওঠে তাঁর জীবিকার গাড়ির হেডলাইট। রাতজাগা পাখি হয়ে ট্যাক্সি চালান দুবাইয়ের পথে পথে। ভোর ৫টায় নেভে সেই আলো।
শিউলী আক্তার ফরিদপুরের বোয়ালমারীর বারানখোলা গ্রামের মেয়ে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে থিতু, তাও হবে বছর আট। ২০১৪ সালে দেশটিতে পাড়ি জমান এই নারী রেমিট্যান্স যোদ্ধা। দুবাইয়ে পা রাখার পাঁচ মাসের মাথায় বাবাকে হারান শিউলী। তখন থেকেই নিজের ও স্বামীর সংসারের 'চালক'ও তিনি। দুই পরিবারের একক সহযোগী আর অর্থের জোগানদাতা হিসেবে দায়িত্ব তুলে নেন কাঁধে। এই দায়িত্ব পালনে পাচ্ছেন সবার সহযোগিতা। নারীর জন্য বিশ্বের তৃতীয় নিরাপদ শহর দুবাইয়ে বাংলাদেশি প্রমীলা ট্যাক্সিচালক হিসেবে এখন অন্যরকম বিজ্ঞাপন তিনি।
প্রতিদিন তাঁর ট্যাক্সিতে ওঠানামা করেন অন্তত ২০ যাত্রী। সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মস্থলে নারীদের অবাধ স্বাধীনতা থাকায় দুবাই শহরে বাংলাদেশি শিউলী নিজেকে মেলে ধরেছেন আপন আলোয়।
দুবাইয়ের যাপিত জীবন আর নানা সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন সমকালের কাছে। শিউলী জানান, দুবাই আসার প্রস্তুতি নিতে গেলে ২০১২ সালে তাঁকে ঋণ সহযোগিতা দেয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ওই ব্যাংক থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ পান তিনি। কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই রাখেন আমিরাতে পা। তবে কাজ পেতে আট মাসের মতো সময় লেগে যায়। সে সময় নিজ থেকে বহন করতে হয় থাকা ও খাওয়ার খরচ। কাজে যোগ দেওয়ার পর বদলে যেতে থাকে শিউলীর জীবন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এক কোম্পানিতে নির্ধারিত বেতনে চাকরি করলেও এখন শিউলী কাজ করছেন কমিশনভিত্তিক চুক্তিতে।
শিউলী বলেন, শুরুর দিকে আর্থিক সমস্যা তৈরি হলেও ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠেছি। বাবা না থাকায় নিজের পরিবারে যেমন আর্থিক সহায়তা দিতে হয় তেমনি স্বামীর পরিবারের দায়িত্বও নিতে হয়েছে। নিজের আয়ের অংশ দুই পরিবারে ভাগ করে দিচ্ছি।
নারীকর্মী হিসেবে আমিরাত সরকারের প্রতি তাঁর রয়েছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা। শিউলী বলেন, এখানে নিজের মতো করে থাকা যায়। ইচ্ছে করলে সম্মানের সঙ্গে বাঁচা যায়। যার প্রমাণ আমি নিজেই। দুবাইয়ে কাজ করে গর্ববোধ করি। কারণ, আমাদের যে কোনো বিপদ-আপদে এখানের প্রশাসন, পুলিশ, হাসপাতাল সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা এখানে একই রকম। ভয় সংশয়হীনভাবে কাজ করা যায়। বাংলাদেশেও নারীরা এমন স্বাধীনতা ও সম্মান পেলে গর্বের সঙ্গে যে কোনো পেশায় কাজ করতে পারবে।