ডিজে ও রেভ পার্টির পর শেষমেশ নিজস্ব সংস্কৃতিতেই ফিরল সৌদি

বিনোদন ডেস্ক
  ২১ আগস্ট ২০২৫, ২১:৪৪

মধ্যপ্রাচের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব কিছুদিন আগে পশ্চিমা ধাঁচের ডিজে, রেভ পার্টি ও মিউজিক ফেস্টিভ্যালের দরজা খুলে দিয়েছিল। শেষমেশ দেশটি বহুদিনের অবহেলিত সৌদি ঐতিহ্যের দিকেই ঝুঁকছে—যাতে পর্যটক আকর্ষণ করা যায় এবং জাতীয় পরিচয়কে নতুনভাবে গড়ে তোলা যায়।
সম্প্রতি এমনটাই দেখা গেছে রাজধানী রিয়াদের একটি অনুষ্ঠানে।
রিয়াদের বিলাসবহুল মঞ্চনাটক ‘তেরহাল’-এ এক অভিনেতা লাল-সাদা কেফিয়া মাথায় সাদা ঘোড়ায় চড়ে সৌদি ঐতিহ্য ও প্রধান পর্যটনস্থল ঘুরে দেখান। খবর এএফপির।
সৌদির রাজধানীতে হওয়া আগের কিছু সঙ্গীত উৎসবে বিশৃঙ্খল দৃশ্যের পর এবার দেশটির নিজস্ব ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক প্রেরণায় তৈরি অধিকতর ‘পরিশীলিত’ বিনোদনের দিকে এগোচ্ছে দেশটি।
এ বছরের রিয়াদ সিজন বিনোদন কর্মসূচি, যাতে এখনো এমডিএল বিস্ট অন্তর্ভুক্ত, তা ‘প্রায় পুরোপুরি সৌদি ও উপসাগরীয় শিল্পীদের নিয়ে সাজানো’ বলে জানিয়েছেন জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান তুর্কি আল-আলশেখ। 
এ বিষয়ে জার্মান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কারপো-র সেবাস্টিয়ান সন্স মন্তব্য করেন, ‘ভিশন ২০৩০ সবসময় সীমারেখা পরীক্ষা করে। হয়তো কখনো দুই ধাপ বেশি হয়ে গেলে আবার এক ধাপ পিছিয়ে আসে।’
তেরহাল—যার অর্থ ‘যাত্রা’—এতে ঐতিহ্যবাহী সৌদি গান, স্লোগান, জাতীয় পোশাক যুক্ত হয়েছে আধুনিক লাইট শো ও হাইটেক যন্ত্রপাতির সঙ্গে।
এতে সাদ নামের এক তরুণ নিজের দেশ ভ্রমণের গল্প তুলে ধরে। ১০০ জন পারফর্মারের দলে ৫৫ জনই সৌদি অ্যাক্রোব্যাট, নৃত্যশিল্পী ও ট্রাপিজ আর্টিস্ট।

‘পুনর্গঠন ও পুনঃব্র্যান্ডিং’

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটি এখন তার জাতীয় পরিচয়কে কঠোরতা থেকে সরিয়ে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক শিল্প-সংস্কৃতিকে একত্রিত করছে।
সেবাস্টিয়ান সন্সের মতে, ‘সৌদি তার পরিচয়ের এই নতুন ফ্রেমিং ও ব্র্যান্ডিং তাদের ঐতিহ্যকে আধুনিক শিল্পের সঙ্গে মেলাচ্ছে’।
তেরহাল মূলত ‘সৌদির প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের গভীরতা উভয়ই ধারণ করেছে, যা বৃহত্তর দর্শকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে,’ বলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুররহমান আলমোতাওয়া।
শিল্প নির্দেশক ফিলিপ্পো ফেরারেসি জানান, তিনি সৌদির সংস্কৃতি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন এবং সৌদির উপদেষ্টা, অধ্যাপক ও লেখকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।
তার ভাষায়, ‘আমি বিভিন্ন অঞ্চল, তাদের ঐতিহ্য, নাচ ও সঙ্গীত আবিষ্কার করেছি’। 

পরিবর্তনের ধারায় সৌদি আরব
২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশটিতে কনসার্ট ও নৃত্য নিষিদ্ধ ছিল এবং নারীদের মাথা ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক ছিল। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে পরিবর্তনের ধারা শুরু হওয়ার পর দেশটিতে ফর্মুলা ওয়ান রেস, জেনিফার লোপেজের মতো তারকাদের কনসার্ট এবং নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি এসেছে।
লক্ষ্য হলো পর্যটক ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা আকর্ষণ করা এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল রপ্তানিকারক দেশের অর্থনীতিকে কেবল জ্বালানিনির্ভরতা থেকে সরানো।
রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের বেকার ইনস্টিটিউটের ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিখসেন বলেন, সৌদির বিনোদন খাত ভিশন ২০৩০–এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিকের সংযোগস্থল।
তার মতে, ‘এটি শুধু অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে অবদান রাখার মতো বিপুল সম্ভাবনাময় একটি খাতই নয়, বরং সৌদি আরবে যে পরিবর্তন চলছে তা প্রদর্শনের একটি উপায়ও’।
এদিকে, ২৩ বছর বয়সি সৌদি নৃত্যশিল্পী তালহা মাসের জন্য তেরহাল-এ পারফর্ম করা ছিল ‘স্বপ্নপূরণ’— যেখানে তিনি চুল খোলা রেখে ঘুরে ঘুরে নাচেন, অথচ কয়েক বছর আগেও নারীদের জন্য মাথা ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক ছিল।
৩৭ বছর বয়সি দর্শক আসের সালেহ বলেন, তিনি ‘গর্বিত’ যে এরকম মানের পরিবেশনা সৌদি রাজধানীতে দেখতে পাচ্ছেন।
এই মিশরীয় নাগরিক বলেন, ‘আগে এ ধরনের শো দেখতে হলে ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হতো। এখন তো এখানেই দেখতে পাচ্ছি’।