ইরানের রাজধানী তেহরানের রাস্তায় আজ মঙ্গলবার এক ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। শহরজুড়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পতাকা হাতে মোটরসাইকেল ও গাড়িবহর ছুটে চলছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রয়াত নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির বিশাল পোস্টারের সামনে সরকার-সমর্থিত গানের সুরে মুখরিত রাজধানী যেন এক উৎসবমুখর আবহ তৈরি করেছে।
তবে এই বাহ্যিক উদ্দীপনার আড়ালেই রাজধানী তেহরান ও আশপাশে বিরাজ করছে অনিশ্চয়তা আর ভীতি। বিবিসি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইরান–ইসরায়েল সংঘাতের পরবর্তী পর্যায়ে দেশের ভেতরে নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করতে শুরু করেছে সরকার। বিশেষ করে, ইরানের নিরাপত্তাব্যবস্থায় ইসরায়েলের অনুপ্রবেশের ঘটনায় শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েলের অনুপ্রবেশ ও নিরাপত্তাব্যবস্থার ফাঁকফোকর নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ভয় ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের ভেতরে সরকারবিরোধী যে কোনো তৎপরতা কঠোরভাবে দমন করতে চাইছে সরকার।
আজ ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশের কৌঁসুলি জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বিঘ্নের অভিযোগে ইতিমধ্যেই অন্তত ১১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ইউরোপীয় নাগরিকও রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে।
হামিদরেজা কারিমি নামের ওই কৌঁসুলি আরও জানিয়েছেন, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অল্প কয়েকজন গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত। অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রচারণায় লিপ্ত ছিলেন।
গত কয়েক দিনে সংঘাতের মধ্যেও ইরানে অন্তত তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা কিংবা সন্দেহভাজন গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আরও অনেককে বিভিন্ন শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইরানের বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, দেশটির পার্লামেন্ট নতুন একটি আইন পাস করেছে, যা গুপ্তচরদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুততর করে তুলেছে।
বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘আগের আইনে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা চালানো যেত না। এখন পার্লামেন্ট আমাদের হাতে এমন ক্ষমতা দিয়েছে, যাতে আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারি।’
এই নতুন আইন ও গ্রেপ্তারের ঢল দেখে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা—ইরানে সরকারবিরোধী কণ্ঠ আরও কঠোরভাবে দমন করা হতে পারে।