পাকিস্তানের পরমাণু হুমকি, প্রতিক্রিয়ায় যা বলল ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৪ আগস্ট ২০২৫, ২২:৩৩

দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।  পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির সম্প্রতি আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে ভারতের বিরুদ্ধে যেভাবে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাতে নয়াদিল্লি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। 
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বারবার যুদ্ধের উস্কানি, ঘৃণাভাষণ এবং আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা হচ্ছে, যা তাদের পুরনো কৌশল এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা আড়াল করার উপায়। 
তিনি স্পষ্ট সতর্কতা দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের যে কোনো দুঃসাহসিক পদক্ষেপের ফল হবে যন্ত্রণাদায়ক, যেমনটা সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় দেখা গিয়েছিল। 
উল্লেখ্য, গত মে মাসে ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের সীমান্তে একটি বিশেষ অভিযান চালায়, যা নয়াদিল্লি পাকিস্তানকে শক্ত বার্তা হিসেবে তুলে ধরে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। গত দুই মাসে এটি ছিল তার দ্বিতীয় আমেরিকা সফর। সেখানে এক নৈশভোজ অনুষ্ঠানে তিনি প্রকাশ্যে বলেন, আমরা একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, যদি মনে হয় আমরা ধ্বংসের পথে যাচ্ছি, তবে অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে ধ্বংস হব। 
একইসঙ্গে তিনি সিন্ধু পানিচুক্তির প্রসঙ্গ টেনে ভারতকে হুমকি দেন, ভারত বাঁধ তৈরি করুক, আমরা অপেক্ষা করব, যখন বাঁধ তৈরি হবে তখন আমরা দশটি মিসাইল ছুড়ে সেই বাঁধ ধ্বংস করব, সিন্ধু নদ ভারতের পৈতৃক সম্পত্তি নয় এবং আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব নেই। 
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টোও এর পর ভারতকে সরাসরি হুমকি দেন। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের মন্তব্য কেবল আঞ্চলিক নিরাপত্তা নয়, বিশ্ব নিরাপত্তার জন্যও বিপজ্জনক বার্তা বহন করছে। 
মুনিরের এই বক্তব্যের পটভূমি জটিল করেছে তার অবস্থান—ওয়াশিংটন ডিসি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেনি, তারা পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভূমিকার প্রশংসা করেছে, যা ভারতীয় কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার অংশ। এই অবস্থায় চীন প্রকাশ্যে নীরব থেকেছে, তবে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে তাদের নেপথ্য ভূমিকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 
লন্ডন-ভিত্তিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি সিন্ধু পানিচুক্তি ভেঙে যায় তবে কেবল দুই দেশের সম্পর্কই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য ও জল নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হবে। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময় থেকেও এই ধরনের পরমাণু হুমকি উঠে এসেছে, তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল; কারণ, উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে প্রতিফলিত হচ্ছে। ভারত এই অবস্থায় বিশ্বমঞ্চে নিজেকে দায়িত্বশীল শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে, যেখানে কড়া সতর্কতার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সমাধানের বার্তা পাঠানো হচ্ছে। নয়াদিল্লি স্পষ্ট করেছে যে, সীমান্তে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে তারা কোনো ধরনের হুমকিকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে এবং প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়া জানাতে পিছপা হবে না। 
একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সমর্থন নিশ্চিত করাই এখন ভারতের অন্যতম বড় কূটনৈতিক লক্ষ্য, যাতে পাকিস্তান আরও বেশি করে একঘরে হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের এই ধারাবাহিক হুমকি এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যকে নাড়া দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও উত্তপ্ত পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। ভারত যদিও আপাতত সামরিক পদক্ষেপের পরিবর্তে কূটনৈতিক ভাষায় কড়া বার্তা দিচ্ছে, তবুও ইঙ্গিত স্পষ্ট—প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতেও তারা প্রস্তুত।