পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেছেন, দেশে এখন এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) আসলে ইমরান খান প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সশস্ত্র শাখায় পরিণত হয়েছে।
শনিবার লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, খাইবার পাখতুনখোয়ায় শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে কিছু গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের লক্ষ্য প্রদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা।
এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও নিউজ।
আতা তারার বলেন, ‘পুরো জাতি সন্ত্রাসবাদের অভিশাপ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ। রাদ-উল-ফাসাদ ও জারব-ই-আজবের মতো সামরিক অভিযানে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে জঙ্গিদের পুনরায় দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তথ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেন, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার মধ্যেই কাঠ ও মাদক চক্র সক্রিয় রয়েছে।
তারার প্রশ্ন তোলেন, ‘তামাক ও কাঠ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রাদেশিক সরকার এতদিন কী করেছে? অবৈধ গাড়ি ব্যবহার বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি?’
পিটিআইকে বিদ্রূপ করে তিনি বলেন, ‘তারা এখন ‘‘তেহরিক-ই-ইনতিশার’’— অর্থাৎ বিশৃঙ্খলার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এই দলটির দেশের সার্বভৌমত্ব বা শহিদদের ত্যাগের প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই।’
তিনি বলেন, ‘তেহরিক-ই-ইনতিশার এমন এক দল, যাদের একমাত্র লক্ষ্য খাইবার পাখতুনখোয়ায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করা, মানুষের প্রকৃত সমস্যার সমাধান নয়।’
রাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ দমনে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার অব্যাহত থাকবে। পাকিস্তানের মাটিতে কোনো জঙ্গি কার্যক্রমের সুযোগ দেওয়া হবে না। আমরা শেষ সন্ত্রাসী নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না।’
পিটিআইয়ের পাল্টা জবাব
অন্যদিকে, পিটিআইয়ের মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা এসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেন, ‘পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা চাই একটি সমন্বিত জাতীয় কৌশল, যাতে অভিযানের সময় কোনো নিরীহ মানুষের প্রাণ না যায়। সন্ত্রাসবাদকে আমরা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে চাই।’
এর একদিন আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র (ডিজি আইএসপিআর) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী সিন্ধ, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়ার শাসনব্যবস্থার মধ্যে তীব্র পার্থক্যের কথা তুলে ধরেন।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সিন্ধ ও পাঞ্জাবে শাসনব্যবস্থা কার্যকর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। কিন্তু খাইবার পাখতুনখোয়ায় শাসনব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা জোরদার করার বদলে প্রাদেশিকতার অজুহাতে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া হচ্ছে—এটিও এক ধরনের অপরাধ।’
এই ইস্যুতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন উত্তপ্ত, বিশেষ করে এমন সময় যখন দেশটিতে টিটিপির হামলা আবারও বেড়ে গেছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার খাইবার পাখতুনখোয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢালাওভাবে অকার্যকর বলে অভিযুক্ত করছে।