কাতারে হামলার পর ইসরাইলে রুবিওর সফর

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:০১

মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কূটনীতিক মার্কো রুবিও রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ইসরাইলে পৌছেছেন। কাতারে হামলার ঘটনায় ইসরাইল ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লেও, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইসরাইলের প্রতি অটল সমর্থনের বার্তা নিয়ে এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।     
গত মঙ্গলবার দোহায় বিলাসবহুল এলাকায় হামাস নেতাদের বৈঠকে ইসরাইলের নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মার্কিন ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারে এ ধরনের হামলা ইসরাইলের জন্য এটিই প্রথম, যা গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়াকে নতুন করে জটিল করে তুলেছে।  
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সফরে রওনা হওয়ার আগে রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্প হামলায় ‘খুশি নন’। তবে এটি ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মৌলিক ভিত্তি বদলে দেবে না। তিনি আরও বলেন, এই হামলার প্রভাব নিয়ে আমাদের অবশ্যই ইসরাইলের সঙ্গে কথা বলতে হবে। 
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামলা প্রসঙ্গে বলেন, শীর্ষ হামাস নেতাদের হত্যা করা যুদ্ধ শেষ করার পথে ‘প্রধান বাধা’ দূর করবে। 

গাজায় অভিযান জোরদার
যুদ্ধবিরতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পরও সমঝোতা না হওয়ায় ইসরাইল সম্প্রতি গাজায় অভিযান তীব্র করেছে। সেনারা গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে হামাস ব্যবহৃত উচ্চ ভবনগুলো ধ্বংস করছে ইসরাইল। 
জাতিসংঘের হিসাবে আগস্টের শেষ নাগাদ প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ এখনো গাজা সিটি ও আশপাশে অবস্থান করছে। খাদ্য ও সাহায্য প্রবেশে বাধা দেওয়ায় জাতিসংঘ এই এলাকায় দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দিয়েছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ইসরায়েলি হামলায় ৩২ জন নিহত হয়েছেন। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ সীমাবদ্ধ থাকায় এ তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

আন্তর্জাতিক চাপ
যুদ্ধ চলতে থাকায় ইসরাইলের প্রতি আন্তর্জাতিক সমালোচনা ক্রমেই বাড়ছে। শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, যা ইসরাইল প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছে।
এদিকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ এ মাসেই জাতিসংঘ অধিবেশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। লন্ডন, প্যারিস ও বার্লিন গাজা সিটিতে ইসরাইলি অভিযানের অবসান চেয়েছে। 
তবু ইসরাইল সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী ও ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ধরে রেখেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র টমি পিগট জানিয়েছেন, রুবিওর সফরে ইসরাইলের পাশে থাকার বার্তা পুনর্ব্যক্ত করা হবে। তিনি বলেন, হামাসকে আবার গাজার শাসক হতে না দেওয়া এবং সব জিম্মিকে মুক্ত করা আমাদের যৌথ লক্ষ্য।

জিম্মি ইস্যু
দেশে ইসরাইলি জিম্মিদের পরিবার সরকারকে যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে মুক্তির পদক্ষেপ নিতে চাপ দিচ্ছে। ‘হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ নেতানিয়াহুকে জিম্মি মুক্তির পথে প্রধান বাধা বলে অভিযুক্ত করেছে। 
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এদের মধ্যে এখনো ৪৭ জন গাজায় বন্দি আছেন। ইসরাইলের তথ্য মতে, তাদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরাইলে পৌঁছে  রোববার রুবিও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ওয়েস্টার্ন ওয়াল প্রার্থনা করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে। 
২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলায় ইসরাইলে ১,২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। এর পাল্টা অভিযানে গাজায় এ পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৮০৩ জন নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতিসংঘ এ সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে।