পর্তুগালের জাতীয় সংসদ জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখা পোশাক, বিশেষ করে ইসলামিক বোরকা ও অনুরূপ আবরণ নিষিদ্ধ করার জন্য শেগা পার্টির প্রস্তাবিত পর্যালোচনার জন্য বিলটি প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে।
যদিও প্রস্তাবে বোরকা শব্দটি সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, আইনটি মুখ ঢেকে রাখা বা প্রদর্শনে বাধা দেয় এমন যেকোনো পোশাককে নিষিদ্ধ করে। শেগা দলটি ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের উদাহরণ তুলে ধরে বলেছে, ঐ দেশগুলো ইতিমধ্যেই এই ধরনের পোশাক জনসমক্ষে নিষিদ্ধ করেছে।
সাধারণ অনুমোদনের পর বিলটি এখন সংসদের বিশেষায়িত কমিটিতে দেশটির নাগরিকদের অধিকার ক্ষুন্ন করে কিনা এবং এটি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা- এ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে। এই বিশেষায়িত কমিটিতে যদি এটি অনুমোদন পায় তবে পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে আবারো এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। অতঃপর রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে একটি আইন আকারে কার্যকর হবে।
বিলটি অনুযায়ী, স্বাস্থ্যগত কারণ বা পেশাদার, শৈল্পিক, বিনোদনমূলক বা বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনে মুখ ঢেকে রাখা যৌক্তিক হলে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া বিমানবন্দর, কূটনৈতিক বা কনস্যুলার স্থাপনা, উপাসনালয় ও অন্যান্য পবিত্র স্থানের অভ্যন্তরে এই পোশাক পরিধানে আইন প্রযোজ্য হবে না। তাছাড়া বিলটিতে আইন অমান্য করলে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবটি পর্তুগিজ সংসদে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়, বামপন্থি সব দল আইনটি পার্লামেন্টে উপস্থাপনের বিরুদ্ধে অবস্থান করে তবে সরকারি দল জানিয়েছে যে তারা “এই পথ অনুসরণ করতে চায়”, তবে আইনটি “বিশেষ সংসদীয় কমিটিতে উন্নত ও পরিমার্জিত করা উচিত” বলে মত দেয়। শেগা নেতা আন্দ্রে ভেনটুরা প্রাথমিক ভোট অনুমোদনের পর একে “ঐতিহাসিক দিন” বলে আখ্যা দেন।
এদিকে পর্তুগালে বসবাসরত মুসলমান এবং বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা বলছেন পর্তুগালের মতো একটি ঐতিহাসিক মিশ্র জাতীয়তা, ধর্ম এবং ঐতিহ্যের দেশে এই ধরনের আইন ও জনগণের মাঝে বিভাজনের সৃষ্টি করবে। তবে অনেক পর্তুগিজ নাগরিক বলছেন বোরকার মাধ্যমে জন নিরাপত্তা কিছুটা বিঘ্নিত হয় কেননা কাপড়ের আড়ালে যিনি আছেন তিনি মারাত্মক অপরাধী হতে পারেন, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি স্বরূপ।
এই প্রস্তাব পর্তুগালে নাগরিক স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নারীর অধিকার নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও বামপন্থী দলগুলো বলেছে, আইনটি “মৌলিক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ” হতে পারে, অন্যদিকে সমর্থকরা একে “নারীর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার সুরক্ষা” হিসেবে দেখছেন।