বিচারকের নথি ফাঁস

স্বামীকে মেরে নিজে প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন হাইতির ফার্স্টলেডি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:১৪

ঠিক যেন সিনেমার কাহিনী! ২০২১ সালে নিজ বাড়িতে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন হাইতির সবশেষ প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসি। এসময় আহত হন তার স্ত্রী মার্টিন মইসেও। অপ্রত্যাশিত সেই ঘটনা নাড়িয়ে দেয় গোটা বিশ্বকে। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, মইসি হত্যাকাণ্ডে কলকাঠি নেড়েছিলেন খোদ ফার্স্টলেডিই। আর তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ক্লাউডি জোসেফ। তাদের যোগসাজশেই অকালে প্রাণ হারান হাইতির নেতা।
সম্প্রতি মইসে হত্যা মামলায় মার্টিন মইসে, ক্লাউডি জোসেফসহ ৫০ জনকে অভিযুক্ত করেছেন হাইতির একজন বিচারক। সেই নথি ফাঁস হয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে।
আইবোপোস্ট নামে ওই সংবাদমাধ্যমটির বরাতে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বিচারক ওয়ালথার ওয়েসার ভলতেয়ারের নথি অনুসারে, মার্টিন মইসি নিজে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ক্লাউডি জোসেফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বামীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
হাইতির প্রেসিডেন্ট হত্যা মিশনে ছিল আমেরিকান-কলম্বিয়ান ২৮ জনের টিম
হাইতির প্রেসিডেন্ট হত্যার ঘটনায় পুলিশের হাতে নিহত ৪
২০২১ সালের ৭ জুলাই হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উপকণ্ঠে অবস্থিত বাড়ির শোবার ঘরে ঢুকে জোভেনেল মইসিকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পঞ্চম বিচারক হিসেবে ওই ঘটনা তদন্তে নেতৃত্ব দেন বিচারক ওয়ালথার। গত সোমবার তার ১২২ পৃষ্ঠার নথি ফাঁস হয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে।
নথিতে মার্টিন মইসিকে ‘সন্ত্রাস এবং অপরাধমূলক যোগসাজশে’র অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। দেশটির সবশেষ প্রেসিডেন্টকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ৫০ জনের মধ্যে একজন তিনি।
বিবিসি খবর অনুসারে, অভিযোগপত্রে বিচারক বলেছেন, মিসেস মইসি তার স্বামীর হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তা এতটাই অসঙ্গতিপূর্ণ ছিল যে, সেটি তাকে সন্দেহভাজন করে তোলে। প্রমাণ হিসেবে মইসি হত্যাকাণ্ডের সময় হাইতির জাতীয় প্রাসাদের মহাসচিব লিওনেল ভালব্রুনের দেওয়া একটি বিবৃতিও উল্লেখ করা হয়েছে নথিতে।
ভালব্রুন অভিযোগ করেছেন, প্রেসিডেন্ট হত্যার দু’দিন আগে প্রাসাদে এসেছিলেন ফার্স্টলেডি। এরপর প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে প্রাসাদ থেকে ‘বেশ কিছু জিনিস’ সরিয়েছিলেন তিনি। মার্টিন কী কী জিনিস সরিয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়। তবে আদালতের নথিতে বলা হয়েছে, তার ক্রিয়াকলাপগুলো ‘আন্দাজে’ বা ‘দৈবক্রমে’ ঘটেনি। বরং সেসময় সামনের ঘটনাগুলো সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান ছিল মিসেস মইসির।
ভালব্রুন আরও অভিযোগ করেছেন, একই দিনে মার্টিন তাকে ডেকে বলেছিলেন, তার স্বামী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ‘আমাদের জন্য কিছুই করেননি’।
নথি অনুসারে, প্রেসিডেন্ট মইসি হত্যাকাণ্ডের আরেক সন্দেহভাজন হলেন হাইতিয়ান বিচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা জোসেফ ফেলিক্স বাডিও। তিনিও মিসেস মইসির বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখলে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন। বাডিওর অভিযোগ, ফার্স্টলেডি মার্টিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিলে জোভেনেল মইসিকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নেতৃত্ব দেবেন ক্লাউডি জোসেফ। এরপর নির্বাচন হলে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন মার্টিন মইসি।
বিচারকের নথিতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিসেস মইসি বা তার আইনজীবীর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, ক্লাউডি জোসেফ মিয়ামি হেরাল্ডকে বলেছেন, মইসি হত্যাকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি। তিনি বিরোধীদের দমনপীড়নে হাইতির বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
তবে মইসি হত্যাকাণ্ডে যেকোনো ধরনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী হেনরি। এ ধরনের খবরগুলোকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট মইসি নিহত হওয়ার দু’সপ্তাহ পরেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন হেনরি এবং তারপর থেকেই এ পদে রয়েছেন তিনি।