ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) স্বীকার করেছে যে, ইরানের বড় ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশটির কয়েকটি বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। স্বীকারোক্তি দিলেও বুধবার (২ অক্টোবর) তারা জোর দিয়ে বলেছে, এই হামলায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর কার্যক্রমে কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিমানঘাঁটিগুলোর অফিস ভবন এবং রক্ষণাবেক্ষণ এলাকায় আঘাত হেনেছে। তবে, এগুলোকে অকার্যকর হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, হামলার পরও ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর ধারাবাহিক কার্যক্রমে কোনও ক্ষতি হয়নি।
আইডিএফ জানিয়েছে, যুদ্ধবিমান, ড্রোন, অন্যান্য আকাশ যান, গোলাবারুদ এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর কোনও প্রভাব পড়েনি হামলায়। তারা আরও জানায়, হামলার পরপরই ইসরায়েলি বিমান বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর বড় ধরনের আক্রমণ চালায় এবং গাজায়ও হামলা চালাতে সক্ষম হয়।
এ হামলায় বড় ধরনের কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে, তেল আবিবে শ্র্যাপনেল বিদ্ধ হয়ে দুজন বেসামরিক নাগরিক সামান্য আহত হয়েছেন বলে মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামলার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হয় ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ভিত্তিতে, ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যার ওপর নয়। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে বড় ক্ষতি ও প্রাণহানি প্রতিরোধ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। মঙ্গলবার রাতের এই হামলায় ইরান প্রায় ১৮০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। এর ফলে প্রায় এক কোটি মানুষ বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অনেক ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে প্রতিরোধ করা হয়েছে। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) দাবি করেছে যে, হামলায় তারা নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ইরানের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নেই এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দিকবদলে সক্ষম ছিল না।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলার পর এক সতর্ক বার্তায় বলেছেন, ইরান আজ রাতে বড় ভুল করেছে, এবং এর জন্য তাদের মূল্য দিতে হবে। ইরান দাবি করেছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইরানি সামরিক নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ এবং আইআরজিসির জেনারেল আব্বাস নিলফোরোশানকে গত সপ্তাহে বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়া হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে জুলাই মাসে তেহরানে হত্যা করা হয়। ইসরায়েলি এসব হামলার প্রতিশোধ নিতে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে ইরানি কর্তৃপক্ষ।
এর আগে এপ্রিলে ৩০০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিয়ে প্রথমবার সরাসরি ইসরায়েলে হামলা করে ইরান। হামলাটি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মিত্রদের সহায়তায় প্রতিহত করা হয়েছিল। তখন ইসরায়েল ইরানে পাল্টা হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়িয়ে যায় উভয়পক্ষ।