গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন 

বাইডেনকে মুসলিম আমেরিকানদের আলটিমেটাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৫৪

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের জন্য মার্কিন প্রশাসন উদ্যোগ না নিলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন মুসলিম আমেরিকান ভোটাররা। একই সঙ্গে বাইডেনের প্রচার শিবিরে অর্থ সহযোগিতা না দেওয়ারও আহ্বান জানানোর উদ্যোগ নিতে পারেন তারা। কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের মুসলিম আমেরিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একাধিক অ্যাক্টিভিস্ট এমন কথা বলেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিলে মিশিগান, ওহাইয়ো ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারা রয়েছেন। এই অঙ্গরাজ্যগুলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ। কাউন্সিলটির পক্ষ থেকে বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সময় মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে ইসরায়েলের ওপর মার্কিন প্রভাব কাজে লাগিয়ে একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য।
‘২০২৩ যুদ্ধবিরতি আলটিমেটাম’ শিরোনামের একটি খোলা চিঠিতে মুসলিম নেতারা অঙ্গীকার করেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণের সমর্থনকারী যেকোনও প্রার্থীর পক্ষ থেকে মুসলিম ভোটারদের সমর্থন প্রত্যাহারের জন্য কাজ করবেন। মুসলিম ভোটাররা যাতে এসব প্রার্থীদের ভোট না দেন সেজন্যও প্রচার চালাবেন তারা।
কাউন্সিলের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনার প্রশাসনের নিঃশর্ত সমর্থন, অর্থায়ন এবং অস্ত্রশস্ত্র সহিংসতাকে স্থায়ী করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যা বেসামরিক হতাহতের কারণ হয়েছে  এবং যে-সব ভোটার অতীতে আপনার ওপর আস্থা রেখেছিলেন তা নষ্ট করেছে।
প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য, মিনেসোটার অ্যাটর্নি জেনারেল ও কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম মুসলিম ব্যক্তি কেইথ এলিসন এবং ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি আন্দ্রে কারসন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন কো-চেয়ার।
এই চিঠিটি ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের পর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা না করায় বাইডেনের প্রতি আরব ও মুসলিম আমেরিকানদের হতাশার সর্বশেষ প্রকাশ। হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি নিহত ও ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। অপর দিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩০৬ জনে। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৩ হাজার ৪৫৭ জন। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার ২৩ লাখের মধ্যে ১৪ লাখ জনসংখ্যা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার বলেছেন, তিনি গাজায় হামলা বন্ধ করতে রাজি নন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি থেকে কেবল হামাস লাভবান হবে।
প্রতিনিধি পরিষদে মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত ফিলিস্তিনি-আমেরিকান আইনপ্রণেতা রশিদা তালেব সোমবার টুইটারে একটি ৯০ সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এতে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক অভিযানে বাইডেনের সমর্থনের নিন্দা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ২০২৪ সালে আমাদের ভোট হিসাবে রাখবেন না।
আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্সের সাক্রামেন্টো ভ্যালি কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক বাসিম এলকারা বলেছেন, ২০২৪ সালে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হতে বাইডেনের জন্য মুসলিম ভোট গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে মিশিগানের ১৬টি ইলেক্টোরাল ভোট তিনি জিতেছিলেন মাত্র ২.৬ শতাংশ ব্যবধানে।
বুধবার মিনেসোটা সফরের পরিকল্পনা রয়েছে বাইডেনের। এখান মুসলিম আমেরিকানরাও মঙ্গলবার সন্ধ্যার ডেডলাইন দিয়ে একই ধরনের আলটিমেটাম দিয়েছেন। তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্টের সফরের সময় তাদের প্রতিবাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
এই বিষয়ে বাইডেনের প্রচার শিবিরের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার কয়েক জন মুসলিম নেতার সঙ্গে একটি বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরব ও মুসলিম কমিউনিটির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বৈঠক অব্যাহত রয়েছে।
স্বঘোষিত ‘জায়নবাদী প্রেসিডেন্ট’ বাইডেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টদের তুলনায় নিজের প্রশাসনে বেশি সংখ্যক আরব আমেরিকান ও মুসলিমদের রাজনৈতিক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো দুজন মুসলিম ফেডারেল বিচারপতি রয়েছেন।
মিনেসোটার আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্সের নির্বাহী পরিচালক জায়লানি হুসেইন বলেছেন, ২০২৪ সালে বাইডেনের জয়ী হতে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের মুসলিম নেতারাও একই দাবি জানাবেন। আমরা আশা করছি উইসকনসিন, ওহাইয়ো ও অপর অঙ্গরাজ্যগুলো চলতি সপ্তাহে একই ধরনের উদ্যোগ নেবে।
হুসেইন আরও বলেছেন, বাইডেন যদি লড়াই বন্ধের আহ্বান না জানান তাহলে ২০২৪ সালে তাকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা ছাড়া তার সামনে কোনও বিকল্প নেই। এটি তার ব্যক্তিগত মত। কাউন্সিলের অবস্থান নয়। ২০২০ সালে প্রায় ৭০ শতাংশ মুসলিম আমেরিকান বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছিলেন।