এয়ার ফোর্স ওয়ান বিস্ময়কর এক বিমান

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৩৬

বিশ্বজুড়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান সম্পর্কে জানার আগ্রহের অন্ত নেই। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এ বিমানের নাম এয়ারফোর্স ওয়ান। এটি বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক বিমানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি যেন আকাশের বুকে এক বিস্ময়।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর বিশেষভাবে এ বিমানটি তৈরি করেছে, যেখানে সব ধরনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে বিমানটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার কারণে এ বিমানটি অনেক পরিচিত।
অত্যাধুনিক সুবিধা ও নিরাপত্তাসহ তিন ভাগে বিমানের বহর রাখা হয়েছে। চার হাজার বর্গ ফুটের বিমানের সিংহভাগ প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির জন্য বরাদ্দ। আছে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত ডাইনিং রুম ও কনফারেন্স রুম। সিনিয়র সদস্যদের জন্য আলাদা অফিস রুমও রয়েছে।
এছাড়াও আছে আরও একটি খাবার জায়গা। যেখানে একসঙ্গে ১০০ জন বসে খেতে পারেন। সিনিয়র সদস্য, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি ও বিমানের কর্মীদের জন্য রয়েছে আলাদা বসার জায়গা।
এই বিমানের জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা এতটাই যে, সারা বিশ্ব চক্কর দিতে পারবে। প্রয়োজনে মাঝ আকাশেই উড়ন্ত অবস্থায় জ্বালানি ভরেও নিতে পারবে। জ্বালানি ভরতে অবতরণের প্রয়োজনই নেই। বিমানের সুরক্ষা ব্যবস্থাও ততটাই শক্তিশালী। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস্ এর বিরুদ্ধেও সহজেই রুখে দাঁড়াতে পারবে এ বিমান।
বিমানে বসেই হোয়াইট হাউসকে জরুরি নির্দেশ দিতে পারবেন প্রেসিডেন্ট। বিমানের গতিবিধির ওপর হোয়াইট হাউস নজরও রাখতে পারবে। এয়ার ফোর্স ওয়ান একসঙ্গে ২৬ জন ক্রু সদস্য-সহ মোট ১০২ জন যাত্রীকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। সবার জন্যই আলাদা শোওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সবসময়ের জন্য রয়েছেন চিকিৎসক এবং প্রেসিডেন্টের জন্য রক্ত।
বিমানে সবসময় মজুত থাকে চিকিৎসক এবং প্রেসিডেন্টের জন্য রক্ত। রাস্তায় চলার সময় প্রেসিডেন্টের গাড়ির আগে-পিছু যেমন আরও অন্য গাড়ি থাকে কনভয়ে। তেমন সুরক্ষার জন্য প্রেসিডেন্টের বিমানের আগেও কিছু কার্গো প্লেন থাকে।
বোয়িংয়ের তৈরি বিমানটি অত্যন্ত কাস্টমাইজড। নীল-সাদায় রং করা এই বিমানের গায়ে ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা’ লেখা রয়েছে বড় বড় হরফে। প্রেসিডেন্টের সিল আছে বিমানের গায়ে আর আছে আমেরিকার পতাকা। একে বিমান না বলে উড়ন্ত দুর্গ বলাই শ্রেয়।
১৯১০ সালের ১১ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে থিওডোর রুজভেল্ট বিমানে আরোহণ করেন। যদিও সেটি ছিলো মিসৌরির কাছে অবস্থিত কিনলক এয়ার ফিল্ড থেকে একটি রাইট ফ্লায়ারের মাধ্যমে। তিনি তখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যরত ছিলেন না। তার উত্তরসূরী উইলিয়াম হাওয়ার্ড ট্যাফ্ট তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এই রেকর্ড তৈরিকারী অনুষ্ঠানটি দেশটিতে বিপুল সাড়া ফেলে এবং এখান থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্টদের বিমান সফরের শুরু।
ফ্রাংকলিন ডি. রুজভেল্ট হচ্ছেন প্রথম মর্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি তার কার্যকালে বিমানে আরোহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রুজভেল্ট একটি প্যান-আমেরিকান বোয়িং ৩১৪-এ করে ১৯৪৩ সালের কাসাব্লাঙ্কা কনফারেন্সে যোগদানের উদ্দেশ্যে মরোক্কো সফর করেন। এ সফরে তিনি প্রায় ৫,৫০০ মাইল রাস্তা পাড়ি দেন। জার্মান সাবমেরিনগুলোর হুমকির কারণে আটলান্টিক যুদ্ধের সময়কালে এটিই ছিলো পরিবহনের সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম।
এয়ার ফোর্স ওয়ানের আরও কিছু অজানা তথ্য:
১.মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমানটি ২৩২ মিটার লম্বা
২.বিমানের ডানাগুলো ১৯৫ মিটার প্রশস্ত
৩.বিমানটির কাঠামো এতই শক্ত যে, এটি ভূমি থেকে উৎক্ষেপিত নিউক্লিয়ার বোমাও প্রতিরোধে সক্ষম
৪. প্রতিটি জানালা বুলেটসহ যেকোন সামরিক হামলা মোকাবেলায় সক্ষম
৫.এয়ারফোর্স ওয়ানের প্রতি ঘণ্টার উড্ডয়নের খরচ দুই লাখ মার্কিন ডলার
৬.বিমানটিতে মোট ৮৫ টি ফোনলাইন আছে
৭.বিমানটির ভেতরের অংশের মোট আয়তন চার হাজার স্কয়ার ফিট
৮. প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিসের মত পুরো আরেকটি অফিস আছে বিমানটিতে