টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

ম্যাচ হারলেও বাংলাদেশিরা ছিলেন উল্লাসমুখর

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১১ জুন ২০২৪, ২২:১৮

নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ১০ জুন সোমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘ডি’গ্রুপের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৪ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের পুরো বিষয় নিয়ে চলছে এখন নানা বিশ্লেষণ। জেতা ম্যাচ হারলেও হাজার হাজার প্রবাসীর সমর্থন আর ভালোবাসার অভিব্যক্তিতে সোমবার দিনটি নিউইয়র্কের জন্য উল্লাসমুখর হয়ে উঠেছিল।
আমেরিকায় ক্রিকেট কোনো জনপ্রিয় খেলা নয়। টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘিরে নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের উত্তেজনা গত সপ্তাহদিন থেকেই চলছিল। হাজার হাজার বাংলাদেশি পতাকা বিক্রি হয়েছে। লাল সবুজ জার্সি পরে লোকজন ঘুরে বেড়িয়েছেন। সোমবার ভোর থেকে প্রবাসী  বাংলাদেশিদের স্রোত ছিল নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামের দিকে। শহর থেকে ২৫ মাইল পূর্বে লং আইল্যান্ডে ৫ মাসেরও কম সময়ের পরিশ্রমে স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে খেলার জন্য । অস্থায়ী এই স্থাপনা আশপাশের পরিবেশ এবং স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে সবাইকে। যদিও  খেলতে নামার পর এই মাঠের উইকেট যেন ব্যাটারদের বধ্যভূমি হিসেবে দেখা দেয়।|
অন্তত ১৫ হাজার বাংলাদেশি স্টেডিয়ামে ছিলেন। পুরো স্টেডিয়াম লাল সুবজে উল্লাসমুখর ছিল। চমৎকার আবহাওয়ায় নিউইয়র্কের বাইরের রাজ্য থেকে লোকজনকে বাস ভাড়া করে স্টেডিয়ামে পৌঁছাতে দেখা গেছে। কেউ লুঙ্গির সাথে বাংলাদেশের জার্সি পরে খেলা দেখতে উপস্থিত ছিলেন। কর্মদিবস হলেও অনেকেই ছুটি নিয়েছিলেন কর্মের দেশ আমেরিকার নিত্যদিনের কর্মময় জীবন থেকে। উদ্দেশ্য একটাই দেশের দামাল ক্রিকেটারদের সমর্থন জানাতে। দূরের দেশে বসে বাংলাদেশের অবস্থান জানান দিতে।
ম্যাচ হারলে অনেকেই মন খারাপ করেছেন কিছুটা। বলছেন, একটু চেষ্টা করলেই ম্যাচ জেতা সম্ভব ছিল। সাকিব আল হাসান অধিনায়ক না হলেও তার কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ম্যাচে তার দায়সারা উপস্থিতি ছিল বলে সমালোচনা হচ্ছে। ম্যাচের একদিন আগে সাকিব আলা হাসান নিজের নামে ফান্ড রাইজিং অনুষ্ঠান করছেন। বিশ্বকাপে যোগ দেয়ার জন্য দেশ থেকে আসা পুরো দলের উপর সাকিবের অপেশাদারিত্বের প্রভাব পড়েছে বলে বলেছেন কেউ কেউ।
পাশের রাজ্য নিউজার্সি থেকে সদলবলে যোগ দিয়েছিলেন ব্যাংকার আবু সাইদ। ম্যাচ হারার পর এক প্রতিক্রিয়া বলেছেন, তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন বন্ধু বান্ধব নিয়ে। বাংলাদেশ দল জয় না পাওয়ায় মন খারাপ করেও বললেন, খেলায় হারজিত আছে। তবে সহজেই জেতার ম্যাচটি হারায় দুঃখ পেয়েছেন বলে জানালেন এ ক্রিকেট প্রেমী। নিউজার্সি থেকে একদল নারী ক্রিকেটপ্রেমীদের নিয়ে নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন নাদিয়া সিদ্দিক। ম্যাচ হারার পর জানালেন, বাংলাদেশ হারলে মন খারাপ হয় ঠিকই। 'হারলেও বাংলাদেশ, জিতলেও বাংলাদেশ' - বলে দেশের টিমের প্রতি ভালোবাসা জানালেন তিনি।  
টস জিতে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাকে শুরুতেই চেপে ধরে বাংলাদেশর পেসাররা। প্রথম ওভারের  শেষ বলে রিজা হেনড্রিকসকে এলবিডব্লু করে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন তানজিম সাকিব। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে ১১ বলে ১৮ রান করা ডি কককে বোল্ড করে দুই ওপেনারকে নিজের শিকারে পরিণত করেন এই পেসার।
চতুর্থ ওভারে তাসকিন আহমেদের সিম আপ ডেলিভারিতে বোল্ড এইডেন মার্করাম। পঞ্চম ওভারে নিজের ১৪তম বলে ত্রিস্টান স্টাবসকে ক্যাচ আউট করে তৃতীয় উইকেট তুলে নেন তানজিম হাসান। পাওয়ারপ্লেতে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৫ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ঘুরে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ডেভিড মিলার এবং হেনরিখ ক্লাসেনের ব্যাটে  ৭৯ রানের জুটি গড়ে প্রোটিয়ারা।
যদিও ১১তম ওভারে ডেভিড মিলারের উইকেট পেতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার বলে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মিলার। কিন্তু অপ্রস্তুত লিটন দাস ক্যাচটি তালুবন্দী করতে পারলেন পারেননি।
১৮ তম ওভারে এসে ক্লাসেনকে বোল্ড করে জুটি ভাঙ্গেন তাসকিন। ২ চার ৩ ছক্কায় ৪৬ রান করেন ক্লাসেন। ১৯ তম ওভারে  ৩৮ বলে ২৯ রান করা মিলারকে ফেরান লেগস্পিনার রিশাদ।  ১০৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষ পর্যন্ত ১১৩ রানে থামে।
১১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে তানজিদকে হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে রাবাদার বলে উইকেটের পিছনে ডি ককের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এই ওপেনার। দলীয় ২৯ রানে কেশব মহারাজের ইনিংসের প্রথম বলে ইনসাইড আউট করতে গিয়ে কাভারে মিলারের হাতে ধরা পড়েন লিটন। ১৩ বলে ৯ রান করেন তিনি। পরের ওভারে ৪ বলে ৩ রান করে নরকিয়ার শিকারে পরিনত হন সাকিব আল হাসান। ১০ তম ওভারে নরকিয়ার দ্বিতীয় শিকার আরেক ওপেনার নাজমুল শান্ত। অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ১৩ রান।
৫০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর  ৪৪ রানের জুটি গড়ে হৃদয়-মাহমুদউল্লাহ। দলীয় ৯৪ রানে ভাঙ্গে তাদের জুটি। ২চার ও ২ ছক্কায় ৩৪ বলে ৩৭ রান করে রাবাদার শিকারে পরিনত হন তাওহিদ হৃদয়। শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের ১১ রানের দরকার ছিল। শেষ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৬ রান তুললে ৪ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।