আমেরিকান বিচার বিভাগ কি বিব্রত!

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২১ জুন ২০২৪, ২০:১৮

এতদিন পর্যন্ত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর বদনাম ছিল যে তাদের সংবিধানে বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলা হলে দেশগুলোর নির্বাহী বিভাগের ইশারায় কাজ করে বিচার বিভাগ। বিশেষ করে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা কার্যত নির্বাহী বিভাগেরই একটি বর্ধিত অংশ হিসেবে কাজ করে। নির্দোষকে শান্তি দেয় এবং দোষীকে নির্দোষ ঘোষণা করে। উন্নত ও অনুন্নত প্রতিটি দেশের সংবিধান ‘আইনের শাসন’কে বিধিবদ্ধ করেছে, কিন্তু খুব কম দেশেই আইনের শাসন আছে।
এসব সত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে বিচার বিভাগ এতদিন পর্যন্ত সকল বিতর্কের উর্ধে ছিল। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রেও সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান প্রেসিডে জো বাইডেনের পুত্র হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিচারে ফৌজদারি আদালত তাদের উভয়কে দোষী সাব্যস্ত করতে গিয়ে খোদ বিপাকে পড়েছে। দৃশ্যত: মনে হয়, আমেরিকার বিচার ব্যবস্থার যেভাবে কাজ করার কথা সেভাবেই কাজ করেছে।
ট্রাম্পের বিচারের রায়কে পক্ষপাতদুষ্ট বলে রিপাবলিকানরা সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং তারা অভিযোগ করেছেন যে, ডেমোক্রেট প্রশাসন আমেরিকার বিচার ব্যবস্থাকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাদের মতে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উত্থাপন করা হয়েছে, সেই অভিযোগের তদন্তকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে ডেমোক্রেট প্রশাসন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ একটি প্রক্রিয়া। রিপাবলিকানরা এ প্রশ্ন উঠিয়েছে গত মাসে জুরি কর্তৃক ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনীত ৩৪টি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করার পর। তারা বলেছেন যে, তদন্তকারীরা তাদের তদন্তে একটি একটি অস্বস্তিকর সত্যকে উপেক্ষা করার প্রবণতা প্রদর্শন করেছেন। বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠে যখন জুরি প্রেসিডেন্টের পুত্র হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সময় মাদক সেবন সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার বিচারের তদন্তকে কেন্দ্র করে।
যদিও আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে, কিন্তু অপরাধ তদন্তে ট্রাম্প ও বাইডেন পুত্রের ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে। রিপাবলিকানরা হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে দেয়া শাস্তিকে ‘অতি সামান্য’ বলে বর্ণনা করেছে। তাদের ইশারা ডেমোক্রেট প্রশাসনের দিকে যে, যেহেত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী নভেম্বর মাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন, অতএব তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে আইনের মারপ্যাচের মধ্যে আটকে রাখা, যাতে তিনি নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে সময় দেয়ার চেয়ে তার আইনজীবীদের সাথেই বেশি সময় কাটান তার বিরুদ্ধে দেয়া রায়গুলোর বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করা নিয়ে।
এদিকে বাইডেন প্রশাসন প্রচন্ড রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে রিপাবলিকানরা বিচার বিভাগের প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে তার প্রশাসনকে দোষারূপ করার জন্য। তার পুত্রের বিরুদ্ধে আদালতের রায় ঘোষণার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এ মামলায় যে রায় ও সাজা হয় তা তিনি মেনে নেবেন। বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা অবিচল থাকবে। এসব রাজনৈতিক বক্তব্য। কিন্তু ভেতরে ভেতরে অনেক কিছু ঘটে থাকে, আদালতের পক্ষপাতিত্ব হলেও হতে পারে এবং আদালতের ওপর প্রভাবও খাটানো হয়ে থাকতে পারে। তবে সকলেই আশা করে যে, নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগ থেকে দূরে থাকুক।