ছেলের অপরাধের দ্রুত বিচার চান স্থপতি জাহির উদ্দিন

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৫৮

বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর স্থাপত্য বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থাপত্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান স্থপতি শাহ আলম জাহির উদ্দিন সস্ত্রীক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন একমাত্র ছেলের হাতে। মেয়েকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর প্রাণনাশের হুমকির কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না। অপকর্মের জন্য একমাত্র ছেলে শেহজাদ জহিরের দ্রুত বিচার ও শাস্তি চেয়েছেন তিনি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের লেক্সিংটনে মেয়ের বাসায় বসবাস করছেন স্থপতি জাহির উদ্দিন।   
বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের সাবেক অধ্যাপক জাহির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, নিজের স্বপ্ন পূরণের আশায় তিনি একমাত্র ছেলে শেহজাদ জাহিরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। ইচ্ছা পূরণে ছেলেকেও স্থপতি বানিয়েছেন। লেখাপড়া শেষ করে চাকুরিও পেলেও ২০/২১ বছর ছেলে ও তার স্ত্রী সন্তানের ভরণ-পোষণ চালিয়েছেন স্থপতি জাহির। ২০১৮ সালে থেকে শেহজাদ তার স্ত্রী শায়লা আবেদীনের প্ররোচণায় পুর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের নিজ নামীয় সম্পত্তি দখলের চেষ্টায় তাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান। তার প্রয়াত স্ত্রী সেলিমা জাহির একজন ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান এবং চিত্রশিল্পী ছিলেন। একমাত্র ছেলের হাতে বাবা-মা লাঞ্ছিত ও নির্যাতনের ঘটনায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্রতিবেশিসহ বন্ধুমহলে মুখ দেখাতে পারতেন না। লোক লজ্জার ভয়ে অনেক দিন ঘরেই আবদ্ধ ছিলেন দু'জনেই। ছেলে ও বৌমার হাতে চরমভাবে মানসিক নির্যাতনের ফলে তার স্ত্রী সেলিমা দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন।
স্থপতি জাহির উদ্দিন বলেন, তার স্ত্রী যখন খুব অসুস্থ, তিনি তাকে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন কয়েকজন ছিনতাইকারীসহ তার ছেলে শেহজাদ ও তার স্ত্রী শায়লা আবেদীন ঘরে ঢুকে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন। তাদের সকল বাধা উপেক্ষা করে অবশেষে অসুস্থ সেলিমাকে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি। ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল বারডেম হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।  তিনি স্ত্রী সেলিমার মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফন করার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং স্থানীয় মসজিদে ঘোষণা দেন। তখন শেহজাদ তার সন্ত্রাসী বন্ধুদের বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং মরদেহ দাফন নিয়ে অযথা হট্টগোলের সৃষ্টি করেন। সে তার মায়ের লাশ ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং তাকে না জানিয়ে ঢাকার অদুরে একটি বেওয়ারিশ কবরস্থানে মরদেহ দাফন করেন। বেশ কিছুদিন খোঁজাখুঁজির পর অনেক কষ্টে তিনি সেলিমার কবর শনাক্ত করে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
ছেলের অপরাধের নানা অভিযোগ তুলে স্থপতি শাহ আলম জাহির উদ্দিন আরও বলেন, তিনি তেজগাঁও থানার অধিন্যস্ত মনিপুরী পাড়ায় সিজা কোর্ট নামে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন তৈরি করেন। যা পরবর্তীতে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে তিনজনের নামেই লিখে দেন। এ ভবনের পাশেই সস্ত্রীক থাকার অন্য আরেকটি ডুপ্লেক্স তৈরি করেন। ছেলে শেহজাদকে থাকার জন্য একটি অত্যাধুনিক অ্যাপার্টমেন্টও তৈরি করেন তিনি। এখন তার ডুপ্লেক্সেটিও অবৈধভাবে দখলের উদ্দেশ্যে শেহজাদ তার সন্ত্রাসী বন্ধুদের ব্যবহার করে দরজা ভেঙ্গে ফেলেন। মামলার ভয়ে স্থানীয় পুলিশকে তারা একটি আগাম ভুল তথ্যও দেন বলে উল্লেখ করেন জাহির উদ্দিন।
জাহির উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় ফেরার পরিকল্পনা করছিলেন, কিন্তু এখন তার বাসা ভেঙ্গে নষ্ট করে ফেলেছে এবং ছেলের দ্বারা প্রাণনাশের হুমকির কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না। এত বছর ধরে তাদের ওপর সস্ত্রীক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর এখন তিনি একমাত্র ছেলের উপযুক্ত শাস্তি চেয়েছেন।
এ ঘটনায় তিনি গত ১২ এপ্রিল, ২০২১ তেজগাঁও থানায় একটি সাধারন ডায়েরি দায়ের করেন (যার নম্বর-১২৩৯)। এর আগে ছেলের হাতে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে তার স্ত্রী সেলিমা জাহির গত ২০২০ সালের ৮ জুন স্থানীয় মনিপুরী পাড়া কল্যাণ সমিতিতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ছেলের অপকর্মের কথা জানিয়ে তার কর্মস্থল তেজগাঁওয়ের আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলোজি'র ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে একটি আবেদনও করেন তিনি।  
শেহজাদের দুর্ব্যবহারের কথা শুনে স্থপতি জাহির উদ্দিনের সাবেক ছাত্ররা তার বাড়িতে যান। শেহজাদের এই অসভ্য আচরণের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন তারা। তখন তিনি খুব বিব্রত বোধ করছিলেন। তাদেরকে কিছুই করতে হবে না বলে জানিয়েছিলেন তিনি। নিজেই ছেলের বিরুদ্ধে তিনিই ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলে জানান। কিন্তু সিদ্ধান্তটি খুব খারাপ ছিল বলে উল্লেখ করেন স্থপতি শাহ আলম জাহির উদ্দিন।
স্থপতি জাহির উদ্দিনের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মেয়ে সিমিন তাবাসসুম বলেন, তার ভাই শেহজাদ জাহির এখনও তার বাবা-মাসহ তার নিজ নামীয় সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। চলতি বছরের ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের দিন তেজগাঁও থানার অধিন্যস্ত তার বাবার ১৫২ মনিপুরী পাড়ার (টাউন হাউস, ডুপ্লেক্সে ২য় তলা) বাসায় শেহজাদ পাঠানো ২ ব্যক্তি এসে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা লাঠি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন। তারা বলেন আগামীকাল শেহজাদ ও তার স্ত্রী এই বাসা দখল করবে। পরদিন ৬ আগষ্ট সকাল ৯টার দিকে শেহজাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর ২৫/৩০ জন উক্ত বাসায় অনধিকারে টাউন হাউসে প্রবেশ করে আবারও হামলা চালানোর চেষ্টা করলে তার বাবার নিয়োজিত কর্মচারি ও প্রটোকল ম্যানেজার খান মোঃ রিয়াজ রহমানসহ অন্যান্য কর্মচারিদের বাধার মুখে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। এ সময় তারা তাদেরকে বাসা ছেড়ে দেবার হুমকি দিয়ে চলে যান। একই সঙ্গে তাদেরকে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন বলেন এ বাসায় এখন থেকে শেহজাদ ও তার স্ত্রী থাকবে।   ২৫ আগষ্ট সিজা কোর্টের কেয়ারটেকার মোঃ শামীম প্রটোকল ম্যানেজার খান মোঃ রিয়াজ রহমানকে আবারও হুমকি দিয়ে চাকুরি ছেড়ে চলে যাবার হুমকি দেন। এ বিষয় নিয়ে গত ২৮ আগষ্ট তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে দেশের পরিস্থিতি ভালো ছিল না বলে পুলিশ মামলা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। পুলিশ কর্মকর্তারা অভিযোগ হিসেবে তা গ্রহণ করে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে কপি দিতে বলেন। সেই মোতাবেক সেনা ক্যাম্প তুলা ভবন ও সায়েন্সল্যাব সেনা ক্যাম্পে কপি সরবরাহ করেন।
সিমিন জানান, থানায় যাবার খবর পেয়ে শেহজাদ ও তার সন্ত্রাসী দলের লোকেরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গত ২৮ আগষ্ট আবারও তারা হামলা চালায়। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তৃতীয় দফা হামলা চালিয়ে স্বর্নালংকারসহ প্রায় ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এ সময় বাধা দিলে শেহজাদের সন্ত্রাসী দলের লোকেরা রিয়াজ রহমান ও জাহিদুল ইসলামকে থ্রেডযুক্ত প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। জাহিদুলের পিত্তথলীর পাথরের অপারেশনের জন্য গচ্ছিত ২১ হাজার ৩শত ৭৫ টাকা ছিনিয়ে নেন।
প্রটোকল ম্যানেজার খান মোঃ রিয়াজ রহমান গত ২৪ অক্টোবর ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর-জি আর ২৭৪/২৪)। মামলাটি পর্যালোচনা করে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইফুজ্জামান তেজগাঁও থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। গত ৩১ অক্টোবর তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করা হয় (মামলা নম্বর-২৮)।
স্থপতি জাহির উদ্দিন ও তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মেয়ে সিমিন তাবাসসুম অভিযোগ করে বলেন মামলা করার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মামলার বাদীসহ তার আত্মীয়-স্বজনরা। অবিলম্বে মূল আসামী শেহজাদ জাহিরকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বয়ং তার বাবা স্থপতি জাহির উদ্দিন।