যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তর সিলেটবাসীর প্রাণের সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার মর্যাদা রক্ষার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান বলেছেন, ভবন কেনার নামে সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম আর্থিক অনিয়ম ও গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন। এতে মর্যাদাপূর্ণ একটি সংগঠনের মর্যাদাহানি হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি শনিবার বিকালে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ইটজি রেস্টুরেন্টে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে কার্যকরী পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন বদরুল হোসেন খান।
সংবাদ সম্মেলনে বদরুল হোসেন খান বলেন, নিউইয়র্কের ‘জালালাবাদ ভবন’ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের বাড়ি নয়। এটি শোকজপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামের ব্যক্তিগত নামে কেনা। তিনি অবিলম্বে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইন্ক-এর সকল অর্থ সংগঠনের অ্যাকাউন্টে ফেরত দেয়ার জন্য সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় সংগঠনের তহবিল তছরুপ, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন এবং গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের বিরুদ্ধে গঠনতান্ত্রিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক রুকন হাকিমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন লুকু, শফিউদ্দিন তালুকদার, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলীম, পাবলিসিটি সেক্রেটারি ফয়সল আলম, আইনবিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দীন, ক্রীড়া সম্পাদক মান্না মুনতাসির, সমাজকল্যাণ সম্পাদক জাহিদ আহমেদ খান ও কার্যকরি সদস্য শামীম আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান জানান, জালালাবাদ ইউএসএ ইনক নামের একটি করপোরেশন গঠন করে সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম একটি বাড়িটি কিনেছেন। বাড়িটি কেনার সময় মইনুল ইসলাম সংগঠনের অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮০৬ ডলার সরিয়ে ফেলেছেন। সংগঠনের তহবিল ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে অগঠনতান্ত্রিক কাজ করেছেন তিনি। ২০২০ সালে মইনুল ইসলাম অনুমোদন ব্যতিরেকে সংগঠনের তহবিল থেকে আড়াই লাখ ডলার ব্যক্তিগত একটি অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছিলেন। অথচ সংগঠনের গঠনতন্ত্রে রয়েছে ৫ হাজার ডলারের বেশি তহবিল থেকে তুলতে হলে কার্যকরি কমিটিসহ ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমতি লাগবে। মইনুল ইসলামের এসব অসাংগঠনিক কাজের অংশীদার সাবেক সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ। তাদেরকেও আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির সাধারণ সভায় সকল অনিয়ম ও অগঠনতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সাধারণ সদস্যরাই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বদরুল খান লিখিত বক্তব্যে বৃহত্তর সিলেট এলাকায় সাম্প্রতিক বন্যায় সাহায্য বিতরণে সাবেক সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলালের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, মইনুল হক চৌধুরী হেলাল দেশে গিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের অর্থ প্রকৃত অভাবী লোকজনদের মাঝে বিতরণ না করে তার পরিচিত ও অবস্থাসম্পন্ন লোকদের মাঝে বিলিয়েছেন। সাধারণ সভায় এসবের হিসাব চাওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বদরুল খান জানান, সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে দেয়া শোকজের জবাব এখনো তিনি পাননি।
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে বদরুল হোসেন খান বলেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পদক মঈনুল ইসলাম বিতর্কিত ভবনটি নিজের ব্যক্তি মালিকানায় কিনতে গিয়ে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক-এর গঠনতন্ত্রের ধারা ৭-এর ‘ক’, অনুচ্ছেদ ৯ এর ‘গ’ ‘ঘ’ এবং অনুচ্ছেদ ১৬ এর ৬ ধারা সরাসরি লঙ্ঘন করেছেন।
অনুচ্ছেদ ৭-এর ‘ক’তে বলা হয়েছে, সংগঠনের সকল প্রকার কর্মসূচি ও কার্যক্রম কার্যকরী পরিষদের সভায় গৃহীত হতে হবে। কিন্তু তিনি এই বিশাল অংকের অর্থ সরিয়ে নিতে কার্যকরী পরিষদের মতামত নেননি।
অনুচ্ছেদ ১৬-এর ৬ ধারায় উল্লেখ আছে, সংগঠনের তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ডলার বা এর অধিক অর্থ খরচ করতে হলে কার্যকরী পরিষদকে ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়াও গঠনতন্ত্রের ৯-এর ‘গ’ তে নির্দেশ আছে সংগঠনের তহবিল কোনো অবস্থাতেই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে না। যদি কেউ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন এবং তা প্রমাণিত হয় তবে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অথচ শোকজপ্রাপ্ত মঈনুল ইসলাম, সংগঠনের ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮০৬ ডলার নিরবে সরিয়ে নিয়ে নিজের নামে বিতর্কিত ভবন ক্রয় করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আরো বলেন, বিগত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম অজ্ঞাত কারণে সংগঠনের পুরনো অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করে এই অ্যাকাউন্টে কোন অর্থ নেই বলে আমাদেরকে অবহিত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা যখন উক্ত অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করি তখন দেখতে পাই এই একাউন্টে ২৪ হাজার ৫৬৪ ডলার অবশিষ্ট রয়েছে। অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সাথে এখানে উল্লেখ করতে চাই যে জালালাবাদের সেই অর্থ আজ অবধি বর্তমান কমিটির নিকট হস্তান্তর করা হয়নি।
তিনি বলেন, সংগঠনের তহবিল ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের কোন অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও মঈনুল ইসলাম সেই অগঠনতান্ত্রিক কাজটি বার বার করেছেন। আমাদের কাছে তথ্য আছে- ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিনি জালালাবাদের অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার একটি অ্যাকাউন্টে ওয়্যার ট্রান্সফার করেছেন। এই অর্থ পরবর্তীতে ফেরত আনা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- সংগঠনের তহবিল কার্যকারী কমিটির অনুমতি ও অনুমোদন ছাড়া কীভাবে অন্য একটি অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হলো?
বদরুল খান জানান, ‘মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে সংগঠনের অ্যাকাউন্ট থেকে তার ব্যবসায়িক পার্টনারকে অবৈধভাবে অর্থ প্রদানের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। যার উদাহরণ হচ্ছে (চেক-১০৭) পরিমাণ পাঁচ হাজার ডলার। তারিখ ৩০ জুলাই ২০২২। এছাড়াও বিগত কমিটি কর্তৃক নিউজার্সিতে কবরস্থান ক্রয়ে সাধারণ সদস্য হতে সংগৃহীত অর্থ ও ব্যবস্থাপনায় যথাযথ তথ্য এবং কাগজপত্র নতুন কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। অথচ কবর কেনা বাবদ প্রতিমাসে বর্তমান কমিটিকে ২ হাজার ৩৪৫ ডলার পরিশোধ করতে হচ্ছে। ভোটার রেজিস্ট্রেশন ফি, নমিনেশন ফি ও নির্বাচনী প্যাকেজ ফি বাবদ আদায়কৃত ১ লাখ ৫৬ হাজার ১২৯ ডলার, যার সমুদয় অর্থ সংগঠনের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছেন এ রকম তথ্য আমরা খুজে পায়নি। এমনকি আদায়কৃত অর্থ সময়মত অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত কাজে মাসের পর মাস ব্যবহৃত হয়েছে বলে আমাদের কাজে তথ্য আছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বদরুল খান আরো বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশে বন্যায় আক্রান্তদের সাহায্যার্থে সংগৃহীত অর্থ সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বণ্টন না করে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করার সুস্পষ্ট প্রমাণ আমাদের নিকট সংরক্ষিত আছে।
তিনি বলেন, ‘জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক-এর তহবিল কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এটা হচ্ছে সংগঠনের সম্পত্তি। যার মালিক হচ্ছেন সংগঠনের সকল সদস্য। এই তহবিল নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম বর্তমান কমিটি সহ্য করবে না। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নয়। কেউ যাতে ভবিষ্যতে আপনাদের বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে আমানতের খেয়ানত করতে না পারে সেই লক্ষ্যে যা প্রয়োজন সেটাই করবে জালালাবাদের বর্তমান কমিটি।