যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রাম্যাক টাউন সেন্টারে মিশিগান প্রবাসী বাংলাদেশি সনাতনীদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গেল কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে সনাতনীদের উপর শারিরিক, মানসিক নির্যাতন তথা মন্দির, বাড়ীঘর, দোকানপাট লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজী, ভয়ভীতি প্রদর্শন, দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসবের প্রতিবাদে মিশিগানের দুর্গা টেম্পল, কালীবাড়ী, রামকৃষ্ণ মিশন ও শিব মন্দিরের যৌথ উদ্যোগে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক সনাতনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দুর্গা টেম্পলের প্রেসিডেন্ট পংকজ দাশ। বক্তব্য দেন শান্তিলাল বিশ্বাস, নিপেশ সুত্রধর, অবিনাশ চৌধুরী, সৌরভ চৌধুরী, শ্যামা হালদার, রতন হাওলাদার, অজিত দাশ, পংকজ দাশ, ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটির একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা, ইসকনভক্ত ও বৃহত্তর ডেট্রয়েটের বিভিন্ন মন্দিরের সাধুসন্তরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘প্রতিবার বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হয় আর সনাতনীদের উপর নেমে আসে অমানিষা, চলে তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা। এ হামলা নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, আমরা চাই, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ।’ বক্তারা বাংলাদেশে সনাতনীদের উপর শারিরিক, মানসিক নির্যাতন তথা মন্দির, বাড়ীঘর, দোকানপাট লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজী, ভয়ভীতি প্রদর্শন, দেশ ছাড়ার হুমকিদাতাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রভুকে অনতিবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানান। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ধরনের প্লেকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন ও প্রদর্শন করেন, তারা বিভিন্ন শ্লোগান দেন। এ সময় পথচারিরা হাত নাড়িয়ে তাদেরে সমর্থন জানান, কোন কোন গাড়ীচালক হর্ণ বাজিয়ে প্রতিবাদকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ মিশিগানের (বাম) সহ-সভাপতি ও সিম্ফনি ক্লাবের সভাপতি জিত ধর মনি জানান, ‘১৯৪৭ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সংখ্যালঘুরা সাম্প্রদায়িকতা ও সহিংসতার শিকার, ১৯৭১ সালে তাদের উপর নেমে আসে বিভিষিকা, প্রাণের ভয়ে এক কোটি মানুষ আশ্রয় নেয় ভারতে। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর ফের নেমে অমানিষা, ‘৯০ এ স্বৈরাচারী এরশাদ আন্দোলনের মুখে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়, ২০০১ সালে ফের সারা দেশে বিভৎস সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই আমরা ফের প্রত্যক্ষ করলাম সংখ্যালঘুদের উপর দেশব্যাপী হামলা, নির্যাতন, মন্দির ভাঙ্গচুর, লুটপাটসহ সহিংসতা। কেন বার বার সনাতনীদের উপর এ আক্রমণ?’
কমুউনিটির অরবিন্দ মৃদুল চৌধুরী বলেন, ‘কেন বার বার হিন্দু ও সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হবেন। এবার নির্যাতনের অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে। এসব হামলা, নির্যাতন, মন্দির ভাঙ্গচুর, লুটপাটসহ সহিংসতার বিচার চাই, চিন্ময় প্রভুর মুক্তি চাই।’
সাংস্কৃতিক সংগঠক পার্থ দেব বলেন, ‘আপনারা হয়ত পূর্ণিমার কথা ভূলে গেছেন, ভূলে গেছেন নূর হোসেনের কথা, ডাক্তার মিলনের কথা, গোপাল কৃষ্ণ মুহুরির কথা, নিদারাবাদের বিরজাবালার কথা। আসলে বাঙালি বড় বিস্মৃতি পরায়ন এক জাতি। প্রতিটি আন্দোলন, প্রতিটি নির্বাচনের পরই বিভিষিকা নেমে আসে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর। যে দলই বিজয়ী হোক না কেন পরাজিত দলের মূল টার্গেট হল সংখ্যালঘুরা। গেল দশ বছর প্রকৃত অর্থে দেশে কোন নির্বাচনই ছিল না। এরপরও সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতা থেমে থাকেনি। চাই প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, এবার অবশ্য সনাতনীরা ঘুরে দাড়িয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘুদের নিয়ে খেলে, ৭১’-এর পর কোন সাম্প্রাদায়িক নির্যাতনের বিচার হয়নি।’