বছরের পর বছর অভিবাসন ব্যয় শুধু বাড়ছেই। বিশ্বের ১৬টি দেশে কর্মী হিসেবে যেতে কত টাকা করে খরচ হবে—২০১৬ সালে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নির্ধারিত খরচের চেয়ে অনেক বেশি টাকা ব্যয় করতে হয় একজন অভিবাসন প্রত্যাশীকে। বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা ও সমীক্ষা বলছে, একজন অভিবাসন প্রত্যাশীর সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের কয়েকগুণ বেশি অর্থ অভিবাসনে খরচ হয় এবং তার একটি বড় অংশ চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগকারী এবং শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের পকেটে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস। এবার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—‘প্রবাসীর অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার: বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, আমাদের সবার।’
কোন দেশে যেতে কত খরচ?
২০১৬ সালে সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া অভিবাসন খরচ হচ্ছে—সিঙ্গাপুরে (প্রশিক্ষণসহ) ২ লাখ ৬২ হাজার ২৭০ টাকা, সৌদি আরবে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা, মালয়েশিয়ায় নির্মাণ শ্রমিকের জন্য এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ও কৃষিকাজের ক্ষেত্রে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, লিবিয়ায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৭৮০ টাকা, বাহরাইনে ৯৭ হাজার ৭৮০ টাকা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক লাখ ৭ হাজার ৭৮০ টাকা, কুয়েতে এক লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা, ওমানে এক লাখ ৭৮০ টাকা, ইরাকে এক লাখ ২৯ হাজার ৫৪০ টাকা, কাতারে এক লাখ ৭৮০ টাকা, জর্ডানে এক লাখ ২ হাজার ৭৮০ টাকা, মিসরে এক লাখ ২০ হাজার ৭৮০ টাকা, রাশিয়ায় এক লাখ ৬৬ হাজার ৬৪০ টাকা, মালদ্বীপে এক লাখ ১৫ হাজার ৭৮০ টাকা, ব্রুনাইয়ে এক লাখ ২০ হাজার ৭৮০ টাকা ও লেবাননে এক লাখ ১৭ হাজার ৭৮০ টাকা।
তবে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের ক্ষেত্রে ২০২১ সালে চুক্তির সময় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করে দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
দেশের অভিবাসন ব্যয় নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একটি জরিপ পরিচালনা করে। ২০২০ সালে সেই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ এবং সুইস সরকারের সহযোগিতায় জরিপটি করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, জাতীয় পর্যায়ে গড় নিয়োগ ব্যয় ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে পুরুষ অভিবাসী কর্মীর গড় নিয়োগ ব্যয় ৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং নারী অভিবাসী কর্মীর গড় নিয়োগ ব্যয় মাত্র ১ লাখ টাকা।
অর্থাৎ, পুরুষ অভিবাসী কর্মীর নিয়োগ ব্যয় নারী অভিবাসী কর্মীর নিয়োগ ব্যয়ের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। ২০১৫-২০১৮ সময়ে বেশির ভাগ নারী অভিবাসী কর্মী গৃহকর্মী হিসেবে কাজে নিয়োজিত ছিল এবং গৃহকর্মী হিসেবে নারী অভিবাসী কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় অনেক কম ছিল, কখনও কখনও তা শূন্য ব্যয় ছিল। সেজন্য উল্লিখিত সময়ে নারী অভিবাসী কর্মীর নিয়োগ ব্যয় পুরুষ অভিবাসী কর্মীর নিয়োগ ব্যয়ের তুলনায় কম ছিল। দক্ষতা ভেদে নিয়োগ ব্যয়ের ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়। অদক্ষ অভিবাসী কর্মীর গড় নিয়োগ ব্যয় সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ছিল—যেখানে দক্ষ কর্মীর ক্ষেত্রে ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা এবং গৃহকর্মীর ক্ষেত্রে তা ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা। গন্তব্য দেশের ভিত্তিতে একজন অভিবাসী কর্মীর সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা গড় নিয়োগ ব্যয় হয়ে থাকে। যেখানে সৌদি আরব এবং অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৪ হাজার টাকা, কাতারের ক্ষেত্রে ৪ লাখ ২ হাজার টাকা এবং ওমানে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা গড়ে নিয়োগ ব্যয় হয়ে থাকে।
অভিবাসন ব্যয়, বাস্তবতা কী
অনুসন্ধান এবং বিদেশফেরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৌদি আরব যেতে একজন পুরুষ শ্রমিককে খরচ করতে হয় ৫ থেকে ৯ লাখ টাকা, মালয়েশিয়ায় যেতে খরচ করতে হয় সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা। সবশেষ মালয়েশিয়ায় যেতে অনেকেই ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, একজন অভিবাসন প্রত্যাশীর সাধারণ অভিবাসন খরচের সঙ্গে রয়েছে অ্যাপ্লিকেশন ফি, ভিসা ফি, ওয়ার্ক পারমিট ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিদেশে বিপণন ও লিয়াজোঁ অফিস খরচ, প্রশিক্ষণ খরচ, বিমান ভাড়া, অগ্রিম আয়কর, প্রশিক্ষণ ও ভাষা পরীক্ষা, ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার ফি, আনুষঙ্গিক খরচ, তথ্য নিবন্ধন ফি, রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভিস চার্জ, ইন্স্যুরেন্স ফি, ইমিগ্রেশন ট্যাক্স এবং ভ্যাট। এই খরচের মধ্যে থাকলে কোনও সমস্যা নেই—কিন্তু সমস্যার জায়গা অনির্ধারিত খরচগুলো (হিডেন কস্ট)। অভিবাসন প্রক্রিয়ায় মোট খরচের ৭৮ শতাংশই চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগী, অবৈধ মধ্যস্থতাকারী অথবা গমনেচ্ছু দেশের কিংবা নিজ দেশের সাব এজেন্টদের পকেটে।
ভিসা বাণিজ্যে বাড়ছে অভিবাসন ব্যয়
সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থেকে কাঁদতে কাঁদতে নিজের দুর্দশার কথা জানান কুমিল্লার নন্দন কুমার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আকামা (কাজের অনুমতি) নবায়ন করতে সাড়ে ৬ হাজার রিয়াল দিতে হয়েছে তার নিয়োগকর্তাকে। এরই মধ্যে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য কাফিলকে (নিয়োগকর্তা) ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে পুলিশ শূন্যহাতেই নন্দন কুমারকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
নন্দন কুমারের সঙ্গে দেশে ফিরেছেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের আফজাল। দেশে ফেরার মাত্র আড়াই মাস আগে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ করে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তিনি। আফজাল বলেন, ‘যত টাকা খরচ করে গিয়েছিলাম সেটাও যদি কামাই করা যেতো, তাহলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।’
শুধু সৌদি আরব নয়, ভিসা বাণিজ্য আছে বিভিন্ন শ্রমবাজারে। বিভিন্ন দেশ থেকে ভিসা কিনে এনে চড়া দামে বিক্রি করা হয় অভিবাসী কর্মীদের কাছে। আর তাতে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যায় কয়েকগুণ বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ভিসা বাণিজ্য এখনও চলমান আছে।
কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ভিসা বাণিজ্য নিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর একটি সতর্ক বার্তা জারি করে। সেখান উল্লেখ করা হয়, ‘‘কুয়েতের বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী—একজন প্রবাসী কর্মীকে সুনির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার (কাফিলের) অধীনে সুনির্দিষ্ট কর্মস্থলে কাজ করতে হয় এবং চুক্তির মেয়াদ শেষে তাকে স্বদেশে ফিরে যেতে হয়। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তিগত কাফিল খাদেম ভিসা ক্যাটাগরি নম্বর ২০ অথবা ছোট কোম্পানি মাসনা ছাগিরা ভিসা ক্যাটাগরি নম্বর ১৮-এর অধীনে একক ভিসা নিয়ে তথাকথিত ‘ফ্রি ভিসায়’ কুয়েতে যাচ্ছেন। অনেকে আবার পরিচিত বা আত্মীয়ের মাধ্যমে তথাকথিত ‘ফ্রি ভিসা’ কিনে কুয়েতে যান।’’
দূতাবাস আরও জানায়, ‘‘কিছু কিছু কাফিল ‘ফ্রি ভিসার’ নামে বাংলাদেশি দালালদের সঙ্গে ভিসা বিক্রির কারবার করছে এবং কুয়েতে যাওয়ার কিছু দিন পরেই কর্মীর ইকামা বসবাসের অনুমতি রেসিডেন্সি বাতিল করে তার জায়গায় অন্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে এই প্রক্রিয়ায় কুয়েতে যারা আসছেন, তাদের কাজের কোনও নিশ্চয়তা থাকে না। অনেকে কাজ না থাকার কারণে বেকার বসে থাকেন বা বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। কুয়েতের আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি নির্ধারিত কর্মস্থলের বাইরে অন্যত্র কাজ করলে, কুয়েতের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে বা দেশে ফেরত পাঠায়। অবৈধভাবে কুয়েতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি কোনও ব্যক্তিকে গোপনে কোনও কুয়েতি ব্যক্তি নিয়োগ দিলেও তাদের অত্যন্ত কম বেতন দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক অত্যাচারের ঘটনাও ঘটছে।’’
গত বছর (২০২৩) ঘুষ নিয়ে সৌদি আরবে কাজের ভিসা দেওয়ায় ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের সাবেক দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে দেশটির দুর্নীতি দমনকারী কর্তৃপক্ষ নাজাহা। তাদের সঙ্গে ভিসা বাণিজ্যে জড়িত থাকায় এবং সৌদি আরব থেকে অর্থপাচারের অভিযোগে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক মো. নাসের উদ্দিন নূর (বাংলাদেশে একটি রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মালিক)সহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
অভিবাসন ব্যয় কমালে কেমন প্রভাব পড়বে
অভিবাসন ব্যয় সংক্রান্ত বিবিএস’র জরিপে উল্লেখ করা হয়, অভিবাসন ব্যয় কমলে প্রবাসীদের উপার্জন (রেমিট্যান্স) বৃদ্ধি এবং নিজ দেশ বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারে। অভিবাসন ব্যয় হ্রাস করলে ঋণগ্রস্ত হয়ে বিদেশে যাওয়া ও সম্ভাব্য শোষণের ঝুঁকিতে থাকা কর্মীদের সুরক্ষার উন্নতিবিধান হতে পারে। অভিবাসন ব্যয় সবচেয়ে বেশি হয় অভিবাসনের জটিল প্রক্রিয়ায় যেখানে ‘প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী’ উভয় দেশেই নিয়োগকারী জড়িত থাকে। অদক্ষ কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় তুলনামূলক বেশি হতে পারে, তারা প্রবাসে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ফলে রেমিট্যান্স কমে যায় এবং দেশের উন্নয়নে রেমিট্যান্সের প্রভাব কমে যায়। অভিবাসন ব্যয় কমানোর মাধ্যমে অধিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা ঝুঁকি কমানো এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ থেকে অন্য কোনও দেশে, বিশেষ করে ধনী দেশে অভিবাসিত হওয়া মোটেও অবাধ ও সহজলভ্য নয়। দেশে কাজের ভালো সুযোগ না পেয়ে অনেকেই অত্যধিক টাকা ব্যয় করে ও বড় ঝুঁকি নিয়ে ধনী দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করে। অভিবাসী কর্মী হিসেবে নিয়োগ ব্যয় কিছু কিছু দেশে ব্যয়বহুল, এ নিয়োগ ব্যয় শুধু প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণেই তা নয়, বরং অনেক সময় অভিবাসন প্রক্রিয়ায় ‘উৎস ও গন্তব্য’ উভয় দেশেই অভিবাসীদের মৌলিক অধিকার রক্ষা ও সুরক্ষা দেওয়ার ‘অভিবাসন চেইনে’ চুক্তি প্রতিষ্ঠায় অকৃতকার্যতার কারণেও নিয়োগ ব্যয় বেশি হয়ে থাকে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. জালাল উদ্দিন সিকদারের মতে, রেমিট্যান্স পাঠাতে হুন্ডির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অভিবাসন ব্যয় অনেকাংশে দায়ী। তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি টাকা খরচ করে বিদেশ যেতে হচ্ছে। এই টাকা চড়া সুদে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকে সম্পদ বিক্রি করে পাড়ি জমান বিদেশে। তাই যেকোনও মূল্যে উপার্জনের একটা চাহিদা তৈরি হয়। যেদিন থেকে কাজ শুরু করেন, সেদিন থেকেই দেশে টাকা পাঠানোর পরিকল্পনা করেন কর্মীরা। আর হুন্ডিতে বিনিময় মুদ্রা বেশি হওয়ার কারণে তারা সেই মাধ্যমেই টাকা পাঠাতে আগ্রহী হন। আবার হুন্ডি ব্যবসায়ীরা কর্মীদের সেবা দেন হাতে হাতে। অর্থাৎ একজন কর্মীকে হুন্ডিতে দেশে টাকা পাঠাতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। কিন্তু বৈধ চ্যানেলে পাঠাতে তাকে অনেক দূর থেকে সফর করে অন্য জায়গায় যেতে হয়।’
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান মনে করেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ না করলে অভিবাসন খরচ কমানো সম্ভব হবে না। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যেতে যে অভিবাসন খরচ, সেটি বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সরকার প্রত্যেকটা দেশের জন্য নির্ধারিত খরচ বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু কাগজে-কলমেই সেটা আছে। যারা বিদেশে লোক পাঠায় তারা অনেক সময়েই অনেকগুণ বেশি টাকা নেন। এর কারণ, বিদেশে যেমন মধ্যস্বত্বভোগী আছে, দেশেও তেমনই নানা স্তরে দালালদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। ফলে আট থেকে ১০ লাখ টাকাও লাগে বিদেশে যেতে। এছাড়া পদে পদে আছে ভোগান্তি-হয়রানি। পাসপোর্ট তৈরি থেকেই এর শুরু। এরপর রিক্রুটিং এজেন্সির দালাল ও প্রতারক এজেন্সি, চাকরির বিষয়ে অসত্য তথ্য, উচ্চমূল্যে ভিসা কেনাবেচা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সরকারি ছাড়পত্র—সব ক্ষেত্রে সীমাহীন যন্ত্রণা। দেশের আকাশ পার হলে শুরু হয় বিরূপ প্রকৃতি, অমানুষিক পরিশ্রম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন, মালিকদের প্রতারণা, নির্যাতনসহ আরও কত কী।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিদেশ যাওয়ার প্রসেসটা এখনও দালালনির্ভর। যার কারণে যাওয়ার খরচ সবচেয়ে বেশি এবং আয় সবচেয়ে কম। অভিবাসন খরচ কমানোর একটা বড় উপায় হলো—অভিবাসন প্রক্রিয়া ঠিক করা এবং দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা।’
তার মতে, মধ্যপ্রাচ্যের আইনে ভিসা কেনাবেচা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশিরা যখন যেই বাজারে একটু বেশি যাওয়া আসা করে, ওই বাজারেই ভিসা কেনাবেচার ব্যবসা শুরু হয়। ভিসা বাণিজ্যের প্রভাব ওইসব শ্রমবাজারে পড়েছে। এ কারণে অভিবাসন খরচ একদম হুড়মুড় করে বেড়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসন খরচ বেশি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে এই ভিসা বাণিজ্য।
অভিবাসন ব্যয় কমাতে সরকারের উদ্যোগ কী জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদেশ যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের হাতের নাগালে প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির উপস্থিতি ও তাদের মিথ্যা আশ্বাসে কর্মীর অভিবাসন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। ফলে গন্তব্য দেশে কর্মীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও প্রতিকূলতা দূর করাসহ সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ে নিরাপদ, নিয়মিত ও স্বচ্ছ অভিবাসন নিশ্চিত করতে জেলা ভিজিলেন্স টাস্কফোর্স কমিটি এবং জেলা অভিবাসন সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এই কমিটির প্রধান। প্রতি ৩ মাসে একবার এই কমিটির মিটিং করার কথা রয়েছে।’
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন