দেশে গিয়ে বিএনপি’র কোনও নেতাকর্মী গ্রেফতার হলে ক্ষতি যাদেরই হোক না কেন, সুবিধাও হয় অনেকের। গ্রেফতারের এই ঘটনাকে নিজের সুবিধায় কাজে লাগানোর অপেক্ষায় থাকেন অনেক রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী। বাংলাদেশে বিএনপির কোনও রাজনীতিবিদ গ্রেফতার হলে যুক্তরাজ্যের আশ্রয়প্রার্থীরা নিজেদেরও এই দলের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজের মামলার সহায়ক উপাদান হিসেবে খবরটিকে কাজে লাগান।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম রাব্বানী সোহেলকে গত ১৭ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার এ তথ্য জানান। সোহেলের মুক্তির জন্য ব্রিটেনের নিজ এলাকার সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশে ব্রিটেনের হাইকমিশনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তার পরিবারের সদস্যরা। এমনকি যুক্তরাজ্য বিএনপি তার মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলনসহ লন্ডনে কর্মসূচি ঘোষণা করতে চেয়েছিল বলে জানান যুক্তরাজ্য বিএনপির একজন দায়িত্বশীল সিনিয়র নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র এক নেতা বলেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষ নেতারা সোহেলের পরিবারের মতামত ও আবেগকে সম্মান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন বা এ সংক্রান্ত কোনও কর্মসূচি থেকে বিরত থাকেন। তবে এতে নাখোশ হন বিএনপি নেতাকর্মীর ছদ্মাবরণে থাকা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করা কিছু সুযোগসন্ধানী।
তিনি জানান, সোহেল দেশে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেছেন, জেলে আছেন— এ রকম প্রকাশিত খবরের অনুদিত ও সত্যায়িত কপি আদালতে প্রমাণ হিসেবে গণ্য হয়। সোহেলের গ্রেফতারের খবর আদালতে জমা দিয়ে বোঝানো সম্ভব যে দেশে গেলে আবেদনকারী রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটতে পারে। আশ্রয়প্রার্থী আবেদনকারীদের জন্যও বাংলাদেশ যে অনিরাপদ, সেটা দাবি করা তাদের এবং তাদের আইনজীবীর জন্য সুবিধা হয়।
সোহেলের গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশের জন্য শনিবার (২১ অক্টোবর) এ প্রতিবেদকের কাছে অনুরোধ জানিয়ে লন্ডনে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক আইনজীবী বলেন, সোহেলের খবরটি পত্রিকায় প্রচার হলে শত শত বাংলাদেশি যারা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী, তারা এ গ্রাউন্ডে আদালতে সুবিধা পাবেন। বাংলা পত্রিকায় নিউজ হলে তা আবার ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়ে আদালতে দাখিল করতে হয়। ইংরেজি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে অনুবাদের ঝামেলা পোহাতে হয় না।
এর আগে দেশে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটাতে যাওয়া যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রদল নেতা শহিদুল ইসলাম মামুনকে ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। দীর্ঘদিন জেল খেটে মুক্তি পান তিনি। জানা গেছে, মামুনের গ্রেফতারের খবরটি রেফারেন্স হিসেবে ব্রিটেনের আদালতে উপস্থাপন করে অনেক বাংলাদেশি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর মামলায় বাড়তি সুবিধা পান।
এদিকে, গোলাম রব্বানী সোহেলের জন্য রবিবার (২২ অক্টোবর) জামিন আবেদন করা হলেও বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট আদালত জামিন মঞ্জুর করেননি বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যুক্তরাজ্যে অ্যাসাইলাম জালিয়াতির বিষয়টি নজরে আসার পর যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রকৃত নির্যাতিত নেতাকর্মী ছাড়া কাউকে বিএনপির নেতা বা কর্মী হিসেবে কোনও ধরনের প্রত্যয়ন না দিতে দুই দফায় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
লন্ডনের লিংকন্স চেম্বারস সলিসিটস-এর প্রিন্সিপাল ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, ‘গ্রেফতারের খবর তো ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে এসেছে। তবে ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশ হলে অনুবাদের ঝামেলা থাকে না এটা ঠিক। কোনও রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলায় বাংলাদেশে গ্রেফতার হলে এদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা তা এভিডেন্স হিসেবে দাখিল করতে পারেন।’
তিনি আরেও বলেন, ‘প্রবাসীরা হলেন দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন। তাদের রেমিট্যান্সের কারণে অর্থনীতি এখনও সচল আছে। প্রবাসীসহ প্রত্যেক নাগরিকেরই নিজ দেশে অবাধে ঘোরাফেরা করা তার সাংবিধানিক অধিকার। সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদ এই অধিকার দিয়েছে। সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে পরিষ্কার করে বলা আছে ‘জনস্বার্থে আইনের মাধ্যমে আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, দেশের যেকোনও স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।’
ব্যারিস্টার নাজির আহমদ আরও বলেন, ‘প্রবাসীরা মনের টানে ও জরুরি প্রয়োজনে দেশে যান। ওই বিএনপি নেতার নামে কোনও মামলা ছিল কিনা, আমার জানা নেই। উনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনিও না। সন্দেহ হলেই যে কাউকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠাতে হবে কেন। ব্রিটেনে পুলিশ যতক্ষণ পর্যন্ত কোনও বিকল্প থাকে, ততক্ষণ কাউকে জেলে পাঠানো না। জেলে পাঠালে সরকারের অযথা ব্যয় বাড়ে।’