১৯১৭ ও ২০২৩ সালের মধ্যে সাত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ইমিগ্রেশন বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ গুণ। বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তৈরি গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে প্রশাসন তাদের সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ভেঙে পড়া ইমিগ্রেশন আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বন্যার তোড়ের মতো যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বিদেশিদের অনুপ্রবেশের প্রবণতা ঠোকাতে পারেনি ইউএস কাস্টমস এন্ড বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সি- সিবিপি এবং অন্যান্য নিরাপত্তা এজেন্সি। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৩১০,৫৩১ জন বিদেশি অবৈধভাবে সীমান্ত ডিঙিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪০৪,১৪২, ২০১৯ সালে ৮৫৯,৫০১, ২০২০ সালে ৪০৫,০৩৬, ২০২১ সালে ১,৯৫৬,৫১৯, ২০২২ সালে ২,৭৬৬,৫৮২, এবং ২০২৩ সালে ৩,২০১, ১৪৪ জন। এ পরিসংখ্যান ইউএস কাস্টমস এন্ড বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সির। এর বাইরেও গোপনে প্রবেশকারী অসংখ্য লোক অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, যাদের হিসাব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কোনো সংস্থার কাছে নেই।
প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী সিবিপি’র রেকর্ডে যারা অন্তর্ভূক্ত পরিসংখ্যানে কেবল তাই তুলে ধরা হয়েছে। তবে ২০১৭ থেকে প্রথম চার বছরের সংখ্যার তুলনায় ২০২১ থেকে পরবর্তী তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অবৈধ ইমিগ্রান্টের সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ হিসেবে প্রথম চার বছর দায়িত্ব পালন করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। ট্রাম্পের কঠোপর ইমিগ্রেশন নীতির কারণে সীমান্ত অনুপ্রবেশে সাময়িক যে বাধা সৃষ্টি হয়েছিল ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পর অনুপ্রবেশ বাধহীন জোয়ারের আকার ধারণ করে, যা এখন সামাল দেওয়া প্রশাসনের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না এবং প্রেসিডেন্ট বাধ্য হয়ে ইমিগ্রন্ট অনুপ্রবেশ সীমিত করতে কংগ্রেসে বাইপার্টিজান একটি বিল উত্থাপনের পক্ষে তার সবুজ সংকেত দিয়েছেন। বিলটি উত্থাপিত হলেও রিপাবলিকানরা শেষ পর্যন্ত বিলে তাদের সমর্থন দেয়নি এই কারণে যে, তারা যে ইমিগ্রেশন সংস্কার চায় বিলে তার ঘাটতি রয়েছে। ইমিগ্রেশন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শিথিল নীতির সমালোচনায় শুধু রিপাবলিকানরা নয়, প্রগতিশীল ডেমোক্রেটরাও সোচ্চার। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যদি পুন:নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন, তাহলে এর অন্যতম প্রধান কারণ হবে ইমিগ্রেশন ইস্যুতে তার ব্যর্থতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সংখ্যক বিদেশি অবৈধ উপায়ে অনুপ্রবেশ এবং অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি ঠেকাতে না পারা।
অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারীর যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, তা পঞ্জিকা বর্ষ অর্থ্যাৎ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত হিসাব নয়, বরং এ হিসাব যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট বছরের হিসাবে অর্থ্যাৎ ১ অক্টোবর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরের অক্টোবর ২০২৩ থেকে জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ইমিগ্রান্ট প্রবেশ করেছে আনুমানিক ৯৮৮,৮১৯ জন।
অনুপ্রবেশকারীদের ডিটেনশনে রাখা ইউএস ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইস) এর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের বাজেটে প্রচন্ড চাপ পড়ার কারণে। এজন্য তারা ঘোষণা করেছে যে খুব শিগগিরই তারা প্রায় ৬ হাজার অবৈধ ইমিগ্রান্ট তাদের হেফাজত থেকে মুক্তি দেবে। বর্তমানে আইস এর ডিটেনশনে প্রায় ৩৮ হাজার অবৈধ ইমিগ্রান্ট রয়েছে। সরকার পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না দেওয়ার ফলে আইস অভ্যন্তরীণভাবে একটি সার্কুলার জারি করেছে যে তারা ডিটেনশন ক্যাপাসিটি ৩৮ হাজার থেকে ২০ হাজারে নামিয়ে আনবে। কিছু সংখ্যক ইমিগ্রান্টকে আইস তাদের নিজ দেশে ডিপোর্ট করলেও অধিকাংশকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই ছেড়ে দিয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন যে, সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য যে কংগ্রেস অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন করে তা সবসময় প্রয়োজনের তুলনায় কম। সম্প্রতি উত্থাপিত সীমান্ত বিল নাকচ হওয়ার ফলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির চলমান ডিপোর্টেশন অভিযান ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।