বিখ্যাত সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানে ডাঃ নাহরিন আহমেদ

উচ্চারিত হচ্ছে একটি নাম বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:০৬
আপডেট  : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:১৩

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার হাসপাতালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপন্ন মানুষদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাঃ নাহরিন আহমেদ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান এ চিকিৎসক সিবিএস নিউজের বিখ্যাত 'সিক্সটি মিনিটস' অনুষ্ঠানে বর্ণনা করেছেন ইসরাইলের ক্রমাগত হামলায় পড়া দক্ষিণ গাজার একটি হাসপাতালের বিপন্ন বাস্তবতার কথা। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই গাজার প্রকৃত বাস্তবতা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে। এমনই এক সময়ে সিবিএস নিউজের বহুল সম্প্রচারিত এ অনুষ্ঠানে ডাঃ নাহরিন আহমেদের বর্ণনায় বাস্তব অবস্থার করুন চিত্র লোকজন জানতে পেরেছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি রোববার বিখ্যাত সাংবাদিক শারিন এলিজাবেথ আলফন্স এর উপস্থাপনায় সম্প্রচারিত সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানে যুদ্ধাহত ফিলিস্তিনিদের অসহায় বাস্তবতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইলের ক্রমাগত হামলার পর পশ্চিমা সাংবাদিকদেরও এলাকাটিতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। উপস্থাপক শারিন এলিজাবেথ আলফন্স অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলেছেন আমেরিকান এইড ওয়ার্কারদের মাধ্যমে বিপন্ন অবস্থার বাস্তবতার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আমেরিকান চিকিৎসক ডাঃ নাহরিন আহমেদকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার শুরুতেই বলা হয়েছে বাংলাদেশি অভিবাসী মা বাবার সন্তান হিসেবে। ফিলাডেলফিয়া নগরে বেড়ে উঠা ডাঃ নাহরিন ইউক্রেন যুদ্ধে বিপণন মানুষের চিকিৎসা দিয়েছেন। মেডগ্লোব্যাল নামের আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবী  সংস্থার পরিচালক এ ৩৯ বছর বয়সী তরুণ চিকিৎসক যুদ্ধক্ষেত্রে চিকিৎসা নিয়ে ছুটে যাওয়ার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন। যুদ্ধ এলাকায় চিকিৎসা প্রদানের জন্য গত দুই বছরে ৬ দফা ইউক্রেন গিয়েছেন নাহরিন।  
সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানে ডাঃ নাহরিন বর্ণনা করেছেন বোমা হামলায় আহত আহত নারী ও শিশুদের বিপন্ন অবস্থা। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে করে হাসপাতালে হামলার কথা। জীবন রক্ষার ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রেরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার কথা। অনুষ্ঠানের পর উপস্থাপক শারিন এলিজাবেথ আলফন্স ধন্যবাদ দিয়ে বার্তা দিয়েছেন ডঃ নাহরিন আহমেদকে। এ বার্তায় তিনি  বলেছেন ডাঃ নাহররিনের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে লোকজন গাজার আসল পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধ নিয়ে অনেকের, এমনকি রাজনীতিবিদদের মনোভাবে এ সাক্ষাৎকার প্রভাব ফেলবে বলে শারিন আলফন্স আশা প্রকাশ করেছেন।
সিবিএস নিউজের প্রকাশিত সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পর দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ডাঃ নাহরিন বলেছেন, বিপন্ন মানুষের পাশে চিকিৎসা নিয়ে দাঁড়ানো তাঁর মজ্জাগত কাজ। এ কাজের প্রেরণা পেয়েছেন তিনি তাঁর দাদার কাছ থেকে। ডাঃ নাহরিনের দাদা শহিদ শামসুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিপণন মানুষের পাশে অবস্থান নিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। নাহরিন তাঁর প্রতিক্রিয়ায় স্মরণ করেছেন, তাঁর দাদা হাসপাতালে দায়িত্বরত অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদারদের হামলায় পালিয়ে নিজের জীবন না বাঁচিয়ে হাসপাতালে আহত লোকের পাশে অবস্থান করে জীবন দিয়েছেন। তার দাদা ডা. শামসুদ্দিন এবং যুদ্ধাহতদের পাশে অবস্থান করে জীবন দেয়া অপর চিকিৎসক ডাঃ লালাকে স্মরণ করেন ডাঃ নাহরিন।
অন্যান্য যুদ্ধ এলাকায় নিজের চিকিৎসা দেয়ার উল্লেখ করে ডাঃ নাহরিন বলেছেন, গাজার মতো এমন অমানবিক অবস্থা এবং বিপন্ন বাস্তবতা অন্য কোথাও দেখেননি। অন্য কোন যুদ্ধক্ষেত্রের সাথে গাজার মানুষের অসহায়ত্বকে তুলনা করা যায় না বলে তিনি উল্লেখ করেন। ডাঃ নাহরিন বলেছেন, তিনি যখন আইসিউতে অপারেশন করছিলেন, তখনও বোমার শব্দে হাসপাতাল কেঁপে উঠছিল।
এমন ঝুঁকি নিয়ে কোভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ডাঃ নাহরিন বলেছেন, আমরা চিকিৎসা প্রদানের ব্রত নিয়ে এমন কাজে নামি। বোমা ফাটুক আর না ফাটুক আমাদের সামনে মানুষের চিকিৎসা প্রদানই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। গাজার বেশ কয়েকটি হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে ডাঃ নাহরিন বলেছেন, সবগুলোর অবস্থা একইভাবে বিপন্ন, একইভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১২ হাজার শিশুই নিহত হয়েছে গাজায়।    
ডঃ নাহরিন আহমেদের মাধ্যমে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে গাজার বাস্তবচিত্র উঠে আসায় বাংলাদেশিরা ডাঃ নাহরিনকে গর্ব করছেন। তাঁর সাহসী কাজ এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসায় অবিচল থাকার জন্য তাঁর জন্য শুভকামনা জানিয়ে বার্তা প্রেরণ করছেন। উল্লেখ্য, ডাঃ নাহরিন আহমেদ আমেরিকায় এলিস আইল্যান্ড পদক পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশি , বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডাঃ জিয়াউদ্দিন আহমদ এবং ডাঃ ফাতেমা আহমেদের কন্যা।