‘অগ্নিঝরা মার্চকে’ বাংলাদেশের ঐতিহ্যের মাস হিসেবে পালন করেছে নিউইয়র্ক সিটি। বাংলাদেশের ইতিহাসে মার্চ মাসটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এই মাসটি বাংলাদেশের জন্ম মাস। এ মাসকে ‘বাংলাদেশের ঐতিহ্যের মাস’ হিসেবে ঘোষণা করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে নিউ সুধী সমাবেশের আয়োজন করেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামস। গত ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার মেয়রের সরকারি বাসভবন গ্রেসি ম্যানশনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামস প্রবাসী বাংলাদেশিদের নানা প্রশংসার কথা উল্লেখ করে বলেন, নিউইয়র্ক সিটি বাংলাদেশি আমেরিকানদের জন্য গর্বিত। সিটির প্রতিটি দপ্তরেই তাদের পদচারণা রয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় বাংলাদেশিরা সিটির মূলধারার রাজনীতিসহ সর্বত্র এগিয়ে যাচ্ছেন। সিটির দরজা বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ২৬ মার্চ বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ ডে, বাংলাদেশ হেরিটেজ ডে, রমযানে ইফতার পার্টির আয়োজন হয় সিটির উদ্যোগে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ব্রঙ্কস, চার্চ ম্যাকডোনাল্ড, হিলসাইড ও রুজভেল্ট এভিনিউসহ সব এলাকার বাংলাদেশিদের সাথে অত্যন্ত পরিচিত। তাই বাংলাদেশি কমিউনিটির কল্যাণে তিনি আগামীতে আরও বেশি কাজ করতে চান।
মেয়র এরিক এডামস বাংলাদেশের ঐতিহ্যের মাস উপলক্ষ্যে ৪ জন বাংলাদেশিকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। তারা হলেন রুহিন হোসেন, আব্দুল চৌধুরী জ্যাকি, ডা. শামীম আহমেদ ও মনিকা রায় চৌধুরী। এ অনুষ্ঠানে প্রায় ৩ শতাধিক বাংলাদেশি অংশ নেন। গেল বছর থেকে ম্যানহাটনস্থ মেয়রের সরকারি বাসভবনে বাংলাদেশ হেরিটেজ দিবস উদযাপন শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশি আমেরিকান মীর বাশার। অনুষ্ঠানে অন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা, মূলধারার রাজনীতিক ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিসস্ট গিয়াস আহমেদ, ফাহাদ সোলায়মান, আমিন মেহেদি, মোহাম্মদ আলী, নিউইয়র্ক-বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি শাহ নেওয়াজ, রানো নেওয়াজ, ফকরুল ইসলাম দেলোয়ার, যুবুদল নেতা জাকির এইচ চৌধুরী, খলিলুর রহমান, রকি আলিয়ান, মোহাম্মদ কাশেম, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিসস্ট এম এ ইসলাম মামুন, ডিটেকটিভ মাসুদুর রহমান, ইব্রাহিম বারো ভুঁইয়া, ফরিদা ইয়াসমীন, আব্দুস সামাদ জাকারিয়া খবির উদ্দিন ভূঁইয়া ও মোহাম্মদ আলাউদ্দীন প্রমুখ।
এর আগে মেয়রের সরকারি বাসভবন গ্রেসি ম্যানশনে সীমিত আসনের এই আয়োজনে কাকে আমন্ত্রণ দেবেন এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন স্বয়ং মেয়র ও তার অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ, কারণ শুধু নিউ ইয়র্কেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। সেখান থেকে সঠিক মানুষদের খুঁজে বের করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে মেয়র কার্যালয়ের কর্মচারীদের। গত বছর একই ধরণের কিছু বিতর্কিত লোকদের আমন্ত্রণ করে নানা সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন মেয়র। তাই এবারে ভেবে চিন্তে প্রবাসীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মার্চ মাসের ৭, ১৭, ২৫ এবং ২৬ তারিখ বাংলাদেশের স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের এক সম্মিলন। আর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমবেত জনসমুদ্রে জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর এই ভাষণ জাতিকে অনুপ্রাণিত করে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। ২০১৭ সালে ইউনেস্কো এই ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ৭ মার্চ নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়রের সরকারি বাসভবন গ্রেসি ম্যানশনে অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশের এ আয়োজন করায় মেয়র এরিক এডামসকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন প্রবাসীরা।