ট্যাপট্যাপ সেন্ড একটি মানি ট্রান্সফার অ্যাপ। তারা আমেরিকা থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনলাইনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকে। এই অ্যাপের মাধ্যমে এত দিন মিশিগানসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি স্টেট থেকে অনলাইনে বাংলাদেশে অর্থ পাঠানোর সুযোগ থাকলেও নিউইয়র্ক থেকে সেই সুবিধা ছিল না। গত ২০ অক্টোবর থেকে নিউইয়র্কেও চালু হয়েছে এই সুবিধা। খুবই সহজ পদ্ধতিতে ও নিরাপদে অনলাইনে ঘরে বসেই অর্থ পাঠানোর সুযোগ দিচ্ছে ট্যাপট্যাপ সেন্ড।
এ ব্যাপারে ট্যাপট্যাপ সেন্ডের বাংলাদেশ বিভাগের কান্ট্রি ম্যানেজার রিমি রশিদ বলেন, ট্যাপট্যাপ সেন্ড ইনক কোম্পানির অফিস নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে। এর মাধ্যমে এখন নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে যেকোনো সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক এবং বিকাশে টাকা পাঠানো যাবে। এ জন্য কোনো ফি দিতে হবে না। দিনের ২৪ ঘণ্টার যেকোনো সময়ে নিরাপদে টাকা পাঠানো সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন স্টেট থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ দিয়েছিলাম। তবে নিউইয়র্ক থেকে মানুষ ঘরে বসে ট্যাপট্যাপ সেন্ড অ্যাপ ব্যবহার করে অর্থ পাঠাতে পারছিল না। এখন পারছে। নিউইয়র্কে এই অ্যাপ দেরিতে চালু করার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য স্টেটের লাইসেন্স নিতে হয়। সেই লাইসেন্স নিতে গিয়ে কিছুটা সময় লেগেছে। এ জন্য এখানে একটু দেরিতে আমরা শুরু করেছি। এখন নিউইয়র্ক প্রবাসীরাও আমাদের অ্যাপের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠাতে পারবেন।
রিমি রশিদ জানান, এই অ্যাপ সহজেই ডাউনলোড করা যায়। ডাউনলোডের পর দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রেরকের একটি ডেবিট কার্ড দিতে হবে। ওই ডেবিট কার্ড দিয়ে তিনি তার পছন্দমতো হিসাবে অর্থ পাঠাতে পারেন। এ জন্য রেমিট্যান্সদাতা দেশে যার ব্যাংক হিসাব অথবা বিকাশ নম্বর দেবেন, তিনি অর্থ পাবেন।
ট্যাপট্যাপ সেন্ড প্রতি ডলারের বিপরীতে কত টাকা দিচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এক ডলারের বিপরীতে ১০৬ টাকা দিচ্ছি। সেই সঙ্গে রয়েছে আড়াই শতাংশ সরকারি প্রণোদনা। অন্যান্য মানি এক্সচেঞ্জের চেয়ে কম রেট দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য কারা কত দিচ্ছে, এটা আমি ঠিক জানি না। তবে আমরা যে রেট দিচ্ছি, সেটি ভালো। কারণ আমাদের এখান থেকে অর্থ পাঠানোর জন্য কোনো ফি দিতে হবে না। অন্যান্য এক্সচেঞ্জে ব্যাংকের ক্ষেত্রে এক রকম রেট আর বিকাশে আরেক রকম রেট। আমরা সব জায়গায় একই রেট দিচ্ছি।
অনেক মানুষের ডেবিট কার্ড নেই। বিশেষ করে, যারা ক্যাশে কাজ করেন, সেই সঙ্গে যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই। এদের একটি বড় অংশ ক্যাশে অর্থ পাঠান। মানুষ ক্যাশে ইনপারসন অর্থ পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ ব্যাপারে রিমি রশিদ বলেন, এটা ঠিক, আমাদের কমিউনিটির অনেকেই ইনপারসন ভ্রমণ করেন, এরপর মানি এক্সচেঞ্জে গিয়ে অর্থ পাঠান। কিন্তু আমাদের পরামর্শ, অর্থ নগদে নিয়ে যাবেন। সেটি বহন করবেন, এরপর পাঠাবেন-এতে ঝক্কি-ঝামেলা যেমন আছে, আবার সময়ের বিষয়টিও আছে। তাই বহন না করে ঘরে বসেই কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ট্যাপট্যাপ সেন্ডের মাধ্যমে নিরাপদে অর্থ পাঠাতে পারেন। এতে সময়ও বাঁচবে।
তিনি আরো জানান, ট্যাপট্যাপ সেন্ড অ্যাপটি আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড যেকোনো ফোনেই ডাউনলোড করা যায়। নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল অ্যাড্রেস দিলেই এটি করা যায়। এ জন্য কারো সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর দিতে হবে না। টাপট্যাপ মূলত আমেরিকান কোম্পানি। এর কমিউনিটি বেইজ আছে। বাংলাদেশে যে অর্থ পাঠানো হয়, এই টিমটি ফুললি বাংলাদেশি। বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সেবা দিতে আমাদের টিমে ছয়জন আছেন। এ ছাড়া আমাদের অন্যান্য টিম রয়েছে। ২০১৮ সালে এই কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়। আমরা বাংলাদেশে অর্থ পাঠানোর সেবা চালু করার পর থেকে ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। মিশিগান ও নিউজার্সি থেকে এই অ্যাপে বাংলাদেশিরা বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। নিউইয়র্ক থেকে সার্ভিস চালু করার পর বেশ সাড়া পাচ্ছি। আশা করা যাচ্ছে, এখানেও ভালো চলবে।
উল্লেখ্য, ট্যাপট্যাপ সেন্ডের সেবা বর্তমানে বাংলাদেশ, আইভরি কোস্ট, সেনেগাল, মালি, ঘানা, গিনি, ক্যামেরুন, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, জাম্বিয়া, ভিয়েতনাম, কঙ্গো, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, মোজাম্বিক, কম্বোডিয়া, হাইতি, তিউনিসিয়া, উগান্ডাসহ বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।