ডেমোক্রেট রাজ্য নিউইয়র্কের গভর্নর নির্বাচনে ক্যাথি হোকুল জিতবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিউইয়র্কে অব্যাহত বন্দুক সন্ত্রাস, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, আবাসন সঙ্কট, করোনা পরিস্থিতি, গর্ভপাতের পক্ষে অবস্থান এবং রোহিঙ্গা আশ্রয়দানসহ বিভিন্ন কারণে ভালো নেই নিউইয়র্কবাসী। এ কারণে বিকল্প খুঁজছেন এই রাজ্যের মধ্যবিত্তরা। ক্যাথি হোকুলের সঙ্গে লড়াইয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী লি জেলডিন।
আগামী ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন। এই নির্বাচনে নিউইয়র্ক রাজ্য থেকে গভর্নর পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান নারী গভর্নর ক্যাথি হোকুল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর ডেপুটি ছিলেন। কথিত নারী কেলেঙ্কারীতে কৌশলগত চাপে পড়ে কুমো গর্ভনরের পদ ছাড়লে শিঁকে ছিঁড়ে হোকুলের। নিউইয়র্কের ৫৭তম এবং প্রথম নারী গভর্নরের দায়িত্ব পেয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি। এরপর চলতি বছরের জুনে ডেমোক্রেট প্রাইমারিতে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করেন ক্যাথি হোকুল। অন্যদিকে রিপাবলিকান থেকে বিপুল ভোটে প্রাইমারিতে জিতে দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করেন নিউইয়র্ক (ডিস্ট্রিক্ট-১) থেকে নির্বাচিত হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ লি জেলডিন। কিন্তু নিউইয়র্কে অব্যাহত বন্দুক সন্ত্রাস, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, আবাসন সঙ্কট, করোনা পরিস্থিতি, গর্ভপাতের পক্ষে অবস্থান এবং রোহিঙ্গা আশ্রয়দানসহ বিভিন্ন কারণে টানাপোড়েনে পড়েছেন নিউইয়র্কবাসী। এ কারণে নিউইয়র্কে সঙ্কটে থাকা বড় একটি জনগোষ্ঠী পরিবর্তন চাইছেন। যারা এতদিন অন্ধের মত ডেমোক্রেট দলকে সমর্থন দিয়েছেন তাদের অনেকেই প্রার্থীর যোগ্যতাকে সামনে আনছেন। কে ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকান তা নিয়ে ভাবছেন না। খোদ বাংলাদেশি আমেরিকান শিবিরে ভোটের রাজনীতিতে পরিবর্তনের আভাস মিলেছে।
নিউইয়র্কের রেজিস্টার্ড বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটরা প্রাইমারিতে তাদের মতের পরিবর্তন আনতে না পারলেও সাধারণ নির্বাচনে সে সুযোগটি নেওয়ার বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই নির্বাচনে গভর্নর পদে অনেক ডেমোক্রেট মতের ভিন্নতা প্রকাশ করতে পারেন ব্যালটের মাধ্যমে। এর প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি বাংলাদেশি অধ্যুষিত বাংলাদেশি কিছু এলাকায়। নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে লি জেলডিনের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশি আমেরিকানদের বড় একটি অংশ। এ নিয়ে কেউই অবাক হননি।
বাংলাদেশি আমেরিকানদের একটি অংশ বলছেন, বর্তমান গভর্নর ক্যাথি হোকুল মধ্যবিত্তের দিকে নজর দেননি। তিনি নিউইয়র্ক রাজ্যে ধনীদের আরো ধনী করছেন। মাঝখান থেকে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষ করে আবাসন সঙ্কট, নিয়ন্ত্রণহীন বাড়ি ভাড়া এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন দুঃসহ হয়ে পড়েছে। নাগরিক হিসাবে রাজ্য সরকার থেকে যেটুকু সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। একটি পরিবারের স্বামী-স্ত্রী কাজ করে বাড়ি ভাড়ার অর্থ জোগাড় করতে পারলেও সংসারের অন্যান্য খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে এসব বিবেচনায় নিচ্ছে অনেক পরিবার। শুধু বাংলাদেশি আমেরিকান নন, অন্যান্য কমিউনিটিও এসব বিষয় পুনর্বিবেচনা করছে। ফলে এই নির্বাচনে ক্যাথি হোকুলকে জেলডিনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে।