ভারতের ঐতিহাসিক ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ পরিদর্শন করেছেন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি।
শনিবার তিনি উত্তর প্রদেশের ঐতিহাসিক এ ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। এ সময় তাকে উষ্ণ সংবধর্না দেওয়া হয়।
বর্তমানে সাত দিনের ভারত সফরে রয়েছেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। তার ভারত সফরকে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দেওবন্দ অবস্থানকালে মুত্তাকি প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মুফতি আবুল কাসেম নোমানী এবং ভারতের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানিসহ শীর্ষ ইসলামি আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া তিনি দারুল উলুমের ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষক ও পরিচালকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগ হিসেবে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বর্তমানে সাত দিনের সফরে ভারতে রয়েছেন। শনিবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে তিনি সড়কপথে দেওবন্দে যান তিনি এবং প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন বলে জানা গেছে।
তালেবান শাসনভার গ্রহণের পর এটাই হবে কোনো সিনিয়র তালেবান নেতার প্রথম দেওবন্দ সফর।
দেওবন্দ পৌঁছালে মুত্তাকিকে দারুল উলুমের মহাপরিচালক মুফতি আবুল কাসেম নোমানী ও ১৫ জন জ্যেষ্ঠ আলেমের একটি প্রতিনিধি দল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান। ছাত্র ও শিক্ষকরা তাকে ফুল ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মাওলানা নোমানীর তত্ত্বাবধানে হাদিস পাঠের একটি ঐতিহ্যবাহী সেশনে অংশ নেন মুত্তাকি। এরপর তাকে হাদিস শিক্ষাদানের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কাসেমী’ উপাধি লাভ করেন। এখন থেকে তার নাম হবে মাওলানা আমির খান মুত্তাকি কাসেমী।
এই সনদ শুধু তার জ্ঞানগত মর্যাদাই তুলে ধরে না, বরং তাকে দেওবন্দি ধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যে ধারা আফগান ধর্মীয় চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব আছে।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-এর সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানী এ সফরকে ‘এক ধরনের ঘরে ফেরা’ হিসেবে অভিহিত করেন। বলেন, মুত্তাকি যেন নিজের সাবেক শিক্ষালয়ে ফিরে এলেন।
সভায় মুত্তাকি বলেন, এই হৃদয়গ্রাহী অভ্যর্থনার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি আশা করি ভারত ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে। আমরা নতুন কূটনীতিক পাঠাবো, আর আপনাদেরও কাবুলে স্বাগত জানাবো। দিল্লিতে যেভাবে আমাকে বরণ করা হয়েছে, তাতে আমি মনে করি এমন সফর ভবিষ্যতে আরও হতে পারে।
দারুল উলুম দেওবন্দ তালেবানের কাছে শুধু ধর্মীয় নয়, আদর্শিকভাবেও একটি প্রতীকী গুরুত্ব বহন করে। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে অবস্থিত দারুল উলূম হাক্কানিয়া, যা দেওবন্দের আদলে প্রতিষ্ঠিত, সেখানেই তালেবানের বহু শীর্ষ নেতা শিক্ষাগ্রহণ করেছেন।
আগামীকাল (রোববার) মুত্তাকি আগ্রা সফরে যাবেন, যেখানে তিনি বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থাপনা তাজমহল পরিদর্শন করবেন। এরপর সোমবার তিনি নয়াদিল্লিতে ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও শিল্পখাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ নেবেন।
প্রথমে তার সফরটি কয়েক সপ্তাহ আগেই নির্ধারিত ছিল, তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ছাড়পত্র না মেলায় তা স্থগিত হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদের কমিটি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়পত্র দিয়েছে, ফলে সফরটি সম্পন্ন হচ্ছে।
এই সফর ভারতের সঙ্গে তালেবান সরকারের সাম্প্রতিক গোপন ও আংশিক আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের ধারাবাহিকতা। চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি কাবুলে গিয়ে আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।