৪৩ বছর জেল খেটে ফিরেই নির্বাসনের মুখে মার্কিন নাগরিক

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৩২


বিনা দোষে প্রায় ৪৩ বছর মার্কিন কারাগারে সাজা খেটেছেন সুব্রামানিয়াম ‘সুবু’ ভেদম। প্রমাণের ভিত্তিতে এ মাসের শুরুর দিকে আদালত তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে মুক্তি দেন। এক সমস্যা শেষ হওয়ার আগেই তিনি পড়েছেন অভিবাসন কর্মকর্তাদের খপ্পরে। 
ভেদমকে কে ধরে বেঁধে হলেও ভারতে ফেরত পাঠানোর তোড়জোড় করছে মার্কিন কর্মকর্তারা। তার আইনজীবীরা বিতাড়নের নির্দেশ স্থগিতের জন্য লড়ছেন। পরিবার চেষ্টা করছে তাকে স্থায়ীভাবে মুক্ত করতে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও ভেদম শৈশব থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি স্থায়ী বৈধ মার্কিন বাসিন্দা এবং গ্রেফতারের আগে নাগরিকত্বের আবেদনও করেছিলেন। তার বাবা-মা দুজনেই মার্কিন নাগরিক ছিলেন।
নতুন প্রমাণের ভিত্তিতে এ মাসের শুরুতে সাবেক রুমমেট হত্যার মামলায় ভেদমকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। এরপরও, ১৯৮৮ সালের পুরনো এক দেশান্তর আদেশের কারণে আইসিই তাকে পুনরায় আটক করেছে। সেই আদেশটি দেয়া হয়েছিল তার বিরুদ্ধে থাকা হত্যা ও মাদক মামলার রায়ের ভিত্তিতে। যদিও হত্যা মামলার রায় বাতিল হয়েছে, তবু মাদক মামলার সাজা বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 
মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই) জানিয়েছে, তারা বৈধ আদেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে। ভেদমের পরিবার জানিয়েছে, তার দশকের পর দশক ধরে ভালো আচরণ, তিনটি ডিগ্রি সম্পন্ন করা এবং জেলজীবনে সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত।
তার বোন সরস্বতী ভেদম বলেন, ‘আমরা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরার আগেই আবার নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি নিরপরাধ প্রমাণিত হলেন, সৎ ও সম্মানজনক আচরণ করলেন, কিন্তু সেটার কোনো মূল্য দেওয়া হলো না।’
আইনজীবী আভা বেনাচ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে ভারতে পাঠানো হলে তা হবে এক ব্যক্তির ওপর আরেকটি ভয়াবহ অন্যায়। তিনি ইতিমধ্যেই ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘতম ভুল সাজা ভোগ করেছেন।
আইসিই জানিয়েছে, ভেদমকে ভারতে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিবার বলছে, তার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় নেই বললেই চলে। মাত্র নয় মাস বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। বর্তমানে তার পরিবারের সবাই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাস করেন। তার বোনের ভাষায়, ‘এটা যেন তার জীবন দ্বিতীয়বার চুরি হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা।’
চার দশকেরও বেশি আগে ভেদমকে তার সাবেক রুমমেট টম কিনসার হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ১৯ বছর বয়সী কিনসারের লাশ নিখোঁজের নয় মাস পর এক বনাঞ্চলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। হত্যার দিন কিনসারকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন ভেদম। পরবর্তীতে গাড়িটি স্বাভাবিক স্থানে পাওয়া গেলেও কেউ তার ফিরে আসা দেখেনি। ১৯৮২ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ১৯৮৪ সালে একটি মাদক মামলায় আরও দুই বছর ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের সাজা পান। চার দশকের অন্যায় কারাবাস শেষে মুক্তি পেলেও সুব্রামনিয়াম ভেদমের জীবনে এখনো স্বস্তি ফেরেনি।