প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার এইচ-১বি ভিসাধারীদের বার্ষিক আবেদন ফি এক লাখ ডলার নির্ধারণের পর থেকে আতঙ্ক, সংশয় ও ক্ষোভ দেখা দেয় বিদেশি কর্মীদের মধ্যে।
ছুটির পরিকল্পনা বাতিল করেই বিমান থেকে নেমে এসব কর্মীকে অ্যামেরিকার কর্মস্থলে ফিরতে হয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এইচ-১বি ভিসার সবচেয়ে বড় সুফলভোগী দেশ ভারত ও চীনের কর্মীদের কর্মীদের ত্বরিত গতিতে ফিরতে হয় তাদের কর্মস্থলে।
অভিবাসনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর কঠোর ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এইচ-১বি ভিসার ফি বাড়ানোর ঘোষণায় সই করেন ট্রাম্প। এ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েন অ্যামেরিকার বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করা বিদেশি কর্মীরা।
প্রযুক্তি কোম্পানি ও ব্যাংকগুলো কর্মীদের উদ্দেশে জরুরি সংক্ষিপ্ত বার্তা পাঠায়। তাদের ইস্টার্ন ডেলাইট টাইম তথা ইডিটি রবিবার ১২টা এক মিনিটের আগে অ্যামেরিকায় ফিরতে বলা হয়। এ ছাড়া অ্যামেরিকায় থাকা কর্মীদের দেশটি না ছাড়তে বলা হয়।
এমন বাস্তবতায় হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা শনিবার স্পষ্টীকরণ বার্তায় জানান, ভিসার বাড়তি ফি শুধু নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বিদ্যমান ভিসাধারী কিংবা নবায়নকারীদের কাছ থেকে নতুন ফি নেওয়া হবে না।
যদিও মাত্র এক দিন আগে ট্রাম্পের ঘোষণায় সিলিকন ভ্যালিতে অ্যালার্ম বেল বাজা শুরু হয়।
কর্মস্থলে ফিরতে তড়িঘড়ি
নতুন নিয়ম বাস্তবায়ন শুরুর পর কর্মস্থলে ফিরতে না পারার শঙ্কা থেকে সংক্ষিপ্ত ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন কয়েকজন ভারতীয়। সান ফ্রান্সিসকো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে থাকা এমন একজনের সঙ্গে কথা হয় রয়টার্সের।
বড় একটি প্রযুক্তি কোম্পানির ভারতীয় সে প্রকৌশলী জানান, পরিস্থিতি এমন জায়গায় গেছে যে, তাদের পরিবার ও অ্যামেরিকায় অবস্থানের মধ্যে যেকোনো একটাকে বেছে নিতে হয়েছে।
তিনি জানান, তার স্ত্রী সান ফ্রান্সিসকো থেকে দুবাইগামী এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ছিলেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পাঁচ মিনিটে এটি ছাড়ার কথা ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রকৌশলী জানান, বিমানের ভারতীয় যাত্রীরা ট্রাম্পের ঘোষণা শোনা কিংবা কর্মস্থলে ফেরত আসার সংক্ষিপ্ত বার্তা পাওয়ার পর তিন ঘণ্টার বেশি সময় পিছিয়ে যায় ফ্লাইটটি।
ওই প্রকৌশলী জানান, শেষমেশ কমপক্ষে পাঁচজন যাত্রীকে বিমান থেকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়।
ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি বিমান থেকে নামছেন।
রয়টার্স ভিডিওটির সত্যতা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি।
বার্তা সংস্থাটির সঙ্গে কথা বলা প্রকৌশলীর স্ত্রী (যিনি নিজেও এইচ-১বি ভিসাধারী) অসুস্থ মাকে দেখতে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রকৌশলী বলেন, ‘এটি খুবই মর্মান্তিক। আমরা এখানে (অ্যামেরিকা) নতুন জীবন গড়েছি।’
এদিকে চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ অ্যাপ রেডনোটে অ্যামেরিকায় তড়িঘড়ি করে ফেরার অভিজ্ঞতার কথা জানান এইচ-১বি ভিসাধারীরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চীন কিংবা অন্য কোনো দেশে অবতরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের ফিরতি ফ্লাইটে উঠতে হয়।
রেডনোটে করা পোস্টে ‘এমিলি’স লাইফ ইন এনওয়াই’ নামের হ্যান্ডেল থেকে ব্যবহারকারী লিখেন, অসন্তোষ, বিষাদ ও হতাশার মিশ্র এক অনুভূতি ছুঁয়ে গেছে তাকে।
এ নারী জানান, তিনি ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের নিউ ইয়র্ক থেকে প্যারিসগামী ফ্লাইটে চড়ে বসেন। রানওয়েতে বিমানের চাকা স্পর্শ করার মধ্যেই তিনি বিমানে থাকা সংশ্লিষ্ট লোকজনকে কর্মস্থলে ফেরার বার্তার কথা জানান। কয়েকবার পীড়াপীড়ির পর ক্যাপ্টেন তাকে বিমান থেকে নামতে দেন।
বিদেশি ওই কর্মী রয়টার্সকে জানান, তিনি ফ্রান্সের ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেন। ইউরোপের দেশটিতে এরই মধ্যে চলে গিয়েছিলেন তার চীনা কিছু বন্ধু, তবে কোম্পানির আইনজীবীদের কাছ থেকে কর্মস্থলে ফেরার চিঠি পাওয়ার পর তার ভ্রমণ বাতিল করতে হয়।
যেসব কোম্পানি কর্মীদের জরুরি বার্তা পাঠায়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, আলফাবেট ও গোল্ডম্যান স্যাকস।
হোয়াইট হাউসের স্পষ্টীকরণ বার্তার পর অ্যামাজন শনিবার তাদের কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দেয়।
কোম্পানিটি জানায়, বর্তমানে এইচ-১বি ভিসাধারীদের জন্য কোনো ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:টিবিএন২৪